Lightning Death: এ বছর বজ্রপাতে ৩০ জনের মৃত্যু বাংলায়, পূর্বাভাস নিয়ে প্রচারে খামতিই কি দায়ী?

Weather: এসব দুর্যোগ মোকাবিলার ব্যাপারে ওড়িশা পথিকৃত্‍। সে রাজ্যের কাজ দেখে শেখার মতো। মৌসম ভবন ঘূর্ণিঝড়ের নিখুঁত পূর্বাভাস দেওয়ায়, অনেক আগেই লোকজনকে নিরাপদে সরানোর সুযোগ পাওয়া যায়। এই কাজটা সুচারু ভাবে করে ওড়িশা সরকার। ফলে প্রবল প্রতাপশালী ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়লেও ওড়িশায় মৃতের তালিকা কখনই লম্বা হয় না।

Lightning Death: এ বছর বজ্রপাতে ৩০ জনের মৃত্যু বাংলায়, পূর্বাভাস নিয়ে প্রচারে খামতিই কি দায়ী?
প্রতীকী চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 17, 2024 | 9:41 PM

কলকাতা: বৃহস্পতিবার বজ্রপাতে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বাংলায়। এর আগে ৬ মে-র দুর্যোগেও ১২ জনের মৃত্যু হয়েছিল রাজ্যে। যার মধ্যে ৯ জনেরই মৃত্যু বজ্রপাতে। দু’দিনই এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু জরুরি প্রশ্ন হল, দুর্যোগের আগে রাজ্য সরকার কাজের কাজটা কি করেছিল? গ্রীষ্মকালে বজ্রগর্ভ মেঘ সৃষ্টি হয়ে বৃষ্টি নামে, ঝড় ওঠে। বজ্রগর্ভ মেঘে বাজ পড়বে, এটাই স্বাভাবিক। উল্লম্ব বজ্রগর্ভ মেঘ যত উঁচু হবে, তত বেশি বজ্রপাত হওয়ার আশঙ্কা। বছর বছর বজ্রপাত বাড়ছে কি না, সেটা মৌসম ভবন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার বিষয়। গবেষণা করলে উত্তর পাওয়া যাবে। কিন্তু বজ্রপাতে মৃত্যু যে বাড়ছে, সেটা পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে। চলতি মাসেই অন্তত ২৩ জনের মৃত্যু বাংলায়। চলতি বছরে সংখ্যাটা অন্তত ৩০। এর আগে ২০২১ সালের ৬ জুন একদিনেই বজ্রপাতে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল রাজ্যে। এটা পরীক্ষিত সত্য, আজকাল ঘূর্ণিঝড়ের চেয়ে বজ্রপাত, ঝড়-বৃষ্টিতে মৃত্যু অনেক বেশি।

ঘূর্ণিঝড়ে মৃত্যু কমানো গেলে, বজ্রপাতে তা সম্ভব হচ্ছে না কেন? খামতি কোথায়?

ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখলে অন্তত ৫ দিন আগে থেকে সতর্কতা জারি করে আবহাওয়া দফতর। বজ্রপাতের আশঙ্কায় হলুদ, কমলা সতর্কতা জারি করে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। আবহাওয়া দফতরের কাজ পূর্বাভাস জানানো। এটা নিশ্চিত ভাবে বলা যায়, গত কয়েক বছরে হাওয়া অফিসের সেই কাজে বিন্দুমাত্র বিচ্যুতি হয়নি। রাজ্য সরকারের, বিশেষ করে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কাজ, সেই পূর্বাভাস সর্বত্র পৌঁছে দেওয়ার বন্দোবস্ত করা। বজ্রাঘাতে মৃত্যু ঠেকাতে মানুষকে সচেতন করা।

কী করবেন, কী করবেন না, সেটা বলাও কাজ রাজ্যের এবং সেটা বারবার বলা। গত কয়েক বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, বজ্রপাতে মৃত্যু বেশি গ্রামাঞ্চলে। যার মধ্যে বেশিরভাগ মৃত্যু হয় চাষের জমিতে। চাষের কাজ বা গরু-ছাগল চরাতে গিয়ে দুর্যোগের মধ্যে পড়ে মৃত্যু। ৬ মে রাজ্যে যে ৯ জন বজ্রপাতে মারা গিয়েছিলেন, তারাও জেলার। পূর্ব বর্ধমানের পাঁচ জন, ২ করে পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়ার বাসিন্দা। গতকাল যাঁরা মারা গেলেন, তাঁদের ১১ জন মালদহের, একজন মুর্শিদাবাদের, একজন জলপাইগুড়ির বাসিন্দা। জেলায় জেলায় কি সচেতন করার কাজটা করেছিল রাজ্য প্রশাসন?

এটা একদিনের অভ্যাস নয়। বছরভরের পরিকল্পনায় থাকা উচিত। পরিকল্পনা আমরা দেখতে পাই কি? এই যে মার্চের শেষে ময়নাগুড়িতে ঝড়-বৃষ্টিতে চার জনের মৃত্যু হল। তখনও এই প্রশ্নটা উঠেছিল। সে সময় টর্নেডোর পূর্বাভাস হয়তো ছিল না। সেটা দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু ঝড়-বৃষ্টি, কালবৈশাখীর পূর্বাভাস ছিল। সেই সময় সাবধানে থাকার কথা কি বিশেষ ভাবে প্রচার করেছিল রাজ্য সরকার? করলে হয়তো একটা বা দুটো প্রাণহানি এড়ানো যেত।

এসব দুর্যোগ মোকাবিলার ব্যাপারে ওড়িশা পথিকৃত্‍। সে রাজ্যের কাজ দেখে শেখার মতো। মৌসম ভবন ঘূর্ণিঝড়ের নিখুঁত পূর্বাভাস দেওয়ায়, অনেক আগেই লোকজনকে নিরাপদে সরানোর সুযোগ পাওয়া যায়। এই কাজটা সুচারু ভাবে করে ওড়িশা সরকার। ফলে প্রবল প্রতাপশালী ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়লেও ওড়িশায় মৃতের তালিকা কখনই লম্বা হয় না। অথচ বাংলায় আমপানে কিন্তু অন্তত একশো জনের মৃত্যু হয়েছিল। কোথাও তো খামতি রয়েছে! সাধন পাণ্ডে মন্ত্রী থাকাকালীন সবাইকে ক্রেতাসুরক্ষা দফতর চিনিয়ে দিয়েছিলেন। এই দফতরটাও যে আছে, এটাই অনেকে জানত না। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরও যে আছে, সেটা বোঝানোর দায় বা দায়িত্ব কি সরকার নিতে পারে না?

বজ্রাঘাত থেকে বাঁচতে কী করবেন? কয়েকটা প্রাথমিক উপায় জেনে রাখা ভাল

এক, আবহাওয়া খারাপ হতে দেখলেই কংক্রিটের আস্তানায় ঢুকে পড়তে হবে।

দুই, বিদ্যুতের ঝলক দেখা আর শব্দ শোনার মধ্যে যদি ৩০ পর্যন্ত গুনতে না পারেন, তাহলে অন্তত ৩০ মিনিট বাইরে বেরোবেন না। এর মানে আরও বজ্রপাতের আশঙ্কা রয়েছে।

তিন, গাছ বা উঁচু রডের নীচে, খোলা মাঠে, নৌকায়, পাহাড়ের মাথায় বা সৈকতে নয়

চার, পাইপবাহিত জল, জানালার রড, এমন বিদ্যুত্‍ পরিবাহী কিছু স্পর্শ করবেন না।

আশপাশে বজ্রপাতের আশঙ্কা কতটা, মৌসম ভবনের দামিনী অ্যাপে প্রতি মুহূর্তের তথ্য দেয়।

নিজে শিখুন, অন্যকেও সেখান। না হলে বৃষ্টির স্বস্তির মধ্যে বজ্রপাতের প্রাণ কাড়ার ঘটনা চলতেই থাকবে।