School Reopening: ‘ঈশ্বর প্লিজ, ছেলেদের আমার কাছে ফিরিয়ে দিন…’

School: অনলাইন ক্লাস চলেছে এ কটা দিন। দূরভাষে তাদের সেভাবে কাছে পাইনি। গুগল মিটও সবার পারমিট করে না। আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া ছাত্ররা অনলাইন ক্লাস করে উঠতে পারেনি।

School Reopening: 'ঈশ্বর প্লিজ, ছেলেদের আমার কাছে ফিরিয়ে দিন...'
সুপ্রিয় পাঁজা, প্রধান শিক্ষক, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 16, 2021 | 12:31 PM

সু প্রি য় পাঁ জা: (প্রধান শিক্ষক, দ্য পার্ক ইনস্টিটিউশন)

স্যর, আমার চুল টেনে দিয়েছে…স্যর ও আমার জামা ধরেছিল…না স্যর আগে আমাকে খারাপ কথা বলেছে, তাই… বিশ্বাস করুন কচিকাচাদের এই সব অভিযোগ-অনুযোগ ভীষণ রকম মিস করছি। আর মিস করছি স্কুলের ঘণ্টা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পাহাড় প্রমাণ ফাইল সারা। অনুজ শিক্ষকদের সহচর্য কিংবা স্কুলছুট ছাত্রের অভিভাবককে ডেকে আপ্রাণ বোঝানো। ভীষণ মিস করছি। তবে হয়ত, সে অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে কয়েক দিনের মধ্যেই।.

২৩ মার্চ ২০২০। সে দিন থেকে প্রায় দেড় বছর স্কুল বন্ধ। মাঝে খুলে ছিল স্কুল। ভোটে আধা সেনার ক্যাম্প হয়। ফের বন্ধ। সব নিয়ে মোটামুটি এক মাস ক্লাস হয়েছিল। একশো বছরের এই প্রতিষ্ঠানে এই প্রথম এতদিন ধরে স্কুলে বন্ধ। ভাবতে পারছেন! ক্লাস রুম ফাঁকা। চেয়ার টেবল বেঞ্চ ফাঁকা। কচিকাচার কোলাহলহীন ইট-কাঠ-পাথরে একটি নিরস বিল্ডিং যেন দাঁড়িয়ে। এমন দৃশ্য দেখতে অভ্যস্থ নই আমরা।

ইলেভেন-টুইলেভ কোয়ে়ড। ফাইভ টু টেন ছেলেদের। এমনকী সকালে প্রাইমারি পর্যন্ত ক্লাস হয়। সকাল সকাল আসি বলে তাদের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। কতদিন তাদের মুখগুলো যে দেখিনি।

অনলাইন ক্লাস চলেছে এ কটা দিন। দূরভাষে তাদের সেভাবে কাছে পাইনি। গুগল মিটও সবার পারমিট করে না। আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া ছাত্ররা অনলাইন ক্লাস করে উঠতে পারেনি। তাই সবার সমানভাবে পড়াশোনা হয়নি। আমি প্রায়দিনই স্কুলে এসেছি। স্কুল বলা ভুল হবে ইট-কাট-পাথর দিয়ে গড়া একটি বিল্ডিংয়ে এসেছি। ওরা না থাকলে স্কুল হয়ে ওঠে না। সত্যিই ওদের উপস্থিতিই স্কুল, স্কুল হয়ে ওঠে। সুন্দর গোলাপ গাছে ফুল না ফুটলে, সে গাছের যেমন পরিস্থিতি হয়, এই স্কুলের অবস্থা এখন তেমনই। দীর্ঘদিন ধরে সে কষ্ট পুষে রেখেছি। আজ যে স্কুল খুলছে সত্যিই ভাল লাগছে।

জানেন, মিড ডে মিলের সময় আরও আনন্দ হোত। বাচ্চাদের দস্যিপনা, একে অপরের সঙ্গে খুনসুটি, একজনকে থামাতে অন্য জনকে ধমক, তারপর তার মান ভাঙানো…এ সব চলত প্রতিদিন। এর জন্য তো শিক্ষাকতার পথ বেছে নিয়েছিলাম। জীবনে অনেক ভাল চাকরির অফার পেয়েছিলাম। কিন্তু পণ ছিল, বাচ্চাদের নিয়ে সারা জীবন কাটাব। আমার মনে হয়, অন্যান্য শিক্ষকরাও একই ব্রত নিয়ে এই পেশায় এসেছেন।

খুব কম বয়সে এই স্কুলে এসেছি। সবার থেকে কনিষ্ঠ হওয়ায় সিনিয়রদের প্রচুর ভালবাসা, স্নেহ পেয়েছি। শিখেছিও অনেক। এক মাস্টারমশাই বলেছিলেন, ছেলেদের কাছে কখনও কিছু লুকিয়ো না। খোলাখুলি বলে দিও। কোথাও যদি ভুল হয়, অকপটে তাদের কাছে স্বীকার করো। দেখবে তারা তোমাকে খুব সুন্দরভাবে আপন করে নিয়েছে। আমি যেহেতু গণিতের মাস্টার, অঙ্ক শেখানোর সময় মাঝে মধ্যে আটকে যেত। তখন চালাকি করে বলতে পারতাম, এত অবধি দেখালাম বাকিটা তোরা করে নে। কিন্তু ওই মাস্টারমশাইয়ের পরামর্শ আমার মনে পড়ে যায়। তাই যখনই অঙ্কে আটকে যেতাম, তাদের বলতাম, আজ অঙ্কটা কোথাও ভুল হচ্ছে, কাল তোদের ভালভাবে বুঝিয়ে দেব।

তার পর আসতে আসতে শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক হয়ে উঠলাম। প্রধান শিক্ষকের পদের একটা গাম্ভীর্য থাকেই। কিন্তু তাদের সঙ্গে মিশতে কোথাও অসুবিধা হয় না। তাদের জন্য অবারিত এ দ্বার। যদিও এই কটা মাস বন্ধ ছিল। কদিন আগে ছাত্র-ছাত্রীরা চলে আসে স্কুলে, তাদের দরজা থেকেই বাড়ি পাঠিয়েছি। ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলাম।

যাক্ যা গেছে তা যাক্…। আজ তো স্কুল খুলছে, ব্যস আর কিছু চাই না। ফাইভ থেকে এইট এখন খুলছে না। যদি আগামী বছর খোলে, আমার মনে হয়, প্রথম ৩ মাস পুরনো সিলেবাস সংক্ষেপে করিয়ে দিতে হবে। যে ছেলেটি ফাইভে পড়ছিল, এখন সে সেভেনে পড়বে অর্থাৎ তার ফাইভ-সিক্সের ছেলেবেলা চলে গিয়েছে। এই তিন-চার মাস ফাইভ-সিক্সের সিলেবাস সংক্ষেপে পড়ানো যায় কিনা এবং সেভেনের সিলেবাস কমানো যায় কিনা দেখা দরকার। ছাত্রছাত্রীদের খামতি নিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে অবিরাম আলোচনা চালাতে হবে। আমার আর ৪ বছর চাকরি আছে। প্রাইমারি কচিকাচাদেরও কতদিন দেখিনি। যদি সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলে কিছু থেকে থাকেন, তাঁর কাছে অনুরোধ বলুন কিংবা চাহিদা বলুন, প্লিজ, ছেলেদের আমার কাছে ফিরিয়ে দিন…

আরও পড়ুন: School Reopening: স্কুল তো খুলছে! বাস বা পুল কার পাবে তো পড়ুয়ারা?