Qurbani Eid: চোখের জলে ঈদ, গান্ধীমূর্তিতে চাকরিপ্রার্থীদের ‘সম্প্রীতির প্রতিবাদ’
Qurbani Eid: ৪৮৩ দিন ধরে তাঁরা ধর্নায়। ২০১৬ এসএলএসটি মেরিটলিস্টে নাম ছিল এই চাকরিপ্রার্থীদের। কিন্তু চাকরি পাননি।
সুমন মহাপাত্র
কথায় আছে ধর্ম যাঁর যাঁর উৎসব সবার। কিন্তু একের পর এক উৎসব যে রাস্তার ফুটপাথে কাটাতে হবে, তা কখনও ভাবেননি গান্ধীমূর্তির পাদদেশে অবস্থানকারী চাকরিপ্রার্থীরা। চারটে ঈদ(Qurbani Eid) তাঁদের কেটেছে এই গান্ধীমূর্তির পাদদেশে। একসঙ্গে চাকরিপ্রার্থীরা কাটিয়েছেন দূর্গাপুজোও (Durgapuja)। সব ধর্মালম্বীরা একসঙ্গে মিলেমিশে থাকেন সব উৎসবে। তাঁদের পরিচয় একটাই, তাঁরা বঞ্চিত। তবে কোরবানি ঈদে এক অদ্ভুত মূহুর্তের সঙ্গী থাকল গান্ধীমূর্তি। মুসলমান(Muslim) ধর্মালম্বী চাকরিপ্রার্থীরা নামাজ পড়লেন, আর পিছনে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে থাকলেন হিন্দু ভাই বোনেরা। চাকরিপ্রার্থীরা কাঁদতে কাঁদতে আল্লাহর কাছে দোয়া চাইলেন চাকরির জন্য।
৪৮৩ দিন ধরে তাঁরা ধর্নায়। ২০১৬ এসএলএসটি মেরিটলিস্টে নাম ছিল এই চাকরিপ্রার্থীদের। কিন্তু চাকরি পাননি। তাঁদের অভিযোগ, যোগ্য চাকরি গিয়েছে পিছিয়ে থাকা ব্যক্তিদের কাছে। আর তাঁরা থেকেছেন বঞ্চিত হয়ে। প্রেস ক্লাবের সময় ধর্নায় খোদ মুখ্যমন্ত্রী এসে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন চাকরির। তারপর কেটে গিয়েছে কয়েক বছর। গত ঈদে মুখ্যমন্ত্রী ফোনে আশ্বাস দিয়েছিলেন চাকরির। তারপরেও চাকরি জোটেনি তাঁদের। আন্দোলনকারীদের মধ্যে চাকরি পেয়েছেন সোমা দাস ও ববিতা সরকার। দুজনেই কোর্টের নির্দেশে চাকরির খাম হাতে পেয়েছেন। কিন্তু বাকিরা এখনও পড়ে সেই ফুটপাথেই। তাই উৎসবও পথের ধারে।
নামাজ পড়তে পড়তেই অনেকে কাঁদলেন। দুহাত তুলে আল্লাহর কাছে আবেদন, “যাঁদের হাতে ক্ষমতা আছে, তাঁদের অন্তর নরম করে দিন। দয়া করে চাকরি দিন।” তারপর কোলাকুলি। সেখানে কে হিন্দু, কে মুসলিম তা পরিচয় নয়, পরিচয় বঞ্চনা। গত ঈদে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির পর কেটে গিয়েছে কয়েক মাস। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়া একচুলও এগোয়নি। তাই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চাকরিপ্রার্থী ইলিয়াস বিশ্বাসের আবেদন, “একটু দেখুন যেন আর কোনও উৎসব রাস্তায় বসে না কাটাতে হয়।” পাশাপাশি তাঁর ক্ষোভ, “মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন বক্তৃতা মঞ্চে বলছেন চাকরিতে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে আদালতের জট। কিন্তু বিচারপতিও বলেছেন বিষয়টি নিয়োগের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই দ্রুত আমাদের চাকরি দেওয়া হোক।” চাকরিপ্রার্থী অভিষেক বলেন, “আমরা লক্ষ্মী পুজো, কালী পুজো, দূ্র্গা পুজো, ঈদ-সব ক্ষেত্রেই পরিবার প্রিয়জনদের ছেড়ে এখানে পালন করেছি। এটা সম্প্রীতির আবহে প্রতিবাদ। নিয়োগে বিচার বিভাগের কোনও বাধা নেই।”
হিন্দু-মুসলমান প্রত্যেকে একসঙ্গে মিলেই গান্ধীমূর্তিতে উৎসব পালন করেন। প্রিয়জনদের ছেড়ে এই উৎসব পালনকে প্রতিবাদের প্রকাশ হিসেবেই ধরেন এসএলএসটি চাকরিপ্রার্থীরা। এবারের ঈদেও সেই একই ছবি। চাকরিপ্রার্থীদের হাতে পোস্টারে লেখা, “আর কত উৎসব রাস্তায় কাটাবো আমরা?”