স্বাস্থ্যসাথী যাতে ‘ফ্লপ’ না হয়, সরকারের কাছে ৩ শর্ত বেসরকারি হাসপাতালগুলির

প্রত্যাশা পূরণে সম্মতি আদায়ের বৈঠকে বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধিরা মূলত তিনটি শর্ত পূরণের কথা বলেছেন বলে খবর।

স্বাস্থ্যসাথী যাতে 'ফ্লপ' না হয়, সরকারের কাছে ৩ শর্ত বেসরকারি হাসপাতালগুলির
ফাইল ছবি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 28, 2020 | 9:56 PM

সৌরভ দত্ত: বীরভূমের প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে একের পর এক প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করছেন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বাস্থ্যসাথীর (Swasthya Sathi) পরিসংখ্যানে চোখ পড়তেই মুখ্যসচিব বলে উঠলেন, “দিস হ্যাজ় বিকাম সুপারহিট অ্যাকচুয়ালি!” ঘটনাচক্রে মুখ্যসচিব যখন এ কথা বলছেন, ঠিক তখনই স্বাস্থ্যভবনে সেই ‘সুপারহিট’ প্রকল্প যাতে ‘ফ্লপ’ না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য বেসরকারি হাসপাতালের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন দফতরের সচিব সঞ্জয় বনশল এবং স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী। প্রত্যাশা পূরণে সম্মতি আদায়ের বৈঠকে বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধিরা মূলত তিনটি শর্ত পূরণের কথা বলেছেন বলে খবর।

স্বাস্থ্য ভবনের ‘ইনস্টিটিউট অব হেলথ অ্যান্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ারে’র প্রেক্ষাগৃহে এদিন দুপুরে প্রথমে নার্সিংহোম এবং পরে বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাব্যক্তিরা। বৈঠকে উপস্থিত বেসরকারি হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমের প্রতিনিধিদের একাংশ জানান, রাজ্যের প্রতিটি পরিবারে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। প্রশাসনিক বৈঠকে স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “প্রত্যাশা হচ্ছে রাজ্যের দশ কোটি মানুষের দশ কোটি মানুষই স্বাস্থ্যসাথী কার্ড পাবেন। স্বাস্থ্যসাথী যাতে সকল পরিবার পায় সে জন্য কাজের গতি আরও একটু বাড়াও। ছোটখাটো ভুল যেন দেখা না হয়। টাইম ইজ রানিং আউট।”

বস্তুত, মুখ্যমন্ত্রীর এই মনোভাবই এদিনের বৈঠকে বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধিদের কাছে তুলে ধরেছেন স্বাস্থ্যভবনের কর্তাব্যক্তিরা। যার প্রেক্ষিতে বিপুল সংখ্যক মানুষকে পরিষেবা দিতে গেলে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে বিভিন্ন চিকিৎসার যে খরচ বেঁধে দেওয়া হয়েছে, তা বাড়ানোর কথা বলেন বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধিরা। কী পদ্ধতিতে পরিষেবা দেওয়া হবে, তার একটি রূপরেখা তৈরির পাশাপাশি স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় বছরে কতজনকে পরিষেবা দেওয়া হবে, তাও নির্দিষ্ট করার কথা বলছেন বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধিদের একাংশ। সর্বোপরি স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে পরিষেবা দেওয়ার পরে খুব বেশিদিন যাতে টাকা আটকে না রাখা হয়, সেই দাবিও রয়েছে।

এই বক্তব্যের কারণ হল স্বাস্থ্যসাথীর পরিসংখ্যান। প্রশাসনিক বৈঠকে সবার জন্য স্বাস্থ্যসাথীকে ‘সুপারহিট’ আখ্যা দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে মুখ্যসচিব জানান, ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচির মাধ্যমে এ পর্যন্ত স্বাস্থ্যসাথীর জন্য ৯৭ লক্ষের বেশি মানুষ খোঁজ নিয়েছেন। ৫৩ লক্ষ মানুষ কার্ড চেয়ে আবেদন করেছেন। সেই পরিসংখ্যানে সংশোধনী এনে স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম জানান, রবিবার পর্যন্ত আবেদনের সংখ্যা ৫৩ লক্ষ থেকে বেড়ে হয়েছে ৬০ লক্ষ। দশ লক্ষ রাজ্যবাসী হাতে কার্ড পেয়েছেন। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড হাতে না পেলেও যাঁদের নাম অনুমোদিত হয়েছে, তাঁদের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর সই করা একটি চিঠি দেওয়া হচ্ছে। ঠিক যেমন আয়ুষ্মান ভারতের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সই করা পোস্টকার্ড রাজ্যবাসীর কাছে পৌঁছে গিয়েছিল।

বেসরকারি হাসপাতালগুলির বক্তব্য, রাজ্য সরকারের বেঁধে দেওয়া দরে এই বিপুল সংখ্যক মানুষকে পরিষেবা দিতে গেলে অনিবার্য আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। এ কথা বললেও, সবার জন্য স্বাস্থ্যসাথী নিয়ে এখনই আপত্তির সুর তীব্র করতে চাইছেন না বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধিরা। তাঁদের বক্তব্য, ভোট পরবর্তী পর্বে অনেক সমীকরণ বদলে যেতে পারে। তাই আপাতত সম্মতিসূচক অবস্থান নিয়েই তাঁরা চলতে চান।

আরও পড়ুন: করোনার প্রভাবে শিশুদের বিপদ বাড়াচ্ছে ‘এমআইএসসি’

প্রোগ্রেসিভ নার্সিংহোম অ্যান্ড হসপিটালস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শেখ আলহাজউদ্দিন বলেন, “স্বাস্থ্যভবনের কর্তারা বলছেন, কোনও রোগীকে যাতে ফেরানো না হয়। সে বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য চিকিৎসা সংক্রান্ত খরচের যে দর রয়েছে তা বাড়ানোর জন্য আমরা আবদার করেছিলাম। স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা আমাদের আবদার পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন।” স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে বেঁধে দেওয়া চিকিৎসার খরচ বৃদ্ধি যে আবশ্যক, সে কথা জানিয়ে পূর্বাঞ্চলের বেসরকারি হাসপাতালগুলির সংগঠনের সভাপতি রূপক বড়ুয়া জানান, প্রয়োজনে প্রকল্পের আওতাভুক্ত বিভিন্ন চিকিৎসার খরচ নির্ধারণে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তাঁর কথায়, “বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধিদের নিয়ে এই কমিটি গঠন করতে হবে না। এ ধরনের কাজে অভ্যস্ত এমন কোনও সংস্থাকে ব্যবহার করা যেতে পারে।” একই সঙ্গে বেসরকারি হাসপাতালগুলির সংগঠনের বক্তব্য, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রের পরিষেবা চেয়ে ভিড় যাতে না হয়, তা-ও যেন নিশ্চিত করে স্বাস্থ্যভবন।

আরও পড়ুন: ওকে জোর করা রাজনীতিতে ঠেলা হচ্ছে, সৌরভে ‘সাবধানী’ দিলীপ