Kolkata Metro History: ব্রিটিশ সরকার পরিকল্পনা করেছিল, ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো!
East West Metro: ১৯২১ সালে ব্রিটিশ সরকার পরিকল্পনা করে পাতালরেলের মাধ্যমে হুগলি নদীর দুপাড়ের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা হবে। কিন্তু সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে সময় লেগে গেল ১০০ বছরেরও বেশি।
২০২০ সালে ১৩ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন হয়েছিল কলকাতার দ্বিতীয় মেট্রো। সেক্টর ফাইভ থেকে ফুলবাগান পর্যন্ত। এরপর কেটে গেছে আরও ২ বছর। গত ১৪ জুলাই এই লাইনে যুক্ত হল আরও একটি স্টেশন, শিয়ালদহ। ৯.১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই লাইনে শিয়ালদহ মেট্রোর সংযোজন জনমানসে এক আলাদা উদ্দীপনা দেখা গিয়েছে।
সল্টলেক সেক্টর ফাইভকে হাওড়া ময়দানের সঙ্গে যুক্ত করবে এই মেট্রো লাইন। সঙ্গে যুক্ত করবে শতাব্দী প্রাচীন দুই শহর হাওড়া-কলকাতাকে। তার সঙ্গে যুক্ত হবে কলকাতার উপনগরী সল্টলেকও। এই মেট্রো লাইন যোগাযোগ ঘটাবে দেশের সবচেয়ে ব্যস্ত দুই রেল স্টেশন হাওড়া ও শিয়ালদহের। কিন্তু বউবাজারে দুর্ঘটনার কারণে আপাতত ওই জায়গায় কাজ থমকে রয়েছে।
১৯৮৪ সালে ভারতের প্রথম মেট্রো চালু হয় কলকাতায়। প্রথম মেট্রো চলে এসপ্ল্যানেড থেকে ভবানীপুর পর্যন্ত। তারপর তা আরও উত্তরে ও দক্ষিণে সম্প্রসারিত হয়। বর্তমানে উত্তরে দক্ষিণেশ্বর থেকে দক্ষিণে নিউ গড়িয়া পর্যন্ত কলকাতা মেট্রোর উত্তর-দক্ষিণ লাইনে মেট্রো চলাচল করে। কিন্তু কলকাতা মেট্রোর পূর্ব-পশ্চিম করিডরের পরিকল্পনা করা হয়েছিল আজ থেকে ১০০ বছরেরও বেশি আগে, ১৯২১ সালে। সে সময় লন্ডনে টেমস নদীর নীচের সুড়ঙ্গ দিয়ে ট্রেন চলাচল করত। জানা যায়, সে সময় মাটি পরীক্ষা করে গঙ্গার নীচে দিয়ে সুড়ঙ্গ তৈরির পরিকল্পনা বাতিল করে দেয় ব্রিটিশ সরকার। কারণ এই প্রকল্পের আনুমানিক খরচ লন্ডনের খরচের তুলনায় প্রায় ৬ গুণ বেশি ছিল।
১৯৬৯ সালে কলকাতায় মেট্রো রেল তৈরির প্রকল্প হাতে নেয় বিধানচন্দ্র রায়ের সরকার। ভারতীয় রেলের সহায়তায় ও ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতায় উত্তর-দক্ষিণ করিডর তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। ১৯৭২ সালে এই মেট্রো লাইনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।
২০০৮ সালে প্রথম ইউপিএ সরকার দ্বারা অনুমোদিত হয় ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো। সেই সময় এই প্রকল্পের আনুমানিক খরচ ধরা হয়েছিল ৪ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা। প্রকল্পের শিলান্যাস করা হয় ২০০৯ সালে। শুরুতে হিসাব করা হয়েছিল মোট খরচের ৩০ শতাংশ দেবে রাজ্য সরকার, ২৫ শতাংশ দেবে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক এবং ৪৫ শতাংশ ঋণ হিসাবে দেবে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (JICA)। কিন্তু ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হন এবং রাজ্যকে এই প্রকল্প থেকে বের করে নিয়ে আসেন। ফলে খরচের পুরোটা গিয়ে পড়ে রেল মন্ত্রকের উপরে।
পরবর্তীতে নতুন চুক্তি অনুযায়ী মোট খরচের ৪৮ শতাংশের খরচ ঋণ দিচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা, ৪০ শতাংশ দিচ্ছে ভারতীয় রেল এবং বাকি ১২ শতাংশ খরচ বহন করছে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক।
২০১৩ সালে যখন মুকুল রায় রেলমন্ত্রী ছিলেন ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর রুট পরিবর্তন করা হয়। কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী পরবর্তীতে বলেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের উস্কানি দিচ্ছে তৃণমূল নেতারা। ফলে মেট্রোর রুট পরিবর্তন করতে হয়েছে, যার ফলে এই প্রকল্পের প্রভূত ক্ষতি হয়েছে।
একাধিকবার রুট পরিবর্তন ও সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারায় ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো তৈরির খরচ বেড়েছে ১০০ শতাংশ। বর্তমানে এই মেট্রোর তৈরির আনুমানিক খরচ প্রায় ৮ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা। এখনও পর্যন্ত এই প্রকল্পের সময়সীমা ৬ বার বাড়ানো হয়েছে। ২০১২, ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭, ২০১৯ ও ২০২০। তবে বর্তমানে বউবাজারে দুর্ঘটনার কারণে মনে করা হচ্ছে আগামী ২০২৩-এর আগে হাওড়া ময়দান থেকে সেক্টর ফাইভ মেট্রো চলাচল করা শুধু কঠিনই নয় প্রায় অসম্ভব।