হাসপাতালের গেটে সাঁটানো বিবর্ণ ‘নিরুদ্দেশ সংবাদ’ই বাড়িতে ফেরাল মানসিক ভারসাম্যহীন প্রৌঢ়কে

Purba Medinipur: পূর্ব মেদিনীপুরের মারিশদা থানা এলাকার কুসুমপুর গ্রামের বাসিন্দা প্রদীপ বেরা। পরিবারের দাবি, মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন এই প্রৌঢ়।

হাসপাতালের গেটে সাঁটানো বিবর্ণ 'নিরুদ্দেশ সংবাদ'ই বাড়িতে ফেরাল মানসিক ভারসাম্যহীন প্রৌঢ়কে
নিজস্ব চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 31, 2021 | 1:55 PM

কলকাতা: দেওয়ালে সাঁটানো সাদা কালো ‘নিরুদ্দেশ সংবাদ’। নাম, ঠিকানা, যাবতীয় বিবরণ দিয়ে পরিজনেরা হারানো প্রিয়জনকে ফিরে পেতে বহু সময়ই এই লিফলেটের সাহায্য নেন। আশায় বুক বাঁধেন, যদি কোনও খোঁজ মেলে। কিন্তু ঝাঁ চকচকে বিজ্ঞাপণের আড়ালে কেমন যেন ধুঁকতে থাকে এগুলি। কোনওটা থুকে দেওয়া পান কিংবা গুটখার পিকে ‘রঙিন’, কোনওটা আবার অর্ধেক ছেড়া। যারা এগুলি করেন, হয়ত ধরেই নেন, ‘ধুর, এসব দেখে আবার কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় নাকি’! কিন্তু কথায় আছে, ‘বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি’। কখন যে কী থেকে কী হয় তা কেউ বলতে পারে নাকি! এই যেমন প্রায় ১৫ দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের বছর আটান্নর এক ব্যক্তি। এই ‘নিরুদ্দেশ সংবাদ’ই তাঁকে ফিরিয়ে দিল পরিবারের কাছে।

পূর্ব মেদিনীপুরের মারিশদা থানা এলাকার কুসুমপুর গ্রামের বাসিন্দা প্রদীপ বেরা। পরিবারের দাবি, মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন এই প্রৌঢ়। বর্ধমানে এক নিউরো সাইকিয়াট্রিক বিশেষজ্ঞ তাঁর চিকিৎসা করছেন। গত ১৯ জুলাই পরিবারের সঙ্গে ধর্মতলা এসেছিলেন প্রবীরবাবু। সেখান থেকে বাসে মারিশদা ফেরার কথা ছিল। টিকিটের কাউন্টারে লম্বা লাইন। থিক থিক করছে মানুষের ভিড়। এরই মধ্যে কখন যেন বাড়ির লোকজনের হাত ছাড়িয়ে বেপাত্তা হয়ে যান ষাট ছুঁই ছুঁই মানুষটি। একে তো চেনেন না কিছুই, তার উপর আবার মাথাও সব কিছু নিতে পারে না।

প্রবীরবাবুর ছোট ভাই গোপাল বেরা ফোনে জানালেন, “আমার মেজদা প্রবীর বেরা সেদিন বরদার সঙ্গে ধর্মতলায় ছিল। হঠাৎ হাত ছাড়িয়ে কোথায় চলে গেল খোঁজই পায়নি। পরদিন সকালে হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিযোগও জানাই। তার পর থেকে কতবার যে দফায় দফায় কলকাতায় এসেছি। ৭-৮ জনের দল করে খুঁজেছি। প্রায় ২০০-২৫০টা লিফলেট সাঁটিয়েছি কলকাতায়। এনআরএস, চিত্তরঞ্জন হাসপাতাল, পিজি, আরজিকর, বিভিন্ন থানার সামনে দাদার নাম, ছবি বিস্তারিত দিয়ে লিফলেট দিই। ফোন নম্বরও দেওয়া ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার পর্যন্তও কোনও ফোন আসেনি।”

কিন্তু হঠাৎই মিরাকেল হয়ে গেল শুক্রবার বিকেলে। সাড়ে ৫টা নাগাদ একটি ফোন যায় গোপাল বেরার কাছে। থানা থেকে সেই ফোনে বলা হয় এমন একজনের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে যাঁর সঙ্গে ওই লিফলেটের ছবির মিল রয়েছে। এদিকে সে সময় পূর্ব মেদিনীপুর থেকে কলকাতা আসাও সহজ নয়। গোপালবাবু জানান, তাঁর এক দিদি থাকেন হাওড়ার সলপে। তাঁকে খবর দেওয়া হয়। দিদি, জামাইবাবু পৌঁছন চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে।

পরে জানা যায় প্রবীর বেরার উদ্ধারের পিছনে আসলে রয়েছে ওই নিরুদ্দেশ সংবাদের লিফলেটটিই। শুক্রবার ক্যামাক স্ট্রিটে ফুটপাতে অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তিকে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেই হাসপাতাল চত্বরেই ছিল প্রবীর বেরার নিখোঁজ সংক্রান্ত লিফলেটটি। সেটি নজরে আসে হাসপাতালেরই এক অ্যাম্বুলেন্স চালকের। যিনি আবার কেশিয়াড়ির বাসিন্দা। এর পরই ফোনে ফোনে সমস্ত যোগাযোগ হয়। পুলিশকেও জানানো হয় বিস্তারিত। সাউথ ট্রাফিক গার্ডের সার্জেন্ট দীপ্তিময় ঘোষের চেষ্টায় অত্যন্ত সুষ্ঠু ভাবে সম্পূর্ণ কাজটি করেন পুলিশ কর্মীরা।

একটা বিবর্ণ সাদা কালো লিফলেটেও বেঁচে থাকে প্রিয়জনকে ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন। অনেক আশা নিয়ে সেগুলি দেওয়ালে-দরজায় সাঁটিয়ে দেন আমাদেরই কোনও সহনাগরিক। আরও পড়ুন: জলের তলায় লাইন, একগুচ্ছ দূরপাল্লার ট্রেন বাতিল আজও! স্টাফ স্পেশালেরও ‘নয়া রুট’