Pavlov: লাঠি হাতে পাহারা, তবু গাঠে রোগী; পাভলভের ‘নরক যন্ত্রণা’র দায় কার?

Mental Health: পাভলভের আবাসিকরা যেন এখন সাপ লুডো খেলছেন বিধাতার সঙ্গে। আর তাঁদের বিধাতা হয়ে বসে রয়েছেন রাজ্যের এক নম্বর মানসিক হাসপাতালের হর্তাকর্তারা।

Pavlov: লাঠি হাতে পাহারা, তবু গাঠে রোগী; পাভলভের 'নরক যন্ত্রণা'র দায় কার?
যতকাণ্ড পাভলভ হাসপাতালে
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 20, 2022 | 8:20 PM

কলকাতা : রাজ্যের প্রথম সারির মানসিক হাসপাতাল পাভলভ। সেখানে আবাসিকদের যে কঠিন ‘নরক যন্ত্রণা’র মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে, সেই খবর বিগত দুই দিন ধরে লাগাতার প্রকাশ করেছে TV9 বাংলা। প্রকাশ্যে এসেছে শিউরে ওঠার মতো ছবি। সুপারকে শোকজ় নোটিস পাঠানোর পরেও কোনও হেলদোল নেই পাভলভে। পাহাড়ার নামে লাঠি হাতে ঘুরপাক দিতে দেখা গিয়েছে পাভলভে। মানসিক রোগী বলে কি তাঁরা মানুষ নন? কেন এমন হম্বিতম্বি? মানসিক রোগী বলে কি লাঠি হাতে শাসন করা যায়?

পাভলভের আবাসিকরা যেন এখন সাপ লুডো খেলছেন বিধাতার সঙ্গে। আর তাঁদের বিধাতা হয়ে বসে রয়েছেন রাজ্যের এক নম্বর মানসিক হাসপাতালের হর্তাকর্তারা। দুই স্বাস্থ্য কর্তার বিস্ফোরক রিপোর্টের কথা আগেই প্রকাশিত হয়েছে TV9 বাংলায়। তুলে ধরা হয়েছে ১৩ জন মহিলা আবাসিককে কীভাবে কালকুঠুরিতে বন্দি দশায় পড়ে থাকতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, হাসপাতালের জন্য বরাদ্দের সঙ্গে বাস্তবের যে বিস্তর ফারাক, সেই কথাও তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু এত কিছুর পরেও পাভলভ যেন রয়েছে পাভলভেই। লাঠি উঁচিয়ে শাসানির ছবি ধরা পড়েছে ক্যামেরায়। পুরুষ ওয়ার্ডের বাইরে অলিন্দের ছবি। অসহায় কিছু আবাসিকের উপর চলছে চোটপাট। কেন? কারণ, আবাসিকদের ঘরে ঢোকার সময় হয়েছে। ক্যামেরায় সেই দৃশ্য রেকর্ড হচ্ছে বুঝতে পেরেই লাঠি গায়েব। লাঠি সরিয়ে দেন ওই যুবক।

রবিবার আবার দুপুরের খাবারের পর গাছে উঠে পড়েন এক আবাসিক। প্রশ্ন উঠছে, যাঁরা দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরা কী করছিলেন? রোগীর কিছু হয়ে গেলে, তার দায় কে নিতেন?

স্বাস্থ্য ভবনের একাংশও একই কথা বলছে। দীর্ঘ আট বছর ধরে একই সুপার হাসপাতালের দায়িত্বে রয়েছেন। সে ক্ষেত্রে কোথাও গিয়ে প্রশাসনিক শিথিলতা তৈরি হয়েছে বলেই মনে করছেন তাঁরা। চিকিৎসরা বলছেন, যতদিন পর্যন্ত না কোনও মানসিক হাসপাতালের চিকিৎসক কোনও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হবেন, এই সমস্যার সমাধান হওয়া মুশকিল।

মহিলা ওয়ার্ড সহ হাসপাতালের অবস্থা নিয়ে সুপারকে শোকজ় করা হয়েছিল। সাত দিনের মধ্যে সুপারকে কারণ জানাতে বলা হয়েছিল। তবে সময়সীমা পেরোলেও জবাব এখনও অধরা। সুপার গণেশ প্রসাদের দাবি, চিঠি তিনি পাননি। তাই জবাব তিনি দেবেন না। সুপার জানিয়েছেন, তিনি ডকেট খুলে দেখেননি। বিষয়টি নিয়ে ক্যামেরার সামনে মুখও খুলতে চাননি তিনি। তবে লাঠি নিয়ে ঘোরার বিষয়টি তিনি জানেন না বলেই জানিয়েছেন সুপার গণেশ প্রসাদ।

স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে দাবি, শোকজ় চিঠি প্রমাণ রয়েছে। সেই নথি নষ্ট করতেও নাকি অধস্তন কর্মীদের উপর চাপ সৃষ্টি করছেন সুপার। প্রশ্ন উঠছে, এত কিছুর পরও কেন নীরব রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের মন্ত্রী জাভেদ খান?

এই বিষয়ে রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য স্বর্ণকমল সাহা জানিয়েছেন, “উনি নিজেই তো বলছিলেন, কোনও একটি সেক্টর থেকে নাকি তাঁর পিছনে লেগেছে। যখন তিনি সরে যেতে চান, তখন সরিয়ে দিক। যিনি নিজের দিকে ব্যর্থ হয়েছেন, তাঁকে রাখবে কেন? যাঁরা মানসিক রোগী, তাঁদের দিকে একটু মানবিক হয়েই কাজ করতে হবে। যদি কাউকে তালাবন্দি করে রাখে, সেটা তো অমানবিক হয়ে যাচ্ছে।”

এদিকে পাভলভ ইস্যুতে ঘটনার দায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিদের উপর চাপিয়েছেন তিনি। বলেন, “রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য হিসেবে আমি দীর্ঘদিন আছি। প্রতি দেড় মাসে একবার করে আমাদের বৈঠক হয়। সেখানে আমরা হাজির হই। সেখানে বিভিন্ন এনজিও সংস্থার প্রতিনিধিরাও থাকেন। এই ব্যাপারে তাঁদের বৈঠকে বলা উচিত, যদি হয়ে থাকে। তাই এই বিষয়গুলি সম্পর্কে আমাদের সঠিকভাবে জানা নেই। তবে অভিযোগগুলি যদি সত্য হয়, তাহলে তা অত্যন্ত অমানবিক হয়েছে।”

বিষয়টি নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধি শুক্লা দাস বড়ুয়া জানিয়েছেন, “ওনারা কত দিন হাসপাতালের ইনডোরে ভিসিট করেছেন? বিষয়টি এত চোরাগোপ্তা ভাবে হচ্ছিল, এটা সত্যি বলতে আমাদেরও প্রথমে নজরে আসেনি। ওনারা কত দিন ঢুকে রোগীদের সঙ্গে কথা বলেছেন? এই প্রশ্ন আমরা করতে চাই। আমরা যে কথাগুলি রোগী কল্যাণ সমিতিতে তুলে, সেগুলি তত গুরুত্ব দেওয়া হয় না, বা নথিভুক্ত করা হয় না। যাঁরা রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য হিসেবে যাঁরা আসেন, তাঁদেরও অন্তত হাসপাতালের আবাসিকদের সঙ্গে কথা বলা উচিত।”