Primary Teachers: সুপ্রিম স্থগিতাদেশ নিয়ে কী বলছেন ‘চাকরিহারা’ শিক্ষকরা, কী ভাবছেন আন্দোলনকারীরা
Primary Teachers: গত কয়েক মাস থেকে যে দুশ্চিন্তার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে তাঁদের, সে সব কথা যেন বার বার ফুটে উঠল উজ্জয়িনীর মুখে। শুধু তো নিজের চাকরির দুশ্চিন্তাই নয়, তার সঙ্গে ছিল আরও অনেকের বাঁকা মন্তব্য, টিপ্পনি।
কলকাতা: কিছুই কোথাও যদি নেই, তবু তো ক’জন আছি বাকি, আয় আরও হাতে হাত রেখে, আয় আরও বেঁধে বেঁধে থাকি… সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর কবি শঙ্খ ঘোষের এই কবিতার এই অংশটুকু যেন আজ বার বার ঘুরে ফিরে আসছে ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের মনে। হাইকোর্টের একক বেঞ্চ হয়ে, ডিভিশন বেঞ্চ হয়ে ‘সুপ্রিম’ দুয়ারে গিয়েছে তাঁদের মামলা। নিষ্পত্তি এখনও হয়নি। তবে শীর্ষ আদালত তাঁদের নতুন করে ইন্টারভিউয়ের নির্দেশের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়ে দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের এই অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশকে ‘ন্যায়ের জয়’ হিসেবেই দেখছেন তাঁরা।
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের একক বেঞ্চ থেকে প্রথম নির্দেশ এসেছিল। বিচারপতির কলমের এক খোঁচায় অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গিয়েছিল ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরির ভবিষ্যৎ। তারপর হাইকোর্টের বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েও বিশেষ সুরাহা করতে পারেননি শিক্ষকরা। সেই ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকদের তালিকায় রয়েছেন উজ্জয়িনী সাঁতরাও। তাঁরও কর্মজীবনের উপর এক কালো মেঘ নেমে এসেছিল হঠাৎ করে। আজ শীর্ষ আদালতের নির্দেশের পর বুকে অনেকটা বল পাচ্ছেন তিনি। বলছেন, ‘আজকের দিনটা ৩২ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছে চিরদিনের জন্য গাঁথা হয়ে থাকবে। এই জয় ন্যায়ের জয়।’
গত কয়েক মাস থেকে যে দুশ্চিন্তার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে তাঁদের, সে সব কথা যেন বার বার ফুটে উঠল উজ্জয়িনীর মুখে। শুধু তো নিজের চাকরির দুশ্চিন্তাই নয়, তার সঙ্গে ছিল আরও অনেকের বাঁকা মন্তব্য, টিপ্পনি। উজ্জয়িনী বলছেন, সেই ‘সামাজিক অন্যায়ের’ বিরুদ্ধে তাঁদের জয় এসেছে আজ ‘সুপ্রিম’ স্থগিতাদেশে। গত কয়েক মাসের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বললেন, ‘চারিদিকে আমাদের নিয়ে চর্চা, আমরা অযোগ্য, আমারা নাকি সঠিক পদ্ধতিতে শিক্ষকতা করছি না… এমন অনেক অন্যায় বাক্যবাণ আমাদের প্রতিমুহূর্তে শুনতে হয়েছে। আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি, আমরা ন্যায়ের পথে রয়েছি।’
তবে লড়াই যে এখনও শেষ হয়নি, সেই কথাও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন ওই শিক্ষিকা। বলছেন, লড়াই তো এখনও অনেক বাকি। কিন্তু যতটুকু লড়াই করতে পেরেছি, যতটুকু জয় আনতে পেরেছি, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আমরা আরও একসঙ্গে বেঁধে বেঁধে থাকব। ৩২ হাজার সংখ্যাটা কম নয়, আমরা একটা পরিবার।’ আজকের এই স্থগিতাদেশ জয়ের সূচনা মাত্র, বলছেন উজ্জয়িনী।
আর যাঁরা ‘হকের চাকরির’ দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন? যাঁরা রাস্তার ধারে দিনের পর দিন বসে রয়েছেন। ধরনা দিয়ে যাচ্ছেন। ঘর-বাড়ি-পরিবার সব ছেড়ে রাস্তায় বসে রয়েছেন… তাঁরা কীভাবে দেখছেন আজ সুপ্রিম কোর্টের এই স্থগিতাদেশ? টেট আন্দোলনকারীদের অন্যতম পরিচিত মুখ অর্ণব দাস বলছেন, এই স্থগিতাদেশের পর তাঁরা একেবারেই ভেঙে পড়ছেন না। বলছেন, ‘এই স্থগিতাদেশে দিশা হারানোর কিছু নেই। আপাতত স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে, এটা বিচারব্যবস্থার একটা প্রক্রিয়া।’ তবে একই সঙ্গে অর্ণব এও বলছেন, ‘এই ৩২ হাজারের মধ্যে সকলেই যে দুর্নীতিগ্রস্ত, তা আমরা বলছি না। কখনও বলিনি। তবে যাঁরা দুর্নীতিগ্রস্ত, তাঁদের চাকরি যাক। সেটা ভবিষ্যতে রায় এলে প্রমাণিত হবে।’
৩২ হাজার শিক্ষকদের পক্ষে মামলা লড়ছেন বর্ষীয়ান আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, হাইকোর্টের একক বেঞ্চ ও ডিভিশন বেঞ্চ যে নির্দেশ দিয়েছিল, তাতে বলা হয়েছিল ১০ হাজার ছেলের আবার ইন্টারভিউ নিতে হবে। তারপর সিলেকশন করতে হবে। সেই অর্ডারের পার্টটি সুপ্রিম কোর্ট আজ ডিলিট করে দিয়েছে। তাঁর ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে কল্যাণ হাইকোর্টের অতীতের নির্দেশ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এভাবে অন্যায় অবিচার কখনও হয়নি বোধ হয়। ৩৬ হাজার জনের চাকরি চলে যাচ্ছে বিনা শুনানিতে… এটা তো বিনা বিচারে ফাঁসি (ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট)। একটা লোক জানলই না কী হয়েছে, তাঁকে ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট দেওয়া হচ্ছে।’