স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা আছে তবে বেড নেই, কোথাও বেড আছে সুবিধা নেই! কলকাতার একাধিক হাসপাতালের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ
স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে সরকার যে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে তার সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতি একেবারেই আলাদা, বলছে এক রোগী পরিবার
বারাসত: স্বাস্থ্যসাখীর কার্ড নিতে না চাইলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিলের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তা সত্ত্বেও কলকাতার একাধিক বেসরকারি হাসপাতালের রোগী ফেরানোর অভিযোগ তুলল বারাসতের এক পরিবার। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও হয়রানির অভিযোগ উঠল উত্তর ও মধ্য কলকাতার একাধিক হাসপাতালের বিরুদ্ধে।
কোথাও স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা আছে তো বেড নেই। কোথাও বেড আছে কিন্তু স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা নেই। এমনই অভিযোগ তুলেছেন বারাসতের নবপল্লির বাসিন্দা অঞ্জন দত্ত। জানা গিয়েছে, বারাসতের নবপল্লির বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব অঞ্জনা দত্ত বাড়িতে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। এক-দু’বার বমিও হয়। রোগীর পরিচিতদের মুখে বৃদ্ধার শারীরিক অবস্থার কথা শুনে পারিবারিক চিকিৎসকেরা অনুমান করেন, ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন তিনি। স্নায়ুরোগের চিকিৎসা পরিষেবা রয়েছে এমন হাসপাতালে অবিলম্বে অঞ্জনাদেবীকে ভর্তি করার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। পরামর্শ মেনে দ্রুত তাঁকে নিয়ে স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে যায় পরিবার। কিন্তু রোগীকে নিয়ে একের পর এক হাসপাতালে ঘুরে তীক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হল তাঁদের। পরিষেবা না পেয়ে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে রোগীর পরিবার।
ঠিক কী ঘটেছে? এদিন সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ বারাসতের একটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রথমে বৃদ্ধাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে স্নায়ুরোগের চিকিৎসার সুবিধা না থাকায় রোগীকে বারাসতের আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান রোগী পরিজনেরা। কিন্তু সেখানেও পরিষেবা নেই বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। এদিকে সময় গড়াচ্ছিল। অঞ্জনা দেবীকে নিয়ে দ্রুত কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালের দিকে রওনা দেয় পরিবার। স্নায়ুরোগের পরিষেবাযুক্ত উল্টোডাঙার বেসরকারি হাসপাতালে পৌঁছন তাঁরা। তখন রোগীর অবস্থা বেশ সঙ্কটজনক। রোগীর পরিজনের অভিযোগ, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেখালে প্রথমেই তা প্রত্যাখ্যান করে দেয় হাসপাতাল কতৃপক্ষ। পরিবর্তে তৎক্ষণাৎ নগদ ৫০ হাজার টাকা জমা করতে বলা হয়। সেই সময় রোগীর স্বামী অঞ্জনবাবুর কাছে হাজার ১৫ টাকা ছিল। তিনি সেটা জমা করে স্ত্রীর দ্রুত চিকিৎসা করতে অনুরোধ করেন।
আরও পড়ুন: ভীমের দু’লাখি অপারেশনের জন্য ২ ঘণ্টায় মিলল স্বাস্থ্যসাথী কার্ড
কিন্তু হাসপাতালের তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয় অন্তত ২০ হাজার টাকা জমা না করলে রোগীকে ভর্তি করা যাবে না। অভিযোগ, সঙ্কটাপন্ন রোগীকে নিয়ে এরপর ছ’ঘণ্টা এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘোরেন পরিজনরা। অবশেষে বাগুইআটির একটি নার্সিংহোমে স্ত্রীকে ভর্তি করান অঞ্জন দত্ত। তবে সেখানেও ধাক্কা। সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোমও জানিয়ে দেয় তারা স্বাস্থ্যসাথীর তালিকাভুক্ত নয়। কোথাও আর সময় নষ্ট না করে সেখানেই রোগীকে ভর্তি করতে বাধ্য হয় পরিবার।
কিন্তু সারাদিন এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরে রোগীর পরিবারের অভিযোগ, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে সরকার যে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে তার সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতি একেবারেই আলাদা। এদিকে এনিয়ে উল্টোডাঙার বেসরকারি হাসপাতালের যোগাযোগ করলে তারা অভিযোগ অস্বীকার করে। ঘটনার কথা জেনে স্বাস্থ্য ভবন থেকে ফোন করা হয় ওই হাসপাতালকে। তখন সুর বদল করে কর্তৃপক্ষের দাবি, রোগীর পরিজনেরা স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেখাননি। কার্ড দেখালে আশঙ্কাজনক রোগীকে তাঁরা কোনওভাবেই ফেরাতেন না।