Maoist Activity: বদলাচ্ছে কৌশল, জঙ্গলমহল নয়, মাওবাদী হটস্পট এখন এই এলাকাগুলি…
Maoist Activities: জঙ্গলমহল নিয়ে যখন গোয়েন্দারা বেশ নিশ্চিন্ত, তখন কৌশল বদলে নিঃশব্দে দক্ষিণবঙ্গের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বেশ কিছু এলাকায় সংগঠন তৈরি করেছে সিপিআই (মাওবাদী) দল। টের পাননি গোয়েন্দারা। সম্প্রতি অসমে এক শীর্ষ মাওবাদী নেতার গ্রেফতারের পর এই তথ্য হাতে পেয়েছে এনআইএ।
সি জা র ম ণ্ড ল
জঙ্গলমহল নয়। রাজ্যের মাওবাদী হটস্পট এখন নদিয়া, মুর্শিদাবাদ এবং উত্তর ২৪ পরগনার একাংশ! শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও, এটাই বাস্তব। গত কয়েকবছরে গোয়েন্দাদের চোখে ফাঁকি দিয়ে নতুন করে ডালপালা মেলছে লাল গেরিলারা। তৈরি হচ্ছে গ্রাম ভিত্তিক গেরিলা জ়োন। আর এই নিয়েই কপালে কিছুটা চিন্তার ভাঁজ গোয়েন্দাদের। কিষেনজির মৃত্যুর পর থেকেই শক্তিক্ষয় হয় এ রাজ্য়ের মাওবাদী সংগঠনের। কিন্তু তারপরেও যাতে মাওবাদী গেরিলারা ফিরতে না পারে, তার জন্য কড়া নজরদারি রেখেছেন গোয়েন্দারা। নজরদারি মূলত জঙ্গলমহল এলাকাতে। যৌথ বাহিনীর নিয়মিত টহল, নজরদারির মধ্যে গত এক দশকে মাওবাদীরা খুব একটা দাঁত ফোটাতে পারেনি এই এলাকায়।
জঙ্গলমহল নিয়ে যখন গোয়েন্দারা বেশ নিশ্চিন্ত, তখন কৌশল বদলে নিঃশব্দে দক্ষিণবঙ্গের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বেশ কিছু এলাকায় সংগঠন তৈরি করেছে সিপিআই (মাওবাদী) দল। টের পাননি গোয়েন্দারা। সম্প্রতি অসমে এক শীর্ষ মাওবাদী নেতার গ্রেফতারের পর এই তথ্য হাতে পেয়েছে এনআইএ। গোয়েন্দাদের নজর এড়াতে সাংগঠনিক পর্যায়ে রদবদল ছাড়াও কৌশল বদলেছে রেড ব্রিগেড। শক্তি বাড়াতে কৌশলে কী বদল করেছে মাওবাদীরা? দেখে নেওয়া যাক এক নজরে।
মাওবাদীদের কৌশল বদল
- পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি ভেঙে দু’টি আলাদা কমিটি গঠন
- দক্ষিণবঙ্গে দলের দায়িত্বে সব্যসাচী গোস্বামী ওরফে কিশোর
- ভেঙে যাওয়া ভাগিরথী-তিস্তা রিজিওনাল কমিটির পুনর্গঠন
- নদিয়া-মুর্শিদাবাদ এবং উত্তর ২৪ পরগনার শিল্পাঞ্চলে সংগঠন বিস্তার
- এনআরসি এবং সিএএ বিরোধী আন্দোলনে শামিল হয়ে জনভিত্তি তৈরি করা
- দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তর-পূর্ব ভারত পর্যন্ত করিডর
এই বছর মার্চ মাসে অসমের কাছাড় জেলার উদারবন্ধের একটি চা বাগান থেকে গ্রেফতার হন মাওবাদী কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা অরুণ ভট্টাচার্য এবং তাঁর সঙ্গী আকাশ ওঁরাও। সত্তরোর্ধ অরুণ ওরফে কাঞ্চনদা আদতে হাওড়ার শিবপুরের বাসিন্দা। তিনি আগে ঝাড়খণ্ডে সংগঠনের দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৯ সালে তাঁকে পাঠানো হয় অসমের সংগঠনের দায়িত্বে।
গণপথির হাত থেকে দলের দায়িত্ব পাওয়ার পরেই সংগঠনের একাধিক রদবদল করেন বাসব রাজ। পূর্ব ভারতের দায়িত্ব দেওয়া হয় রণজিৎ বোসকে। এ রাজ্য থেকে সব্যসাচী গোস্বামী, জাকির হুসেনের মত একাধিক মাওবাদী নেতাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা দেওয়া হয়। সব্যসাচী এবং জাকিরকে বাংলার সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে জোর দেওয়া হয় উত্তর পূর্ব ভারতের সঙ্গে বাংলার করিডোর তৈরির। অন্যদিকে অসমে সংগঠন বিস্তারের জন্য কাঞ্চনদাকে সাহায্য করতে এ রাজ্য থেকে পাঠানো হয় মাওবাদী নেত্রী নির্মলা বিশ্বাসকে। নদিয়ার মদনপুরের বাসিন্দা নির্মলা সম্পর্কে মাওবাদী নেতা গৌর চক্রবর্তীর শ্যালিকা। বাংলা এবং অসমের মধ্যে সমন্বয় রাখতে বাড়তি দায়িত্ব পান কিশোর এবং নির্মলার স্বামী সূর্য।
এখন প্রশ্ন, কে এই সব্যসাচী গোস্বামী ওরফে কিশোর? কিশোর ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের আগরপাড়ার বাসিন্দা। বয়স ৫৬। শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ছাত্র জীবনে নকশাল নেতা সন্তোষ রানার দলের সক্রিয় কর্মী, পরে যোগ দেন পিডাব্লিউজিতে। মূলত তাত্বিক নেতা হিসেবে পরিচিত। ২০১৩ সালে যাদবপুর থেকে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। পরে জামিন পেয়ে ফের আন্ডারগ্রাউন্ড। এরপর ২০১৮ সালে গোয়ালতোর থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। জামিন পেয়ে ফের গায়েব হয়ে যান। ২০২১ সালে অসমের গোলাঘাট জেলায় আবার গ্রেফতার হন, কিন্তু তখন পুলিশ তাঁর আসল পরিচয় বুঝতে পারেনি। এখন এনআইএ কিশোরের মাথার দাম রেখেছে ১০ লাখ টাকা।
এন আই এ গোয়েন্দাদের দাবি অরুনের সঙ্গী আকাশ ওরাওঁকে জেরা করে মিলেছে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। আকাশ অসম থেকে এসে নদিয়াতে ছিলেন প্রায় একমাস। সেই সময়ে আকাশের সঙ্গে বৈঠক হয় এ রাজ্যের বেশ কিছু মাওবাদী নেতার। আকাশের কাছ থেকেই অসম পুলিশ এবং এনএইএ কিশোর এবং জাকিরের নাম জানতে পারে।
গোয়েন্দাদের কাছে আকাশ দাবি করেছে, বাংলা থেকে গত এক বছরে কমপক্ষে ২০-২২ জন মাওবাদী ক্যাডার উত্তর পূর্ব ভারতে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছে। অসমে মাওবাদী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে মণিপুরের কেসিপি এবং পিএলএ-র মত জঙ্গি সংগঠনের। তাদের কাছেই প্রশিক্ষণ নিয়েছে এ রাজ্যের মাওবাদীরা। আকাশের দেওয়া সূত্র ধরেই কলকাতা পুলিসের এসটিএফ নদিয়া থেকে গ্রেফতার করে জয়িতা দাসকে। নন্দীগ্রাম এবং লালগড় আন্দোলনের সময় সক্রিয় ছিলেন জয়িতা। পুলিশের দাবি, জয়িতা বর্তমানে মাওবাদী রাজ্য কমিটির সদস্য। যদিও ভিন রাজ্যে প্রশিক্ষণ নিয়ে এখনও জয়িতার কাছ থেকে কোনও তথ্য আদায় করতে পারেনি পুলিশ।
এদিকে আকাশ গ্রেফতার হতেই ফেরার অসম এবং বাংলার সংগঠনের নেতারা। আকাশের কাছ থেকে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদের বেশ কিছু সীমান্তবর্তী গ্রামে গেরিলা জ়োন তৈরি করছে মাওবাদীরা। এনআরসি এবং সিএএ বিরোধী আন্দোলনে এই সমস্ত এলাকায় সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন মাওবাদীরা। ওই প্রতিবাদে শামিল হয়ে সীমান্তবর্তী এলাকাতে তৈরি করেছেন জনবিত্তি।
অসমের আকাশকে জেরা করে মাওবাদীদের নয়া কৌশলের হদিস পেয়েছেন গোয়েন্দারা। কিন্তু সেই সংগঠনের শিকড় কতদূর সেটা এখনও অজানা গোয়েন্দাদের। এমনিতেই, নদিয়া, মুর্শিদাবাদের সীমান্তবর্তী এলাকা গোয়েন্দাদের মাথা ব্যথার কারণ। সেখানে মাওবাদী যোগ আরও চিন্তা বাড়িয়েছে রাজ্য প্রশাসন। তাই কিশোর এবং সঙ্গীদের ধরতে মরিয়া এনআইএ থেকে এসটিএফ সবাই।