বিজেপির এই ৬ ভুলে বঙ্গে ডুবল পদ্মফুল, হারের ময়নাতদন্ত তথাগতর

BJP West Bengal: কী কারণে নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবি হল, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ৬ টি ভুলের কথা তুলে ধরেন তথাগত।

বিজেপির এই ৬ ভুলে বঙ্গে ডুবল পদ্মফুল, হারের ময়নাতদন্ত তথাগতর
অলংকরণ-অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 13, 2021 | 11:28 PM

TV9 বাংলা এক্সক্লুসিভ: তিনি ফুলটাইম রাজনীতিবিদ নন, আবার রাজনীতি থেকে বাইরেও নেই তাঁর নাম। পেটে পান্ডিত্যের খনি থাকলেও রাজনীতিতে তাঁর ‘ক্যামব্যাক’ খুব একটা সুখকর হয়নি। প্রকৃত অর্থে ‘ঠোঁটকাটা’ বলতে যদি কারোর নাম মনে আসে, তবে তিনি অবশ্যই তথাগত রায়। রাখঢাক রেখে কোনও কথা বলেন না। স্পষ্টবাদী। ২ মে বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে নিজের এক পর এক বিস্ফোরক বয়ানের জেরে হামেশাই শিরোনামে থেকেছেন তিনি। মঙ্গলবার নিজের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই TV9 বাংলার ‘কথাবার্তা’ অনুষ্ঠানে ধরা দেন তথাগত। মুখ খোলেন একের পর এক বিতর্কিত ইস্যুতে।

দুই রাজ্যের প্রাক্তন রাজ্যপাল হওয়ার সৌজন্যে, এবং পশ্চিমবঙ্গের এককালীন বিজেপি রাজ্য সভাপতি হওয়ার ফলে তাঁর বিপুল অভিজ্ঞতাকে এ বারের ভোটে কাজে লাগাক বিজেপি, খানিকটা এই মনোবাঞ্ছা নিয়েই বাংলায় ফিরে এসেছিলেন তথাগত। কিন্তু সে আশা পূরণ হয়নি। তারপর থেকেই রুদ্রমূর্তিকে সঙ্গী করে রয়েছেন বর্ষীয়ান এই নেতা। মঙ্গলবার ‘কথাবার্তা’ অনুষ্ঠানে বসে বঙ্গ বিজেপির একাধিক দোষ-ত্রুটি নিয়ে মুখ খোলেন তিনি। তবে কী কারণে নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবি হল, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ৬ টি ভুলের কথা তুলে ধরেন তথাগত। রইল তাঁর সেই ভুলের খতিয়ান।

তথাগতর চোখে বিজেপির ভরাডুবির ৬ অন্যতম কারণ…

প্রথম ভুল: বিজেপির যে একটা বাঙালি চেহারা রয়েছে সেটা আমরা মোটেই প্রকাশ করতে পারিনি। উল্টে মানুষের মাথায় ঢুকে গিয়েছে যে এটা একটি হিন্দিভাষীদের পার্টি। কারণ, ক্রমাগত হিন্দিভাষী নেতারা এসেছেন। (সংগঠনের) মাথায় হিন্দিভাষী নেতারা বসে রয়েছেন। তাঁরা পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করছেন। সমস্ত ভাষণ হিন্দিতে হচ্ছে। যা গ্রামবাংলার মহিলাদের বেশিরভাগই বোঝেন না। ফলে হিন্দিতে প্রচার মানুষের মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে। তৃণমূলকে ‘বাংলার মেয়ে’ নামক অস্ত্র যেন বিজেপি নিজে থেকেই তুলে দিয়েছে।

দ্বিতীয় ভুল: শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের আদর্শকে সামনে আনা হয়নি। কিন্তু যে চারজন নির্বাচনের দায়িত্বে ছিলেন (দিলীপ, কৈলাস, শিবপ্রকাশ, অরবিন্দ মেনন), তাঁরা এই বিষয়ে অবগত ছিলেন বলে মনে হয় না। কংগ্রেস যখন দেশভাগ করতে চেয়েছিল, তখন বাংলার হিন্দুদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে শ্যামাপ্রসাদ বাংলা ভাগ করতে বলেছিলেন। নাহলে সেই সময়ে এপার বাংলায় থাকা ৪৫ শতাংশ হিন্দুকে বাংলাদেশের জিম্মি হয়ে বসবাস করতে হত। কংগ্রেসও এই বিষয়টি নিয়ে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে সমর্থন করেছিল।

তৃতীয় ভুল: তৃণমূল জিতলে যে মমতা মুখ্যমন্ত্রী হবেন সেটা সবাই জানত। মমতা হেরে গিয়েও মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু বিজেপি যদি জিতে যায়, তখন কে মুখ্যমন্ত্রী হবে সেটা নিয়ে মানুষ একটু ধাঁধায় ছিল। একক  ব্যক্তি বা একাধিক লোকের নামও বলা যেত। যেমন দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়, জয়প্রকাশ মজুমদার অথবা লকেট চট্টোপাধ্যায়। এরকম কারোর নাম বলাই যেত। এটা আমরা করিনি, না করার ফলে আমাদের খুব ক্ষতি হয়েছে।

চতুর্থ ভুল: নির্বাচনী ভাষণে খুব অশালীন, অশিষ্ট ভাষা প্রয়োগ করা হয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বারমুডা পরার কথা বলা হয়। এটা একটা মহিলাকে কখনই বলা যায় না। বাংলার সংস্কৃতি কখনও এই কথা মেনে নেয় না। তারপর, ‘সব কটাকে মেরে ফেলব’, ‘সব কটাকে শুইয়ে দেব’, ‘শবদেহের লাইন লাগিয়ে দেব’, এগুলো কী ধরনের কথা! এগুলো বলা একদম ঠিক হয়নি এবং মানুষও একেবারেই ভালভাবে নেয়নি।

পঞ্চম ভুল: সিএএ, এনআরসি। দু’টো বিরাট বড় পদক্ষেপ। যে মানুষগুলো ধর্মীয় কারণে বাংলাদেশ থেকে অত্যাচারিত হয়ে এ বাংলায় এসেছে, তাঁদের ঘাড়ের উপর একটা খড়্গ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল; যে কোনও সময় তোমাদের ফেরৎ পাঠিয়ে দেওয়া হতে পারে। নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টা ভালভাবে প্রচার করা উচিত ছিল। কিন্তু সেটা শুধু মতুয়া বেল্টে প্রচার করা হয়েছিল। যে কারণে ওখানে আমরা সাফল্য পেয়েছি। কিন্তু বাকি বাংলায় সেটা প্রচার করা হয়নি।

ষষ্ঠ ভুল: হারের সবচেয়ে বড় কারণ হল প্রার্থী চয়ন এবং টিকিট বণ্টন। প্রার্থী বাছাই এতটাই খারাপ হয়েছে যে তা বলার মতো নয়। প্রার্থী চয়নে দলবদলুদের মধ্যে ১৪০ জনকে প্রার্থী করা হয়েছিল। যাঁদের মধ্যে পাঁচ বা ছয়জন জিততে পেরেছেন, বাকি সবাই হেরে গিয়েছেন। এই জিনিসটা মানুষের মনে খুব ভুল রেখাপাত করেছে। আমরা যে রকম হারা হেরেছি (বিশেষ করে কলকাতার আসনে), এটা অত্যন্ত দুশ্চিন্তার ব্যাপার। প্রার্থীদের নামে নগরীর নটিদের কেন প্রার্থী করা হল আমি তাও ভেবে পাই না। এরা এতটাই নির্বোধ যে মদন মিত্রর সঙ্গে জলকেলি করল। করতে হলে লুকিয়ে লুকিয়ে কর। তা নয়, জলকেলির ছবি আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করল। এতে মানুষের মনে কী প্রভাব পড়ে!

(TV9 বাংলার ‘কথাবার্তা’ অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে উপরিউক্ত মন্তব্য়গুলি করেন তথাগতবাবু। উপরের কোনও মন্তব্যের দায় TV9 বাংলার নয়)