Mamata Banerjee: ২৪০ কোটির পুজো-অনুদান পিছনে ফেলল একাধিক খাতের বাজেট বরাদ্দকে

Durga Puja: পরিসংখ্যান বলছে, যে পরিমাণ টাকা পুজোয় স্রেফ অনুদান হিসেবে বিলি করছে রাজ্য সরকার, তা ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে রাজ্য সরকারের বাজেট বিবৃতিতে একাধিক ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত আর্থিক বরাদ্দের তুলনায় অনেকটা বেশি।

Mamata Banerjee: ২৪০ কোটির পুজো-অনুদান পিছনে ফেলল একাধিক খাতের বাজেট বরাদ্দকে
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 22, 2022 | 11:11 PM

কলকাতা : রাজ্য সরকারের আর্থিক অবস্থা যে বর্তমানে খুব একটা ভাল নয়, তা সোমবার বিকেলে নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছেন, “ভাঁড়ার শূন্য”। তবু বাঙালির প্রিয় দুর্গোৎসবের জন্য ক্লাবগুলিকে যে অনুদান দেওয়া হয়, তার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছেন মমতা। আগে দেওয়া হত ক্লাবপিছু ৫০ হাজার টাকা করে। এই বছর তা আরও ১০ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৬০ হাজার টাকা করা হয়েছে। রাজ্যে মোট ৪০ হাজার ৯২ টি ক্লাবকে অনুদান দেওয়া হয়। হিসেব মতো, এই সব ক্লাবগুলিকে অনুদান দিতে গেলে মোট যা খরচ পড়বে, তা হল ২৪০ কোটি ৫৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। পরিসংখ্যান বলছে, যে পরিমাণ টাকা পুজোয় স্রেফ অনুদান হিসেবে বিলি করছে রাজ্য সরকার, তা ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে রাজ্য সরকারের বাজেট বিবৃতিতে একাধিক ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত আর্থিক বরাদ্দের তুলনায় অনেকটা বেশি।

বাজেটে কোন কোন খাতে বরাদ্দ পুজো-অনুদানের থেকে কম?

যেমন, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের জন্য উপভোক্তা বিষয়ক খাতে আর্থিক ব্যয়-বরাদ্দ প্রস্তাবিত রয়েছে ১১৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। পরিবেশ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বরাদ্দের পরিমাণ ৯৯ কোটি টাকা। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প ও উদ্যান পালন বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বরাদ্দ অর্থ ২২৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা। প্রায় কাছাকাছি অঙ্কের আর্থিক বরাদ্দ প্রস্তাবিত হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি ও বৈদ্যুতিন বিভাগের জন্য। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের জন্য এই খাতে আর্থিক বরাদ্দ ২৪১ কোটি ৭ লাখ টাকা। অপ্রচলিত ও পুনর্নবীকরণ শক্তি উৎস বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত ব্যয়-বরাদ্দ রয়েছে ৭৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সরকারি উদ্যোগ ও শিল্পপুনর্গঠন বিভাগের জন্য বরাদ্দ অর্থের অঙ্ক ৭২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং জৈব প্রযুক্তি বিভাগের জন্য বরাদ্দ অর্থ ৭২ কোটি ২০ লাখ টাকা।

Mamata Durga Puja

কোন খাতে বাজেটে কত বরাদ্দ?

কড়া সমালোচনা বিরোধীদের

রাজ্য সরকারের এমন বেহাল আর্থিক অবস্থার মধ্যেও অনুদানের অঙ্ক বাড়ানো নিয়ে খোঁচা দিতে ছাড়েনি বিরোধীরা। বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যাতে পুজো-পুজো রব তুলে দিয়ে চোর-চোর রবটা পিছনে চলে যায়। অনুদান দিচ্ছেন ভাল কথা। কিন্তু তার সঙ্গে মহার্ঘ ভাতাও দিন। রাজ্য সরকারের কিছু প্ল্যানড খরচ থেকে, কিছু আনপ্ল্যানড খরচ থাকে। রাজ্য সরকার যদি ৬০ হাজার টাকা করে দিতে পারে, আমাদের কোনও আপত্তি নেই। ৬০ হাজারের জায়গায় যদি ১ লাখও দেন, আমরা স্বাগত জানাব। তার সঙ্গে, যেগুলি প্ল্যানড, যেগুলির মাধ্যমে কর্মসংস্থান হতে পারে, রাজ্যের জিডিপি বাড়তে পারে, সেই ধরনের পদক্ষেপও করা উচিত।”

খোঁচা দিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি দিলীপ ঘোষও। তাঁর বক্তব্য, “এই গরু চুরির টাকায় পুজোর অনুদান দেওয়া হচ্ছে। আমি জানি না এই চুরির টাকায় কতজন মানুষ পুজো করবে বা দেখতে আসবে।”

বক্রোক্তি শানিয়েছেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীও। রাজ্যের শাসক দলকে একহাত নিয়ে বলেন, “পুজোর জন্য ৫০ হাজার ছিল, বাড়িয়ে ৬০ হাজার করল। বিদ্যুতে, দমকলে কী সব ছাড় দেবেন… সব মিলিয়ে শ’য়ে-শ’য়ে কোটি টাকা। মুখ্যমন্ত্রীর টাকার ভাণ্ডার পূর্ণ। এটা ঠিক। বাঁধের মেরামতির কাজ হচ্ছে না। রাস্তার মেরামতির কাজ হচ্ছে না। বিদ্যুতের মেরামতির কাজ হচ্ছে না। মানুষ মারা যাচ্ছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে। ডিএ পাওয়া যাচ্ছে না, নিয়োগ হচ্ছে না। রাজ্যের হাল খুবই খারাপ। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ভাঁড়ারটি এত পূর্ণ যে উনি যেখানে সেখানে, যেমন খুশি দিতে পারবেন। যাতে ক্লাবগুলি পাশে বড় বড় করে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি এঁকে ছাপিয়ে দেয়। মুখ্যমন্ত্রীর নামের ও মুখের প্রচারের জন্য রাজ্যের তহবিলের কোটি-কোটি টাকা খরচ কখনও সঠিক হতে পারে না।”

সাফাই দিয়েছে তৃণমূল শিবিরও

তবে এর পাল্টা সাফাই দিয়েছে তৃণমূল শিবিরও। রাজ্যের শাসক দলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, “দুর্গাপুজো আজ বাংলার গণ্ডি, দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। ইউনেস্কো স্বীকৃতি দিয়েছে। এটা মাথায় রাখতে হবে। এত হাজার পুজো কমিটিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে প্রোমোট করেছেন, সেটা কোনও সরকার করতে পারেনি। এর সঙ্গে খয়রাতির তুলনা চলে না।” উল্টে রাজ্যের যে বকেয়া রয়েছে কেন্দ্রের কাছে সেই কথাও স্মরণ করিয়ে দেন শান্তনু বাবু। বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নরেন্দ্র মোদীর কাছে লিখিত আবেদনে জানিয়েছেন, ১ লাখ ৯৬৮ কোটি টাকা বাংলার পাওনা কেন্দ্রের কাছে। সেই টাকা পাওয়া যাচ্ছে না বলে তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একশো দিনের প্রকল্প বন্ধ করেননি। বিনামূল্যে রেশন বন্ধ করেননি। বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা বন্ধ করেননি।”