R G Kar: থ্রি মাস্কেটিয়ার্স! তিলোত্তমার দেহের কাছে আইনজীবী, ডেটা এন্ট্রির লোক, মোড় ঘুরে গেল ১৮০ ডিগ্রি?
R G Kar: ক্রাইম সিনে কীভাবে রয়েছেন ফরেনসিক মেডিসিনের ডেমনস্টেটর, সন্দীপ ঘোষের ছায়াসঙ্গী আর সন্দীপ ঘনিষ্ঠ আইনজীবী? প্রশ্ন উঠছে, এই যে 'থ্রি মাস্কেটিয়ার্স' তাঁরা সেখানে কীভাবে পৌঁছলেন? তাঁদেরকে কে ডেকে পাঠিয়েছিলেন? প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি সেখানে পরিকল্পনা চলছিল, কীভাবে সেখানে তথ্য প্রমাণ লোপাট করা যায়?
কলকাতা: সেমিনার রুমে পড়েছিল তিলোত্তমার দেহ। বাইরে অপেক্ষা করছিলেন তাঁর বাবা-মা। সাড়ে তিন ঘণ্টার অপেক্ষা। মেয়েকে দেখতে পাওয়ার অনুমতি মিলছিল না তাঁদের। অবশেষে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মেয়েকে দেখতে পাওয়ার অনুমতি পেয়েছিলেন তাঁরা। নির্যাতিতার মা তেমনই দাবি করেছেন আদালতে। প্লেস অফ অকারেন্সে প্রবেশ ‘নিষিদ্ধ’ ছিল সহকর্মী, সাংবাদিকদেরও। কিন্তু সেদিন সেমিনার রুমে দেখা মিলেছে ‘বহিরাগত’দের অনেকেরই। যাঁদের সে সময়ে সেখানে থাকার কথাই ছিল না। সেমিনার রুমের অন্দরের সেই ভিডিয়ো হাতে এসেছে TV9 বাংলার হাতে (সে ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি TV9 বাংলা)। তাতে যাঁদের দেখা যাচ্ছে, ঘটনার মোড় ঘুরতে পারে ভয়ঙ্কর দিকে।
যে ভিডিয়ো সামনে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, সেমিনার রুমের বাইরে শান্তনু দে-কে। তিনি আইনজীবী। স্বাস্থ্য ভবনের একাংশের মতে, এই শান্তনু দে হলেন সন্দীপ ঘোষের ছায়াসঙ্গী। কিন্তু সেখানে আইনজীবী কী করতে গিয়েছিলেন?
প্লেস অফ অকারেন্সে দেখা মিলেছে সন্দীপ ঘোষ ঘনিষ্ঠ ফরেনসিক চিকিৎসক দেবাশিস সোম
তাঁকে সোমবার নিজাম প্যালেসে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারীরা। তিনি আরজি করের কর্মীই নন। কিন্তু ঘটনার পর মুহূর্তেই সেমিনার রুমে দেখা গিয়েছে তাঁকে। দাবি স্বাস্থ্য ভবনের একাংশ। হেলফ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের ডিটেইমেন্ট পোস্টিং দেবাশিসের। তাহলে তিনি সেমিনার রুমে ঘটনার পরই কী করছিলেন?
এরপর ক্যারেক্টর থ্রি! প্রসূন চট্টোপাধ্যায়। তিনিও আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ছায়াসঙ্গী। স্বাস্থ্য ভবনের একাংশের মতে, প্রসূন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে তিনি ডেটা এন্ট্রি অপারেটর হিসাবে কাজ করেন।
ক্রাইম সিনে কীভাবে রয়েছেন ফরেনসিক মেডিসিনের ডেমনস্টেটর, সন্দীপ ঘোষের ছায়াসঙ্গী ডেটা অপারেটর আর তাঁর ঘনিষ্ঠ আইনজীবী? প্রশ্ন উঠছে, এই যে ‘থ্রি মাস্কেটিয়ার্স’ তাঁরা সেখানে কীভাবে পৌঁছলেন? তাঁদেরকে কে ডেকে পাঠিয়েছিলেন? প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি সেখানে পরিকল্পনা চলছিল, কীভাবে সেখানে তথ্য প্রমাণ লোপাট করা যায়?
TV9 বাংলা যোগাযোগ করেছিল আইনজীবী শান্তনু দে-র সঙ্গে। তাঁর যুক্তি, তিনি সেদিন অর্থোপেডিকে বহির্বিভাগে চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন। কিন্তু বহির্বিভাগের টিকিট তিনি দেখাতে পারেননি। উল্লেখ্য, সন্দীপ ঘোষও অর্থোপেডিক সার্জন।
প্লেস অফ অকারেন্সে বহিরাগতরা কীভাবে? চিকিৎসক মহলের একাংশ সরব। চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, “দেহ তড়িঘড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার থেকে শুরু করে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা। ওখানকার চিকিৎসকরাই আমাদের জানান, সেদিন সেমিনার রুমে কারা কারা এসেছিলেন, কাদের ডাকা হয়েছিল সেখানে। সন্দীপ ঘোষ সিন্ডিকেটটা চালান। আমরা সিজিও কমপ্লেক্স অভিযান চালাব, কেন তাঁদের তদন্তের আওতায় আনা হচ্ছে না।”
চিকিৎসক নেতা সজল বিশ্বাস বলেন, “সকালেই তড়িঘড়ি আমরা দেখি, শাসকদলের প্রভাবশালী চিকিৎসক নেতা হিসাবে পরিচিত, তাঁরা অকুস্থলে আসেন। এমনকি সেমিনার রুমে, যেখানে বডি পাওয়া গিয়েছিলেন, সেখানে মিটিং করে। ওই চিকিৎসক নেতারা কেউই আরজি করে কর্তব্যরত নন। স্বাস্থ্য দফতরের উচ্চ পদাধিকারীও নন। কেন তাঁরা সেখানে গিয়েছিলেন, তা তদন্তের আওতায় আনতে হবে।”
চিকিৎসক উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য “যেখানে ভাঙচুর করা হয়েছিল সংস্কারের নামে, ক্রাইম সিনে আশপাশের এলাকা ভাঙা হয়। আমরা জেনেছিলাম, উপস্থিত ইঞ্জিনিয়ররা ওয়ার্ক অর্ডার ছাড়া কাজ করতে চাননি, তবুও চাপ দিয়ে তাঁদেরকে দিয়ে কাজ করানো হয়েছে। ওইদিন পদাধিকারী যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা তদন্ত বিলম্ব করতে চেয়েছিলেন।”
আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “আমার তো আশঙ্কা ধৃত আসলে দাবার বড়ে। একজন সিভিক ভলান্টিয়র চিকিৎসককে খুন করলেন, কেউ দেখলেন না, সেটা বিশ্বাস করা কঠিন। যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, হাসপাতালের চিকিৎসকের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয় কীভাবে?”
যদিও তৃণমূল নেতা জয়প্রকাশ মজুমদারের বক্তব্য, “আমরা দেখি, পাড়ার কেউ গলায় দড়ি দিলে, প্রতিবেশীরাও ঘরে এসে দাঁড়িয়ে যায়। এটা মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি।”
আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)