আদিগঙ্গায় নেমে প্রতিবাদের মুখ হলুদ পোশাক পরিহিতা, জানুন কে তিনি?
'দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে আর কী বা করার থাকে', পুলিশের প্রিজন ভ্যানে ওঠার আগে চোখ মুছতে মুছতে 'কঠিন এই বাস্তবটা' শুনিয়ে গেলেন রুনু।
নাম রুনু সাহা। বর্ধমানে বাড়ি তাঁর। স্বামী নেই, দুই সন্তানকে ঘিরেই তাঁর জগৎ। সন্তানদের মুখে দু’বেলার খাবার তুলে দিতে পরিশ্রমের অন্ত নেই মায়ের। শিক্ষামিত্র হিসাবে কাজ করেনতিনি । মাসে ২ হাজার ৪০০ টাকা ভাতা, কিন্তু গত ছয় মাস ধরে সেটুকুও পাচ্ছেন না। চরম অসহায়তা ঘিরে ধরছিল রুনুকে।
আরও পড়ুন: আদিগঙ্গা সাঁতরে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির পথে পার্শ্বশিক্ষকরা, গ্রেফতার ৫
এরপরই সোমবার সোজা পৌঁছে যান কালীঘাটে। লক্ষ্য ছিল মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ। সঙ্গী আরও জনা ১২-১৩ জন। কিন্তু কড়া নিরাপত্তার বেষ্টনীতে মোড়া এই ভিভিআইপি জ়োনে যে পায়ে হেঁটে পৌঁছনো সম্ভব নয়, তা তাঁরা বুঝে গিয়েছিলেন। এরপরই ঠিক করেন আদিগঙ্গা সাঁতরে সেখানে পৌঁছবেন।
মঙ্গলবার পরিকল্পনামাফিক ১০টার কিছু পরেই আলিপুর সংশোধনাগারের কাছে পৌঁছে যান তাঁরা। প্ল্যাকার্ড হাতে জলে নামতেই শুরু হয় হইচই। পরিস্থিতি সামাল দিতে উর্দি খুলে পুলিশকে জলে নামতে হয়। কোনওমতে হাতে পায়ে ধরে তুলে আনেন প্রতিবাদীদের। সেই প্রথম নজরে আসেন রুনু সাহা। তাঁর কাছে পুলিশের কাতর আর্তি ছিল, “ম্যাডাম উঠে আসুন। উঠে এসে যা বলার বলুন।” জল থেকে উঠতে উঠতে হলুদ কুর্তি পরা মহিলা হাউ হাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়ে নজর কাড়েন গোটা বাংলার।
আরও পড়ুন: আদিগঙ্গার বিক্ষোভকারীরা ‘পার্শ্বশিক্ষক নন’, চক্রান্তের গন্ধ পাচ্ছে পার্শ্বশিক্ষক ঐক্যমঞ্চ
জল থেকে ওঠার পর রুনু বলেন, “সাত বছর ধরে সংসার ডুবে গিয়েছে। বেতন নেই, ভাতা নেই। সরকারি নির্দেশ সত্ত্বেও কাজ হচ্ছে না। এক প্রকার বাধ্য হয়েই এই প্রতিবাদ।” যদিও এর বেশি তাঁকে আর কথাই বলতে দেয়নি পুলিশ। সরিয়ে দেওয়া হয় সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরাও। কিন্তু ততক্ষণে মানুষের চোখে প়ড়ে গিয়েছে রুনুর প্রতিবাদী মুখ। ‘দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে আর কী বা করার থাকে’, পুলিশের প্রিজন ভ্যানে ওঠার আগে চোখ মুছতে মুছতে ‘কঠিন এই বাস্তবটা’ শুনিয়ে গেলেন রুনু।