রাজীবের পর তলব ‘বেসুরো’ জিতেন্দ্রকে
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় কলকাতায় আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
কলকাতা: পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে লেখা ‘বেসুরো’ চিঠির প্রেক্ষিতে আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র তথা বর্তমান পুরপ্রশাসক জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে (Jitendra Tewari) ডেকে পাঠাল দল। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় কলকাতায় আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
সাম্প্রতিক বাংলার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে, একের পর এক তৃণমূল বিধায়ক দলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন। শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, শীলভদ্র দত্তের পর জিতেন্দ্র তিওয়ারি! এবার দলের বিরুদ্ধে বেসুরো গাইলেন তিনি। শুধু বেসুরো কথাই নয়, কেন্দ্রে এতদিন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করছিল, সেই বিষয়টিও উস্কে দেন। তাঁর অভিযোগ, রাজনৈতিক কারণেই কেন্দ্রের পাঠানো টাকা উন্নয়নের কাজে ব্যাবহার করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।
তাঁর অভিযোগ, “রাজনৈতিক কারণেই কেন্দ্রের টাকা উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।” পুরমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, “কেন্দ্রের স্মার্ট সিটি প্রকল্পের ২০০০ কোটি টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছে আসানসোল। রাজনৈতিক কারণে পুরদফতর এই টাকা নিতে দেয়নি। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে টাকা নিতে বাধা দেওয়া হয়েছে কেবল রাজনৈতিক কারণে।” তিনি অভিযোগ করেন, একই কারণেই সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের টাকা থেকেও বঞ্চিত হয়েছে আসানসোল। প্রাক্তন মেয়র তথা পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়কের এই চিঠি সাম্প্রতিক বঙ্গ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন করে বিতর্ক তৈরি করেছে। যদিও এর প্রেক্ষিতে ফিরহাদ হাকিম বলেন, “আসানসোলের উন্নয়নের জন্য ওঁকে অনেক টাকাই দেওয়া হয়েছে। সেসব তো চিঠি লেখেনি। ও নিশ্চয়ই গ্যাস খেয়ে লিখেছে।”
যদিও স্মার্ট সিটি প্রকল্প ইস্যুতে জিতেন্দ্র তিওয়ারি চিঠিতে যা উল্লেখ করেছেন, তা অনেকটাই ভুল বলে দাবি করেন ফিরহাদ। তিনি বলেন, “জিতেন যে টাকার কথা বলছে সেগুলো ভুয়ো। স্মার্ট সিটিতে ১০০ কোটি টাকার ৫০ শতাংশ রাজ্য সরকার দেয়। সব সময় কেন্দ্রীয় সরকার পুরো টাকা দেয়না। স্মার্ট সিটি প্রকল্পতে আমরা উৎসাহ দেখাইনা। কেন্দ্রীয় সরকার যদি ৫০০ কোটি দেয় তাহলে আমাদেরও ৫০০ কোটি করে দিতে হবে। আমাদের ওতো বাজেট থাকেনা। ” আরও পড়ুন: ‘ও গ্যাস খেয়ে লিখেছে’, কেন্দ্রের টাকা খরচে ‘বাধা’ নিয়ে জিতেন্দ্রের চিঠির প্রতিক্রিয়া ফিরহাদের
জিতেন্দ্রকে ‘ভাই’ বলে সম্বোধন করে বলেন, “ওর সঙ্গে তো অনেক কথা হয়েছে। কোনওদিনও এই বিষয়ে কিছু বলেনি। আজ হঠাত্ কেন এই সব কথা বলছে জানি না। এখনও এই বিষয়ে ওর সঙ্গে কথা হয়নি। আমার সঙ্গে ওর খুব ভালো সম্পর্ক, আমরা কথা বলব এব্যাপারে।”
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহেই টলিগঞ্জে একটি অনুষ্ঠানে আচমকাই বেসুরো কথা বলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর দুদিন আগেও পুরোহিতদের সভায় যোগ দিয়ে বলেছিলেন, “যত মত, তত পথ। যত মত হবে, পথও ভিন্ন হবে। যদি কোথাও মনে হয়, মানুষের কাজ করার জন্য এই মতে অসুবিধা হচ্ছে, তবে অনেক পথ খোলা আছে। সেই পথ থেকে কেউ কাউকে সরাতে পারবে বলে আমার মনে হয় না।” দলের বিরুদ্ধে মনে যে ক্ষোভ জমছে রাজীবের, রাজনৈতিক মহলে তা চাউর হয়ে যায়। তত্পর হয়ে ওঠে দল। এরপরই তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে ডাকা হয় রাজীবের ‘মানভঞ্জন’এর বৈঠক। বৈঠকে রাজীব সমস্যা সমাধানের মরিয়া প্রয়াস করে তৃণমূল নেতৃত্ব। বৈঠক শেষে সেদিন বেরিয়ে রাজীব বলেছিলেন, “আমার সঙ্গে শুভেন্দুবাবুকে গোলাবেন না।” রাজীব সমস্যা তৃণমূল এখনও পুরোপুরি মেটাতে পেরেছে কিনা তা নিয়ে ধন্দে রাজনৈতিক মহল। এরই মধ্যে আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠল জিতেন্দ্র তিওয়ারির ‘বেসুরো’ চিঠি।