ED on Saradha Scam: ৬ বছর গ্যারাজে পড়েছিল ‘সারদা’র গাড়ি, তদন্তে অবহেলা? বেজায় অখুশি ED-র সদর দফতর
ED on Saradha Scam: ইডির অন্দরে খবর, এই ঘটনার পর দিল্লি থেকে কলকাতার দফতরের কাছে সারদা, রোজভ্যালি সহ একাধিক চিটফান্ড মামলার তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।
সিজার মণ্ডল, কলকাতা: প্রায় ডজন খানেক ই মেল করা হয়েছে। ফোন করা হয়েছে অন্তত বার ২৪। কার্যত ইডি কর্তাদের হাতে পায়ে ধরতেও বাকি রাখেননি গুয়াহাটির এক বাসিন্দা। আবেদন ছিল একটাই, চিটফান্ড সংস্থা ‘সারদা’-র একটি গাড়ি তাঁর কাছে রয়েছে। ইডিকে লিখিত বয়ানেও তা জানিয়েছিলেন তিনি। ওই ব্যক্তির দাবি ছিল, ইডি যেন অবিলম্বে সেই গাড়ি বাজেয়াপ্ত করে। অবশেষে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে সেই গাড়ি। গাড়িটি বাজেয়াপ্ত করতে ইডি-র সময় লেগে গেল ২০১৬ থেকে ২০২২ পর্যন্ত, পাকা ছ’বছর। আর এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই চিটফান্ড মামলার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট অন্দরেই।
ইডি সূত্রে খবর, ঘটনার সূত্রপাত ২০১৬ সালে। তখন সারদা মামলায় পুরোদমে তদন্ত করছে ইডি। সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন উত্তর-পূর্ব ভারতে চিটফান্ডের ব্যবসা বাড়াতে গুয়াহাটিকে কেন্দ্র করে একাধিক সংবাদমাধ্যম খুলেছিলেন। তার মধ্যে ছিল একটি ইংরেজি সংবাদপত্রও।
সূত্রের খবর, ২০১৬ সালে ওই সংবাদপত্রের এক কর্তাকে কলকাতায় সমন করা হয়। গুয়াহাটির বাসিন্দা ওই ব্যক্তি ইডির কাছে তাঁর বয়ান দেন এবং জানান, সারদার ওই সংবাদপত্রে চাকরি করার সূত্রে ওই সংস্থার কেনা একটি এসইউভি গাড়ি তাঁর কাছে আছে। সেই গাড়ি যেন ইডি বাজেয়াপ্ত করে এই মর্মে আবেদনও জানান তিনি।
বারবার আবেদন করা সত্ত্বেও সেই গাড়ি পড়েছিল গুয়াহাটির এই বাসিন্দার গ্যারাজেই। ইডি-র তরফে নাকি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করার কোনও গরজই দেখা যায়নি। অবশেষে ২০২১ সালে গুয়াহাটির ওই বাসিন্দা যোগাযোগ করেন সারদা মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা এক ইডি কর্তার সঙ্গে। অফিসারের পরামর্শে গুয়াহাটিতে ইডি দফতরে যান ওই ব্যক্তি, কিন্তু ইডির গুয়াহাটি অফিস সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দেয় যে তারা ওই দায়িত্ব নিতে অপারগ।
ইডি সূত্রের খবর, এরপর কলকাতায় ইডির পূর্বাঞ্চলের দায়িত্বে থাকা স্পেশাল ডিরেক্টরকে একটি ই মেল করেন তিনি। অভিযোগ, একাধিক ই মেল করার পরও কোনও উত্তর মেলেনি দফতর থেকে। এরপর তিনি উপায় না দেখে তদন্তকারী সংস্থার নয়াদিল্লির সদর দফতরে মেল করে গোটা বিষয়টি জানান।
সূত্রের খবর, এরপরেই নড়েচড়ে বসে ইডি। দিল্লি থেকে যোগাযোগ করা হয় কলকাতার আধিকারিকদের সঙ্গে। ইডির অন্দরে খবর, সদর দফতরের গুঁতো খেয়ে গুয়াহাটির ওই বাসিন্দার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন কলকাতায় ইডির যুগ্ম অধিকর্তা পদের এক আধিকারিক। কিন্তু তাঁর প্রস্তাব মেনে নিতে পারেননি গুয়াহাটির বাসিন্দা। সূত্রের খবর, ইডির কলকাতা দফতর থেকে গুয়াহাটির বাসিন্দাকে বলা হয়েছিল, কলকাতায় গাড়িটি নিয়ে এসে জমা দিতে। গুয়াহাটির বাসিন্দা তখন প্রশ্ন তোলেন, রাস্তায় গাড়িটির কোনও ক্ষতি হলে তার দায় কি ইডি নেবে?
ফের গোটা বিষয়টি গড়ায় দিল্লি পর্যন্ত। এরপর দিল্লির মধ্যস্থতায় নভেম্বর মাসে, প্রায় দেড় বছর লড়াই করার পর শেষ পর্যন্ত ইডির গুয়াহাটি দফতরে গাড়িটি জমা দেন ওই ব্যক্তি। সূত্রের খবর, ওই গাড়ি সারদা মামলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ। সেই প্রমাণ নিজেদের হেফাজতে না নিয়ে এই ভাবে হেলাফেলা করার বিষয়টাকে ভাল চোখে দেখছেন না ইডির কর্তারা।
ইডির অন্দরে খবর, এই ঘটনার পর দিল্লি থেকে কলকাতার দফতরের কাছে সারদা, রোজভ্যালি সহ একাধিক চিটফান্ড মামলার তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। সেই রিপোর্টেও, কলকাতা দফতরের ওপর বেজায় অখুশি দিল্লি। নিয়োগ দুর্নীতি এবং গেমিং অ্যাপ সহ সাম্প্রতিক কয়েকটি মামলায় ব্যস্ত কলকাতার ইডি দফতর। এমতাবস্থায় কলকাতা দফতরের খোল নলচে বদলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সদর দফতর।
কলকাতায় থাকা দুটি যুগ্ম অধিকর্তার পদের একটি ফাঁকা ছিল। সেই পদ সামলাতে পাঠানো হয়েছে আইআরএস বিনোদ শর্মাকে। তাঁকে জোন-১-এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর। পাশাপাশি গুয়াহাটি অফিসের কাজের তদারকিও করবেন তিনি। ইডি সূ্ত্রের খবর, চিটফান্ড তদন্ত দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিনোদ শর্মাকে।