AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Anubrata Mondal: মাছ বিক্রি করতে করতে ‘কেষ্ট’ যে ভাবে হয়ে উঠলেন বীরভূমের ‘বেতাজ বাদশা’!

Anubrata Mondal: তীব্র বাম বিরোধিতা থেকেই রাজনীতি শুরু অনুব্রতর। তাঁর প্রভাবের কথা পৌঁছে গিয়েছিল আলিমুদ্দিনেও। বিমান বসুও জানতেন কেষ্টর দাপট।

Anubrata Mondal: মাছ বিক্রি করতে করতে ‘কেষ্ট’ যে ভাবে হয়ে উঠলেন বীরভূমের ‘বেতাজ বাদশা’!
প্রতীকী ছবি
| Edited By: | Updated on: Aug 11, 2022 | 12:38 PM
Share

‘দোর্দণ্ড প্রতাপ’, ‘বেতাজ বাদশা’… এমনই সব বিশেষণ ব্যবহার করা হয় অনুব্রত মণ্ডলের জন্য। তিনি বিধায়ক নন, সাংসদ নন, শহুরে রাজনীতিতে সাংবাদিক বৈঠক করা নেতাও নন। একটা নির্দিষ্ট জেলায় রাজনীতি করা একজন মানুষ, অথচ এক ডাকে তাঁকে চেনে সবাই। বাংলার সাম্প্রতিক রাজনীতিতে সর্বাধিক চর্চিত নেতার তালিকায় অনুব্রত মণ্ডলের নাম থাকতেই হবে! তাঁর সম্পত্তির হিসেব-নিকেশ তদন্তসাপেক্ষ, কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক প্রভাব প্রশ্নাতীত।

এক সময় মাছ বিক্রি করতেন!

বীরভূমের হাটশেরান্দি গ্রামের ছেলে অনুব্রত মণ্ডল। সাধারণ পরিবার, আর্থিকভাবেও তেমন সচ্ছল ছিল না বলেই শোনা যায়। পরিচিতরা বলেন, তিনি নাকি টাকা ধার করে চলতেন। বর্তমানে সিবিআই সূত্রে তাঁর যে সম্পত্তির হিসেব সামনে আসছে, তা শুনলে এ সব অলিক বলেই মনে হবে। জানা যায়, প্রথম জীবনে মাছ বিক্রি করতেন তিনি। তবে সে সব অতীত এখন। গ্রামের বাড়িতে যান পুজোর সময়। বর্তমানে তিনি থাকেন বোলপুরের নীচুপট্টিতে।

চূড়ান্ত বাম-বিরোধিতাই তাঁকে এনে ফেলেছিল রাজনীতিতে?

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সিপিএমের সঙ্গে পারিবারিক বিবাদ ছিল চরম। জমি নিয়ে সমস্যার কারণেই বাম বিরোধী হয়ে উঠেছিলেন তিনি। সেই সময় বামেদের দাপট তুঙ্গে। রামচন্দ্র ডোম, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মতো রাজনীতিকরা তখন বীরভূমের জনপ্রতিনিধি। লালমাটির জেলায় তখন বামেদের ঠেকায় কার সাধ্য! অন্যদিকে, বীরভূমে রাজনীতি না করলেও জাতীয় রাজনীতিতে বীরভূমের কীর্ণাহারের সন্তান প্রণব মুখোপাধ্যায়ের উত্থান কংগ্রেসের একাংশকে উজ্জ্বীবিত করেছিল। জানা যায়, সেই সময়েই বাম বিরোধী মনোভাব নিয়ে কংগ্রেসে নাম লেখান অনুব্রত। সদ্য প্রয়াত চিকিৎসক সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই রাজনীতিতে পা রেখেছিলেন অনুব্রত।

বিধায়ক বা সাংসদ নন, তবু কেষ্টর নাম জানতেন বিমান বসুও

প্রথমে কংগ্রেস করতেন ও পরে তৃণমূল। বর্তমানে তৃণমূলের জেলা সভাপতি। এটুকুই তাঁর পরিচয়। অথচ অনেক মন্ত্রীর তুলনায় অধিক চর্চিত অনুব্রত। তাঁর মন্তব্য হয়ে যায় শিরোনাম। তৃণমূল আমলে তাঁর প্রতিপত্তি বেড়েছে ঠিকই, তবে বাম আমলে তাঁর উত্থানের কথা জানতেন অনেকেই। বাম নেতা বিমান বসুও জানতেন অনুব্রতর নাম। একসময় আলিমুদ্দিনে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেছিলেন, ‘বীরভূমে তো তৃণমূলের অনুব্রত আছে।’

রাজনীতির কারবারিরা মনে করেন, প্রশাসনিক ক্ষমতা নেই, তবে সংগঠনটা কার্যত নিয়ন্ত্রণ করেন কেষ্টই।

মুকুলের আস্থাভাজন, বরাবরই কালীঘাটের সুনজরে

তাঁর বিরুদ্ধে এত অভিযোগ, তাঁকে নিয়ে এত বিতর্ক, তবু তাঁর ক্ষমতা কমেনি কখনই। সম্প্রতি বগটুই গণহত্যার পরও তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুব্রতকে পাশে নিয়েই গিয়েছিলেন সেই গ্রামে। সাম্প্রতিক রদবদলে অনেক জেলা সভাপতিকে সরানো হয়েছে। কিন্তু কেষ্টর ক্ষেত্রে তেমন কোনও প্রভাব পড়েনি।

রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করে, নেত্রীর সুনজরেই বরাবরই রয়েছেন অনুব্রত। শীর্ষ নেতৃত্বের তাঁর প্রতি আস্থা নতুন নয়। মুকুল রায় যখন তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড, সেই সময় মুকুলের ভরসার জায়গা ছিলেন অনুব্রত। শোনা যায়, বরাবরই মুকুল-ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। সেই সূত্রে নেত্রীর নজরে চলে এসেছিলেন অনুব্রত। আরও পিছনে তাকালে জানা যায়, কংগ্রেস করার সময় চিকিৎসক সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নেত্রীর সুসম্পর্ক ছিল। আর সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই রাজনীতি শুরু করেছেন অনুব্রত।

তাঁর সঙ্গীরা আজ কেউ বিধায়ক, কেউ মন্ত্রী…তিনি কি ক্ষমতা চাননি?

তিনি কখনও প্রশাসনিক পদে বসেননি, নির্বাচনও লড়েননি। কিন্তু যাঁরা তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলে পরিচিত তাঁদের মধ্যে অনেকেই আজ মন্ত্রী বা বিধায়ক। বোলপুরের বিধায়ক চন্দ্রনাথ সিনহা, সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায় চৌধুরী প্রমুখ তাঁর একসময়ের সঙ্গী। সম্ভবত তিনি কখনও চাননি মন্ত্রী বা বিধায়কর পদ। বাংলার রাজনীতির অন্দরে কান পাতলে শোনা যায়, কে প্রার্থী হবেন, সেটাও নাকি ঠিক করে দেন অনুব্রত। কেউ কেউ বলেন, যিনি এ সবের নিয়ন্ত্রক, তিনি নিজের মন্ত্রী হতে চাইবেন কেন?

তবে সংগঠনের কাজ দক্ষ হাতে সামলান তিনি। ব্লক স্তর থেকে শুরু করে জেলার নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে নিজে হাতেই সামলান সবকিছু।