Tangra: ‘ওরা সুপ্রতিষ্ঠিত পরিবার, কোনও অর্থনৈতিক সমস্যা নেই, আমি তো কাল সন্ধ্যাতেও এসে দেখি’, ট্যাংরার ‘এলিট’ পরিবারের ৩ জনের রহস্যমৃত্যুতে ব্যবসায়ীক পার্টনার যা বললেন…
Tangra: ট্যাংরার অভিজাত পরিবারের রহস্যমৃত্যুতে পুলিশ আত্মহত্যার তত্ত্বই আপাতত খাড়া করেছে। কিন্তু কেন এত অভিজাত পরিবার আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন? কী কারণ থাকতে পারে? প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, অর্থনৈতিক কারণই থাকতে পারে এর পিছনে।

কলকাতা: মা-বাবার বাড়ি! ট্যাংরায় তিন তলা বাড়ি। বাড়ির তিনতলায় তিনটে রক্তাক্ত শরীর। বাড়ির তিন মহিলা সদস্যের। বাড়ির দুই বউ রোমি দে ও সুদেষ্ণা দে আর ছোট মেয়ে। দুই বউয়ের হাতে ধারাল অস্ত্রের আঘাত, আর কিশোরীর মুখ দিয়ে বেরোচ্ছে গ্যাজলা। বাড়ির দুই ছেলে প্রসূন দে ও প্রণয় দে ততক্ষণে অভিসিক্তার কাছে দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ট্যাংরার অভিজাত পরিবারের রহস্যমৃত্যুতে পুলিশ আত্মহত্যার তত্ত্বই আপাতত খাড়া করেছে। কিন্তু কেন এত অভিজাত পরিবার আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন? কী কারণ থাকতে পারে? প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, অর্থনৈতিক কারণই থাকতে পারে এর পিছনে।
দে পরিবারেরই এক সময়ের ব্যবসায়ীক পার্টনারের মুখে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। তাঁর ৩০ লক্ষ টাকার চেক বাউন্স হয়েছে। সে কথা বলতেই তিনি দে পরিবারে এসেছিলেন। এসে দেখেন এই অবস্থা। একাধিক ফোনও করেছিলেন তিনি। কী বললেন?

একসময়ের ব্যবসায়ীক পার্টনার
তিনি বললেন, “আ্রমি প্রায় ২০২০ সাল থেকে ব্যবসা করেছি ওদের সঙ্গে। ২০২৩ সালের শেষ পর্যন্ত করি। আর ওদের সঙ্গে ব্যবসা করিনি। পেমেন্ট ট্রানজাকশন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। যে চেক দেওয়া হচ্ছিল, তা টাইমে পাস হচ্ছিল না। যেটা দুমাসের টার্মস ছিল, সেটা ৬ মাস, ৭ মাস, ৮ মাসও হয়ে যাচ্ছিল। ফলে আমরা আর মাল দিতে পারছিলাম না। কিন্তু ওনারা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন অন্যদের সঙ্গে।”
তিনি বলেন, “চেক ওনারা আমাকে অনেক বার দিয়েছিল। সে চেক ডিসঅর্ডার হওয়ার পর আবার নতুন চেক দিয়ে দিচ্ছে। লাস্ট যে চেকটা কালকে পাস হওয়ার কথা ছিল, সেটাও গতকাল বাউন্স হয়ে যায়। রাত রাত থেকে ওদের ফোন করছি। ফোন ধরেনি। তাই সকালে এসেছিলাম কথা বলতে, এসে তো দেখি এই অবস্থা। কাল সন্ধ্যা ৬টায় এসেছিলাম। দরজা বন্ধ ছিল। ২১ নম্বর শীল লেনে ওদের ফ্যাক্টরি। ওখানে ওদের ভাইপো ছিল, যে কারখানা দেখাশোনা করে। সেও বলল, তিরিশবার ফোন করেছি দাদাদের পাইনি। কাকিমাদেরও ফোন বন্ধ ছিল। কাল সকলেরই ফোন বন্ধ ছিল.। ৩০ লক্ষ টাকার ডিউ ছিল। কিন্তু সেগুলো একটাও পাস হয়নি। ডেট আজ থেকে এক মাস আগের ডেট ইস্যু ছিল। উনি বলেছিলেন, এখন ফেলবেন না, পরে ফেলবেন। সেটা আমি কালকে ফেললাম। সেটাও বাউন্স হয়ে গিয়েছে।”
কিন্তু কেবল অর্থনৈতিক কারণেই তাঁরা এত বড় সিদ্ধান্ত নেবেন, তা মেনে নিতে পারছেন না তিনি। তিনি বলেন, “ওরা সুপ্রতিষ্ঠিত পরিবার। ব্যবসার মধ্যে আপ-ডাউন থাকে, সেটা আমরাও জানি। ওদের অর্থনৈতিক কোনও সমস্যা নেই। ওদের এক্সপোর্টের ভাল প্রপার্টি রয়েছে। সেটা ভালই চলছে।”
দুই ভাই প্রসূন দে ও প্রণয় দে চামড়ার ব্যবসা করতেন। বাড়ির দুই বউ গৃহবধূ। তাঁদের প্রত্যেকেই এক সন্তান। বুধবার সকালে ট্যাংরার বাড়ির তিন তলা থেকে উদ্ধার হয় দুই বউ ও কিশোরীর দেহ। পরে পুলিশি তদন্তে উঠে আসে, অভিসিক্তার কাছেই একটা গাড়ি দুর্ঘটনা হয়েছে। তাতে আহতদের জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে এই বাড়ির ঠিকানা। আহতরা হলেন প্রসূন দে ও প্রণয় দে। এরপরই রহস্য ঘনীভূত হতে থাকে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানাচ্ছে, আত্মহত্যা করেছেন বাড়ির তিন মহিলা সদস্য। আর প্রসূন আর প্রণয়ও কি আত্মহননের পথই বেছে নিচ্ছিলেন? গাড়ি দুর্ঘটনা কি নিছকই দুর্ঘটনা নাকি এর পিছনে অন্য তথ্য রয়েছে।





