‘প্যাক অ্যাপ’ বলতেই মিলল পদ! পরিবহণে কমিটির চেয়ারম্যান হয়ে নেত্রীকে ‘থ্যাঙ্কস’ মদনের

বুধবার মদন মিত্র বলেন, "অসংগঠিত ক্ষেত্রে সামাজিক সুরক্ষা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এঁদের সামাজিক সুরক্ষা পৌঁছে দেওয়া একটা বড় কাজ। আমি চেষ্টা করব যাতে তাঁরা সমস্ত সুযোগ সুবিধা পান। ”

'প্যাক অ্যাপ' বলতেই মিলল পদ! পরিবহণে কমিটির চেয়ারম্যান হয়ে নেত্রীকে 'থ্যাঙ্কস' মদনের
পরিবহনে কমিটির চেয়ারম্যান মদন মিত্র
Follow Us:
| Updated on: Dec 02, 2020 | 8:45 PM

TV9 বাংলা ডিজিটাল: ক’দিন আগেই তিনি ফেসবুকে ‘প্যাক-আপ’ বলে পোস্ট করেছিলেন। তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে তৈরি হয়েছিল বিস্তর ধোঁয়াশা। তবে কি এবার মদন মিত্র (Madan Mitra) ? দু’দিন কাটতে না কাটতেই সেই মদন মিত্রকে পরিবহণ কর্মীদের জন্য তৈরি কল্যাণ কমিটির চেয়ারম্যান ( Transport Department new Committee Chairman)  হিসাবে ঘোষণা করল রাজ্য সরকার। ভাটপাড়া বিধানসভা উপনির্বাচনের পর এই প্রথম এত বড় দায়িত্বে ফিরছেন মদন। এর জন্য তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদও জানিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার পরিবহণ দফতরের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, অসংগঠিত কর্মীদের জন্য রাজ্য সরকার একাধিক কল্যাণমূলক প্রকল্প চালু করেছে সংশ্লিষ্ট দফতরে। কিন্তু পরিবহণ দফতরের কর্মীরা অসংগঠিত হওয়ায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁরা খাদ্যসাথী বা স্বাস্থ্যসাথীর মতো প্রকল্পের খবর রাখেন না। ফলে তাঁরা বঞ্চিত হন বিভিন্ন প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা থেকে। পরিবহণ কর্মীরা সেই সমস্ত সরকারি সুযোগ সুবিধা যাতে পান তার জন্য রাজ্য সরকার একটি কমিটি গঠন করার কথা ঘোষণা করেছে। ওই কমিটি ওই সমস্ত প্রকল্প পরিবহণ কর্মীদের কাছে পৌঁছচ্ছে কী না তা দেখভাল করবে।

ওই কমিটিতে চেয়ারম্যান হিসাবে মদন মিত্র ছাড়াও থাকবেন পরিবহণ দফতরের দুই উপ সচিব পদমর্যাদার আধিকারিক এবং বিভিন্ন পরিবহণ সংগঠনের প্রতিনিধিরা। বুধবার মদন মিত্র বলেন, “অসংগঠিত ক্ষেত্রে সামাজিক সুরক্ষা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এঁদের সামাজিক সুরক্ষা পৌঁছে দেওয়া একটা বড় কাজ। আমি চেষ্টা করব যাতে তাঁরা সমস্ত সুযোগ সুবিধা পান। ”

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তৃণমূলের এমন অনেক বড় মুখ রয়েছেন, যাঁদের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। শুভেন্দু অধিকারী বড় ফ্যাক্টর হলেও, সেই তালিকায় রয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। নেত্রী তা নিজেও ভালভাবে আঁচ করতে পারছেন। এতদিনে তাঁর তৈরি সাজানো সংসার ভেঙেই যে বিজেপি আসলে বাংলার মাটি কামড়াতে চাইছে, তা স্পষ্ট। বিজেপি নেতাদের কথায়, ‘সকলের জন্য দরজা খোলা।’ কিন্তু নেত্রী চাইছেন নিজের ঘরের দরজাটাই আগে বন্ধ করতে। সেটা মানভঞ্জন করেই হোক, কিংবা পদে আসক্তিতে!

মদন মিত্র দুদিন আগেই দিয়েছেন ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা। বলেছেন, “জীবন মরণ সাঁকোর সামনে দল এখন দাঁড়িয়ে। বাংলা এখন দাঁড়িয়ে। এখন তোমায় বুঝতে হবে কী হবে আর কী হবে না। কোন সাঁকোটা পারাপারের কোন সাঁকোটা পার হবে না।” বেসুরো গাওয়ার দুদিনের মধ্যেই সরকারি পদ পেলেন মদন।

মদন মিত্রের রাজনৈতিক জীবনের উত্থান-পতন

বরাবরই নেত্রীর অনুগত সৈনিক হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন মদন মিত্র। স্বাক্ষী তৃণমূলের উত্থানের প্রত্যেকটি লড়াইয়ের। নিজের আনুগত্য, পরিশ্রম আর সাংগঠনিক দক্ষতার জোরেই সাধারণ ট্যাক্সি ইউনিয়নের নেতা থেকে হয়ে উঠেছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী। সালটা ২০১১। তৃণমূল সরকারের পরিবহণ ও ক্রীড়া দফতর সামলেছেন। বিশ্বাস আর ভরসা অর্জন করেছিলেন নেত্রীর। কিন্তু ছন্দপতন হয় ২০১৪ সালে। সারদা কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়ে যেতে হয় জেলে। ইস্তফা থেকে মন্ত্রিত্ব থেকে।

আরও পড়ুন: কয়লা পাচারকাণ্ডে আজও সকাল থেকে সিবিআই অভিযান

কার্যত এই সময় থেকেই মদনের সঙ্গে বাড়তে থাকে তৃণমূলের দূরত্ব। জেলে থেকেও দলের বিরুদ্ধে কোনও বেফাঁস মন্তব্য করেননি মদন। জেল থেকে বেরিয়ে আসার পরও সক্রিয় রাজনীতি থেকে নিজেকে অনেকটাই সরিয়ে রাখেন। এরপর গত বিধানসভা উপ নির্বাচন। অর্জুন-গড় ভাটপাড়ায় ‘পরীক্ষিত সৈনিক’ মদন মিত্রের ওপরই ভরসা রেখেছিলেন নেত্রী। জিততে পারেননি। তারপর ফের কিছুটা আড়ালেই চলে যান। তবুও আনুগত্য বজায় রেখেছিলেন। আচমকাই বেসুরো হয়ে মদন হয়তো নাড়িয়ে দিয়েছেন নেত্রীর মনকেও! অন্তত সেটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।