মাথা গুঁজে এক মনে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির পরীক্ষা দিচ্ছিলেন, কোমরে দড়ি বেঁধে নিয়ে গেল পুলিশ

Kolkata: পুলিশ জানিয়েছে, অন্যের হয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছিল ওই যুবক। জেরার মুখে নিজেই সে কথা জানিয়েছে।

মাথা গুঁজে এক মনে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির পরীক্ষা দিচ্ছিলেন, কোমরে দড়ি বেঁধে নিয়ে গেল পুলিশ
ভুয়ো পরীক্ষার্থী
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 29, 2021 | 2:36 PM

কলকাতা: ভুয়ো সিরিজে এবার যোগ ভুয়ো পরীক্ষার্থীর! টাকার বিনিময়ে অন্যের হয়ে পরীক্ষা দিতে এসে ধৃত এক যুবক। নিউ টাউন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ওই যুবককে। ধৃতের নাম শুভম ঘোষাল।

AUAT 2021 ল্যাটারাল এন্ট্রি টু বিটেক পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন শুভম। রোগ পাতলা চেহারা, বুদ্ধিদীপ্ত চোখমুখ। পরীক্ষা দিতে বসেছিলেন এক্কেবারে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই। পরীক্ষা দিচ্ছিলেন আর পাঁচ জন পরীক্ষার্থীর মতনই। মাথা গুঁজে উত্তর সমাধান করছিলেন। আচমকাই পরীক্ষকের একটা বিষয়ে সন্দেহ লাগে।

শুভমের উত্তরপত্র হাতে নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন করেন পরীক্ষক। প্রথম দিকে আত্মবিশ্বাসে অটুট ছিলেন শুভম। কিন্তু দুঁদে পরীক্ষকের একাধিক প্রশ্নে ‘বাচ্চা ছেলেটি’ ঘাবড়ে যান। আস্তে আস্তে ঢোক গিলতে থাকেন শুভম। কথার জালে নিজেই জড়িয়ে পড়তে থাকেন। পরীক্ষকের কাছে গোটা বিষয়টি খুলে বলেন।

জানা যায়, শুভম তো আসল পরীক্ষার্থীই নন। টাকার বিনিময়ে পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন তিনি। তবে আসল পরীক্ষার্থী কে? শুভমই জানান, আরামবাগ শীতল পুরের বাসিন্দা মির্জা মোহাম্মদ মেহবুবের হয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন তিনি। তাঁর পারিবারিক কারণেই টাকার প্রয়োজন ছিল। আর সেই কারণে এই পরীক্ষার দেওয়ার বিনিময়ে টাকা পেতেন তিনি। ২০১৫ সালে মায়ের মৃত্যু হয় শুভমের। বাবা দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ। তারপর থেকেই সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব চলে আসে মেধাবী শুভমের কাঁধেই। পড়াশোনা মাঝপথে ছাড়তে হয়। টুকটাক কাজ আর টিউশন পড়িয়েই কোনওমতে বাবার চিকিত্সার খরচ জোগাড় করতেন শুভম। তাই এই বড় ‘রিস্ক’টা নিয়েই ফেলেছিলেন তিনি! জেরার এমনটাই জানিয়েছেন শুভম।

নিউ টাউন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুভমকে গ্রেফতার করে টেকনো সিটি থানার পুলিশ। পুলিশও তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। কেন হঠাত্ এই কাজ করতে গেলেন শুভম? মির্জা মহম্মদ মেহবুবের সঙ্গে তাঁর পরিচয় কীভাবে? এর আগেও কি এভাবে অন্যের হয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি? একাধিক প্রশ্ন উঠে আসছে। সব প্রশ্নরই উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা।

পুলিশ মহম্মদ মেহবুবকেও জেরা করতে চায়। তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে। শুভম কী কাজ করেন, তিনি আদৌ এখনও পড়াশোনা করছেন কিনা, সবই জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। তবে পরীক্ষাহল থেকে দৃশ্যত বুদ্ধিদীপ্ত ছেলেটাকে কোমরে দড়ি বেঁধে যখন নিয়ে গেল পুলিশ, তখন কার্যত স্তম্ভিত ও দুঃখিত হলের অনান্য পরীক্ষার্থী ও পরীক্ষকরাও।

পুলিশ জানিয়েছে, অন্যের হয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছিল ওই যুবক। জেরার মুখে নিজেই সে কথা জানিয়েছে। টাকার বিনিময়ে পরীক্ষা দিতে এসেছিল। তবে কারণ এখনও অবগত নয়। দুজনকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হতে পারে।

সম্প্রতি বাংলার বুকে একের পর এক ভুয়ো সরকারি আধিকারিকের হদিশ মিলছে। ভুয়ো আইপিএস, ভুয়ো আইএএস, সরকারি কৌসলী থেকে শুরু করে ভুয়ো ইডি-সিবিআই অফিসারও। সকলেই টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার নামে কারো না কারোর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। ভুয়ো সিরিজে এবার নাম জড়াল বছর কুড়ির এই যুবকের। অর্থাভাবে অন্যের হয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন তিনি। নিজের মেধার বিনিময়ে পেতেন কিছু টাকা! তা দিয়ে হয়তো সংসারের রোজনামচার সমস্যার কিছুটা হাল হত। কিন্তু বদলে কোমরে দড়ি বেঁধে তাঁকে থানায় নিয়ে গেল পুলিশ! ধৃতের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে মির্জা মোহাম্মদ মেহবুবের(পরীক্ষার্থী) সমস্ত নথি। আজ ধৃতকে বারাসাত আদালতে তোলা হবে এবং পুলিশ ধৃতকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে তদন্ত করবে গোটা বিষয়। আরও পড়ুন: ‘পেটের বাচ্চা নষ্ট করতে ইঁদুর মারার বিষ খেয়েছে ও…’, স্বামীর কথায় তাজ্জব গোটা পাড়া