শুধু কলকাতাতেই ম্যালেরিয়া আক্রান্ত ৩৯০০! স্বাস্থ্য দফতরকে কারণ জানাল পুরসভা
Malaria in Kolkata: গত বছরের থেকে এ বছর ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ শতাংশ বেশি। ম্যালেরিয়াতেও টেস্ট-ট্র্যাক-ট্রিট চালু করার চেষ্টা।
কলকাতা: একদিকে করোনা পরিস্থিতি। অন্যদিকে, বর্ষাকালে বেড়েছে অন্যান্য রোগের প্রকোপও। ডেঙ্গু আতঙ্ক তো রয়েছেই। তবে এরই মধ্যে বর্ষাকালে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা। গত বছর এই সময় রাজ্যে যত ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সন্ধান মিলেছিল, এ বছর তার থেকে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি। কেন এত বেশি মানুষ মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে? পুরসভার কাছে তা জানতে চেয়েছিল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। পুরসভার তরফ থেকে বৃষ্টিকেই দায়ী করা হয়েছে। অগস্ট পর্যন্ত পাওয়া পরিসংখ্যা অনুযায়ী, এ রাজ্যে ম্যালেরিয়ার ঘায়ে কাবু হয়েছেন ৪৮৪৭ জন। এই পরিসংখ্যানে একা কলকাতাতেই আক্রান্তের সংখ্যা ৩৯০০।
ম্যালেরিয়া সাধারণত দু’ধরনের হয়, ফ্যালসিপেরাম ও ভাইভ্যাক্স। এই দুটি মিলিয়ে এ বছর যত আক্রান্ত হয়েছে, গত বছরের থেকে তা ৩৫ শতাংশ বেশি। তাই উদ্বেগ বেড়েছে স্বাস্থ্য দফতরের। করোনা পরিস্থিতি এখনও সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কাও পুরোপুরি উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। তাই ম্যালেরিয়ার এই বাড়বাড়ন্তের কারণ জানতে চেয়ে বুধবার পুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষ কর্তারা। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সেই বৈঠকে পুরসভার প্রতিনিধিরা অতিরিক্ত বৃষ্টিকেই দায়ী করেছেন।
কী বলছে পুরসভা?
পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘কোভিডের কারণে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণের কাজ ব্যাহত হয়েছে ঠিকই। তবে এ বছর জুলাইয়ে ৫০০ মিলিমিটার অতিরিক্ত বৃষ্টি হয়েছে। আর সেটাই ম্যালেরিয়া বাড়বাড়ন্তের কারণ।’ পাশাপাশি, চিকিৎসকদের একাংশ প্রাইমা কুইন ওষুধ দেওয়ার প্রশ্নে নিমরাজি হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা। পুরসভার প্রতিনিধিরা জানান, ‘প্রাইমা ক্যুইনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার জন্য চিকিৎসকেরা রোগীকে ওই ওষুধ দিতে চাইছেন না। তাতে রোগ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হচ্ছে।’
কী বলছে স্বাস্থ্য দফতর?
স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের দাবি, ম্যালেরিয়া মুক্ত রাজ্যের শিরোপা আদায়ের লক্ষ্যে এগোচ্ছে রাজ্য। এক হাজার জনসংখ্যায় যদি একজন মাত্র ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়, তাহলেই সেই শিরোপা আদায় করা সম্ভব। রাজ্যের অন্যান্য জেলা লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি থাকলেও কলকাতাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে। যার পরপ্রেক্ষিতে বুধবারের বৈঠক থেকে একগুচ্ছ দাওয়াই প্রয়োগ করার কথা বলা হয়েছে পুরসভাকে।
আক্রান্ত কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকলেও বাড়ি যদি জেলায় হয়, সে ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য দফতর পুরসভা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আক্রান্তদের খোঁজ করে নজরদারি চালাবে। বড়বাজার, কলুটোলা, কলেজ স্ট্রিট, ভবানীপুর, বালিগঞ্জ, শিয়ালদহ, রাজাবাজার, বেলেঘাটার মতো ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় ২০-৩০ হাজার কীটনাশক যুক্ত মশারি বিলি করবে স্বাস্থ্য দফতর। প্রাইমা ক্যুইন দেওয়ার প্রশ্নে চিকিৎসকদের মধ্যে অনীহা কাটাতে আইএমএ’র সঙ্গে বৈঠকও করবেন স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা। প্রাইমা ক্যুইনে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার নজির লাখে একটা। এ কথা জানিয়ে জারি হতে চলেছে নির্দেশিকাও।
এখনও পর্যন্ত এ বছর রাজ্যের মোট ম্যালেরিয়ার ৭০ শতাংশ আক্রান্তই কলকাতার বাসিন্দা। এই পরিস্থিতিতে কলকাতায় ম্যালেরিয়ার দাপট কমিয়ে আনাই এখন স্বাস্থ্য দফতরের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
আরও পড়ুন: মাঝ রাতে পুলিশ এল পর্ণশ্রীর বাড়িতে, ‘রহস্যজনক’ ব্যাগ হাতে ভ্যানে উঠল নিহতের স্বামী