মাঝেরহাট ভোল বদলে জয়হিন্দ, চাপা পড়ে ৫ দশকের সেতু বন্ধনের কাহিনি

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে নতুন মাঝেরহাট সেতু চালু হতে চলেছে। মুখ্যমন্ত্রী নতুন সেতুর নাম রেখেছেন 'জয় হিন্দ ব্রিজ' (Jay Hind Bridge)। সেতুটি লম্বায় প্রায় ৬৫০ মিটার, মাঝের ২২৭ মিটার অংশ ঝুলন্ত অবস্থায় থাকছে। এর মধ্যে ১০০ মিটার ব্রিজ ঝুলন্ত অবস্থায় থাকবে রেললাইনের উপরে।

মাঝেরহাট ভোল বদলে জয়হিন্দ, চাপা পড়ে ৫ দশকের সেতু বন্ধনের কাহিনি
ছবি- ট্যুইটার
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 03, 2020 | 10:37 AM

TV9 বাংলা ডিজিটাল: ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর। অন্যান্য দিনের মতোই ছিল শহরের এদিনের বিকেলটাও। তবে কয়েক মুহূর্তে সব উলট-পালট হয়ে যায়। ভেঙে পড়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সঙ্গে কলকাতার সংযোগকারী প্রধান মাধ্যম মাঝেরহাট সেতু (Majerhat Bridge)। তিনজন প্রাণ হারানোর পাশাপাশি ২৫ জন কম-বেশি আঘাত পান।

বছর দুই পেরিয়ে সেই জায়গায় নতুন সেতু নির্মাণ শেষ। আজ, বুধবার উদ্বোধন হতে চলেছে তার। ফলে দক্ষিণ কলকাতা, বিশেষত বেহালার বাসিন্দারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবেন। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে সময়ের খাতার পাতাগুলো উল্টে দেখা যাক কবে, কীভাবে এই সেতুর জন্ম, ভেঙে পড়ে কীভাবে পুনর্জন্ম হচ্ছে মাঝেরহাট সেতুর?

মাঝেরহাট সেতুর জন্মগাথা

১৯৬৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো আমজনতার জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল মাঝেরহাট সেতু। বেহালা থেকে কলকাতার যাতায়াত যাতে সহজে করা যায়, সেই কারণে মাঝেরহাট রেল স্টেশনের একদম উপরেই এই সেতু তৈরি করা হয়।

বয়সের ভারে ভঙ্গুর দশা

রক্ষণাবেক্ষণ ঠিক মতো হচ্ছিল না, এমনটা অভিযোগ থাকলেও বয়স বাড়ছিল পাল্লা দিয়ে (প্রায় ৫০)। ফলে ফাটল প্রত্যক্ষ করা বা চোখের সামনে চাঙড় খসে পড়া, সাধারণ ঘটনা হয়ে গিয়েছিল নিত্যযাত্রীদের জন্য। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো ট্রেনের যাতায়াত ও তার সঙ্গে পাশেই হতে থাকা মেট্রোর কাজের কম্পন আরও দুর্বল করে তুলেছিল ওই সেতুকে।

দুর্ঘটনার ভ্রূকুটি ছিল আগের থেকেই

বিশেষজ্ঞরদের মতে, এমন নয় যে মাঝেরহাট ব্রিজ দুর্ঘটনা বিনা মেঘে বজ্রপাত ছিল পোস্তা উড়ালপুলের মতো। বরং এ ক্ষেত্রে বহুবার সর্তক করা হয়েছিল সংশ্লিষ্ট দফতরকে। কিন্তু ব্রিজটি রেলের জমিতে তৈরি হওয়ার কারণে সমন্বয়ের অভাবে সঠিকভাবে তা রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি বলে অভিযোগ। এমনকী ২০১৬ এবং ২০১৮; পরপর দু’বার ব্রিজটির দুরাবস্থা সম্পর্কে রিপোর্ট দেওয়া সত্ত্বেও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।

আরও পড়ুন: একগুঁয়ে সরকার, অনড় অন্নদাতারাও! ক্ষেতের লড়াই কীভাবে রাজধানীতে আছড়ে পড়ল?

সেই অভিশপ্ত বিকেল

ফলস্বরূপ যা আশঙ্কা করা হচ্ছিল শেষ পর্যন্ত সেটাই হল। ৪ সেপ্টেম্বর ঘড়ির কাঁটা তখন ৪টা ৪৫ ছুঁয়েছে, হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল মাঝেরহাট সেতু। ব্রিজের উপর তখন একটি মিনিবাস, সঙ্গে বেশ কয়েকটি গাড়ি। সবকটি ভূপতিত। দীর্ঘ প্রায় ৪৮ ঘণ্টা যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ সরানো সম্ভব হয়। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তিন ব্যক্তির। তার মধ্যে দু’জন মেট্রোর কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আরেকজন বেহালার বাসিন্দা।

নতুন ব্রিজ তৈরির প্রস্তুতি

যুদ্ধকালীন তৎপরতায় নতুন সেতু তৈরির দায়িত্ব পূর্ত দফতরের হাতে তুলে দেয় রাজ্য সরকার। ঠিক করা হয়, ২৫০ কোটি টাকা খরচ করে ২০২০ সালের পুজোর আগেই সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য সেতু খুলে দেওয়া হবে। দ্বিতীয় হুগলি সেতুর ধাঁচে এই সেতুও তৈরি হবে বলে জানা যায়। তবে লকডাউনের কারণে কাজ বন্ধ থাকে দীর্ঘদিন।

সেতু নির্মাণেও প্রকট কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয়ের অভাব

চূড়ান্ত তৎপরতা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার ও রেলওয়ের মধ্যে বনিবনার অভাবে একাধিকবার থমকে যায় কাজের গতি। প্রথমে নকশা ঠিক করতেই অনেকটা সময় ব্যয় করে রাজ্য সরকার। এরপর নকশা তৈরি হলেও মেট্রো রেলের কাজের অচলাবস্থার জেরে নষ্ট হয় আরও অনেকটা সময়। শেষ পর্যন্ত রাজ্য নকশা জমা দিলেও রেল তা নিয়ে আপত্তি তোলে। দু’বার বদল করা হয় নতুন ব্রিজের নকশা। এর মাঝে ঢুকে পড়ে রাজনীতি। রাজ্য সরকারের তরফে বারবার অভিযোগ উঠতে থাকে, রেলের তরফে ইচ্ছে করেই অনুমতি দিতে দেরি করা হচ্ছে। রেলও পাল্টা যুক্তি সাজিয়ে দাবি করে, তাদের তরফে কোনও গাফিলতি নেই। নির্মাণকার্যে বিলম্বের জন্যও তারা দায়ী নয়।

মধুরেণ সমাপয়েৎ

অনেক ঝড়-ঝাপ্টা পেরিয়ে অবশেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে নতুন মাঝেরহাট সেতু চালু হতে চলেছে। মুখ্যমন্ত্রী নতুন সেতুর নাম রেখেছেন ‘জয় হিন্দ ব্রিজ’ (Jay Hind Bridge)। সেতুটি লম্বায় প্রায় ৬৫০ মিটার। মাঝের ২২৭ মিটার অংশ ঝুলন্ত অবস্থায় থাকছে। এর মধ্যে ১০০ মিটার ব্রিজ ঝুলন্ত অবস্থায় থাকবে রেললাইনের উপরে। সেতুটি ৩৮৫ টন পর্যন্ত ভার বহন করতে সক্ষম। ক্ষমতা বাড়াতে বিদেশ থেকে ৮৫টি কেবল এনে লাগানো হয়েছে এতে। নতুন মাঝেরহাট সেতু চালু হওয়ার ফলে নিত্যদিনের যাতায়াত অনেকটাই সুবিধাজনক হবে বেহালা তথা দক্ষিণ ২৪ পরগনার নিত্যযাত্রীদের জন্য।

আরও পড়ুন: ইতিহাসে প্রথমবার! ভাতের জন্য ভারতের ভরসায় চিন