পুলিশের রূপটুপ হঠাৎ পালটে গিয়েছে… লক্ষ্য রাখব: মমতা
যে বিরোধীরা দীর্ঘ সময়জুড়ে রাজ্য পুলিশকে তৃণমূল সুপ্রিমোর 'দলদাস' বলে কটাক্ষ করে এসেছে, সেই পুলিশের আচরণ 'কেমন যেন বদলে গিয়েছে' বলে এ দিন ইঙ্গিত করেন মমতা।
কলকাতা: রাজ্যের পুলিশ কি তবে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কথা শুনছে না? রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী কি কোথাও গিয়ে আস্থা হারাচ্ছেন পুলিশের উপর? বিজেপির তরফ থেকে ইতিমধ্যেই এই প্রশ্ন তোলা শুরু হয়েছে। তবে রবিবার একাধিক জনসভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমন কয়েকটি মন্তব্য করেছেন, যাতে এই আশঙ্কা তিনি নিজেই উস্কে দিয়েছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।
রাজ্যে নির্বাচনী আচরণবিধি কার্যকর হওয়ার পর থেকেই একের পর এক পুলিশ আধিকারিকদের রদবদল করেছে নির্বাচন কমিশন। এমনকি, ভোট শুরু হওয়ার পরও বদলি অব্যাহত থেকেছে। এই পরিস্থিতিতে মমতা ঘুরিয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আঙুল তুলেছেন। যে বিরোধীরা দীর্ঘ সময়জুড়ে রাজ্য পুলিশকে তৃণমূল সুপ্রিমোর ‘দলদাস’ বলে কটাক্ষ করে এসেছে, সেই পুলিশের আচরণ ‘কেমন যেন বদলে গিয়েছে’ বলে এ দিন ইঙ্গিত করেন মমতা।
তিনি বলেন, “বাংলাতে যারা আছেন (পুলিশ), তারা একটু অন্য রকম হয়ে গিয়েছে, রূপটুপ দেখতে পাচ্ছি। আমি শুনতে শুনতেই আসছিলাম, যে তারা হঠাৎ পালটে গিয়েছে। পাল্টে গিয়েছেন না নিয়মটা উল্টে গেছে? শুনুন যারা মানুষের পাল্স বোঝেন, এই পাল্সটা যারা বুঝতে পারছেন না, তাঁরা নিজেদের মধ্যেই থাকুন। আর কার কার কত প্রমোশন হচ্ছে, আমি সেটাও লক্ষ্য রাখব। আপনাদের প্রমোশন হলে আমি খুশিই থাকব। আমি চাই পুলিশ নিরপেক্ষভাবে কাজ করুক।”
এখানেই থেমে থাকেননি মমতা। বারুইপুরের সভা থেকে তিনি আরও বলেন, “আমি চাই এই নির্বাচনে পুলিশের সঙ্গে ছেলেদের কোনও টক্কর হবে না, মহিলাদের এগিয়ে দিন। যখনই পুলিশ আসছে দুম দুম করে, সঙ্গে সঙ্গে উলুধ্বনি দেবেন, শাঁখ বাজাবেন, পাড়াকে অ্যালার্ট করবেন। এই লড়াইটায় মোদী-শাহর বিরুদ্ধে আমার মা-বোনেরা লড়াই করে জিতুক। পুলিশ গেলেই মা-বোনেরা ছবি তুলে রাখবেন। আদৌ পুলিশ কিনা, দেখতে হবে।”
আরও পড়ুন: উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক শেষ, করোনা সংক্রমণ রুখতে কী সিদ্ধান্ত নিলেন প্রধানমন্ত্রী?
আমতা এবং খানাকুল, এই দুই সভা থেকে রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন তুলতে শোনা যায় মমতাকে। তিনি বলেন, “অসমে পুলিশ দিয়ে ভোট লুঠ করেছে, এখানে করতে দেবেন না। মেয়েরা শাঁখ বাজাবেন, যাতে গ্রামের লোক বুঝতে পারে ওই পুলিশগুলো আসছে। আমাদের ভয় দেখাতে আসছে দিল্লির পুলিশগুলো। দিল্লি পুলিশের সঙ্গে বাংলার পুলিশ থাকলে শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি দেবেন। তাহলে বুঝবেন পুলিশ পাড়ায় রেইড করতে এসেছেন। ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রচার শেষ করে ঘুমিয়ে পড়বেন না। ওই ৪৮ ঘণ্টা ভয় দেখায়। পুলিশ নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। বলে ভোট দিতে বেরোবে না। যখন পুলিশ নিয়ে বাড়ি যাবেন, ভাল করে ছবিগুলো তুলে রাখবেন। আর কিচ্ছু বলবেন না।”
কমিশনের উদ্দেশে মমতার তোপ এই প্রথমবার নয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে রাজ্য পুলিশকে নিয়েও একের পর এক বিরুদ্ধ মন্তব্য মমতা গাইছেন, তা শাসকদলের জন্য মোটেই ইতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে না বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একটা বড় অংশ মনে করছেন। যেহেতু নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পর থেকে রাজ্যের প্রশাসনিক ক্ষমতার অনেকটাই এখন নির্বাচন কমিশনের হাতে, তাই তাঁর এহেন প্রশ্নের নেপথ্যে থাকা অভিসন্ধি বুঝতে সমস্যা হচ্ছে না ওয়াকিবহাল মহলের।
আরও পড়ুন: ৯০০ কোটির স্ক্যাম! অভিষেকের বাড়িতে মাসে ৩৫-৪০ কোটি টাকা পাঠাত লালা, বিস্ফোরক দাবি বিজেপির