‘খোলা জায়গায় দৃষ্টিকটু অবস্থায় দেখলেই বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলব’, ভালবাসার দিনে শহর জুড়ে লিফলেট

শিল্পীরা বলছেন, 'শহর জুড়ে যেন প্রেমের মরসুম...' আজ সত্যিই প্রেমদিবস। আজ নয়, বাকি ৩৬৪ দিনই প্রেমের দিন, বলেন প্রেমিক মানুষরাই।

'খোলা জায়গায় দৃষ্টিকটু অবস্থায় দেখলেই বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলব', ভালবাসার দিনে শহর জুড়ে লিফলেট
অলঙ্করণ: তুহিন সেন
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 14, 2021 | 9:28 PM

কলকাতা: আজ ভালবাসার দিন, আর আগামী পরশু সরস্বতী পুজো, বাঙালির ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ যাকে বলে আর কী! ভালবাসার মরসুমে এখন উষ্ণতার আমেজ। কিন্তু তাতে অন্য মাত্রা দিল একটা ছোট্ট লিফলেট।

ভালবাসার দিনে খোলা জায়গায় কোনও যুগলকে যাতে দেখতে না পাওয়া যায়। দৃষ্টিকটু অবস্থায় দেখা গেলেই তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে আলোচনা করা হবে, প্রয়োজনে বিয়ের ব্যবস্থাও করা হবে। ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’র সকালে শহরের বিভিন্ন জায়গায় পড়ল লিফলেট! না কোনও কমিডি সিনেমার পোস্টার নয়। আদতেই একটি লিফলেট আর তাতে একটি নির্দিষ্ট দলের নাম। স্বাভাবিকভাবেই ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ভালবাসার পাশাপাশি চড়ল রাজনীতির পারদও।

শিল্পীরা বলছেন, ‘শহর জুড়ে যেন প্রেমের মরসুম…’ আজ সত্যিই প্রেমদিবস। আজ নয়, বাকি ৩৬৪ দিনই প্রেমের দিন, বলেন প্রেমিক মানুষরাই। তবে বাংলার প্রেমে বলা ভালো, কৈশোর, যৌবনের প্রেমেও যেন অবাঞ্চিত লোমের মত জুড়ে যাচ্ছে রাজনীতির তকমা লাগানো কিছু কটূক্তি। মানুষ খুবই বিরক্ত তাতে, বলছেন বিশেষজ্ঞরাই।

অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী বলেন, “বাকরুদ্ধ। লোকজন পাল্টে যাচ্ছে। মানসিকতা পাল্টে যাচ্ছে। দাদাগিরি একই আছে। দাদাগিরি আগে ছিল না এমন নয়, দাদাগিরি ভবিষ্যতে থাকবে না, এমনও নয়। কিন্তু দাদাগিরির অস্ত্র পাল্টে যাচ্ছে। এ সব দেখে বিরক্ত হচ্ছি।”

অভিনেতা ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘এত সব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটছে চারিপাশে সেখানে এই ঘটনা খুবই অকিঞ্চিৎকর। এই ধরনের দল এ রকম মন্তব্য, ভয় আগেও দেখিয়েছে। এ নিয়ে মাথা ঘামানোর কোনও প্রয়োজন নেই। এটাকে ইগনোর করাই ভাল। সারা পৃথিবীটাই ভালবাসার। তাই এই নিয়ে আমি এর থেকে বেশি কিছু বলতে চাইছি না।’

বাংলায় এই ধরনের পোস্টার শেষ কবে পড়েছিল বা আদৌ পড়েছিল কিনা, তা স্মৃতি হাতড়েও মনে করতে পারছেন না রাজনীতির কুশীলবরা। একটা পোস্টার ঘিরে নিখাদ ভালোবাসার দিনেও লাগল রাজনীতির রঙ। কারণ একটি বিশেষ দলের প্রতীক আর নাম লেখা রয়েছে তাতে।

অভিনেতা তথা অধুনা বিজেপি নেতা রুদ্রনীল ঘোষের কথায়, এই বিষয়ে বাংলার বজরং দল ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বলতে পারবে, যে এটা তাঁদেরই দাবি কিনা। কেউ মিথ্যে প্রচার করে তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারে বলেও মনে করেন রুদ্রনীল।

এদিকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মুখপাত্র সৌরস মুখোপাধ্যায় বলছেন, “লিফলেটটা না দেখে কিছু বলা ঠিক হবে না। কারা এটা করল, তা তদন্ত করে দেখা হবে। তবে আমরা এসবের পরিপন্থী ঠিকই, তবে এই ধরনের লিফলেট কারা দিল, দেখতে হবে।”

অন্যদিকে, বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু বলেন, “এটা সম্পূর্ণ ফেক। আমরা এর বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেব।”

এই লিফলেট ঘিরেই বিতর্ক

তবে তাতে কী থেমে থাকবে রাজনীতি। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য সুর চড়িয়েছেন। বললেন, “এই কালচারটা এতদিন উত্তরপ্রদেশ বিহারে দেখতাম। বাংলায় নিশ্চিন্তে মানুষ প্রিয় জনের হাত ধরে হাঁটত। আমরা কি আবার পিছিয়ে পড়ব নাকি এগিয়ে যাব? প্রধানমন্ত্রী যেখানে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন, সেখানে তারই সাঙ্গপাঙ্গরা এসব করে বেড়াচ্ছে। তাহলে কি প্রধানমন্ত্রীর ওসব মুখোশ?”

আরও পড়ুন: ‘তৃণমূল পরিবারে যদি একজনও অপমানিত, লাঞ্ছিত, অত্যাচারিত থাকে, তাহলে সেটা আমি’, বিস্ফোরক কুণাল

তবে প্রেমিক মনস্ক মানুষগুলো বলছেন, একটা লিফলেটের কী-ই বা ক্যারিশ্মমা। প্রেম তো হবেই, আর এই ফ্রেব্রুয়ারিতে বাঙালি থাকবে প্রেমে মজেই।