গায়ের রং নিয়ে নোংরা ট্রোলের শিকার টলি অভিনেত্রী, তদন্ত শুরু লালবাজারের

Shruti Das: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'কৃষ্ণকলি' গান শুনে যাঁরা আবেগে গদগদ হয়ে যান, তাঁদেরই একাংশ আবার পাশের বাড়ির কোনও কৃষ্ণাঙ্গীকে দেখলেই নাক সিঁটকন।

গায়ের রং নিয়ে নোংরা ট্রোলের শিকার টলি অভিনেত্রী, তদন্ত শুরু লালবাজারের
ছবি ফেসবুক
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 05, 2021 | 3:19 PM

কলকাতা: মনে প্রাণে নিজেদের আধুনিক ভাবতে ভাল লাগা আর আক্ষরিক অর্থেই আধুনিক, এই দুইয়ের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। দিনভর মুঠোফোনে বিশ্বের হালহকিকত নখদর্পণে নিয়ে আমরা নিজেদের সমসাময়িক দাবি করলেও মানসিকতায় এখনও বোধহয় অনেকেই প্রস্তর যুগে পড়ে রয়েছেন। না হলে একবিংশ শতকে দাঁড়িয়েও একটা মেয়েকে তাঁর গায়ের রং নিয়ে কথা শোনানো হয়? টলিউডের জনপ্রিয় মুখ শ্রুতি দাস সম্প্রতি এই অভিযোগ নিয়েই পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন। লালবাজারের জয়েন্ট সিপি (ক্রাইম) মুরলীধর শর্মা জানান, তথ্যপ্রযুক্তি আইনে তাঁরা এই অভিযোগ নিয়েছেন।

বাংলা ধারাবাহিকে অত্যন্ত পরিচিত মুখ শ্রুতি দাস। যদিও শ্রুতি নামের থেকে ‘নোয়া’ নামেই বেশি জনপ্রিয় ‘দেশের মাটি’ ধারাবাহিকের এই কৃষ্ণকলি। এর আগে ‘ত্রিনয়নী’ ধারাবাহিকেও মুখ্য চরিত্রে দেখা গিয়েছিল শ্রুতিকে। ছিপছিপে চেহারা, কোমর ছাড়ানো চুলের বাহারে কৃষ্ণাঙ্গী এই সুন্দরী বেশ নজরকাড়া। কিন্তু ‘অপরাধ’ একটাই, গায়ের রংটা কালো। সে কারণেই প্রতি মুহূর্তে সোশ্যাল মিডিয়ায় কুৎসিত, কুরুচিকর বাক্যবাণে জর্জরিত হতে হয় তাঁকে।

২৩ বছর বয়সী শ্রুতি পুলিশকে জানিয়েছেন, ২০১৯ সাল থেকে তিনি এই ধরনের ঘৃণার শিকার হচ্ছেন। নোংরা ভাষায় তাঁকে আক্রমণ করছেন নেটিজেনরা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কৃষ্ণকলি’ গান শুনে যাঁরা আবেগে গদগদ হয়ে যান, তাঁদেরই একাংশ আবার পাশের বাড়ির কোনও কৃষ্ণাঙ্গীকে দেখলেই নাক সিঁটকন। এই দ্বিচারিতার রোগ বহু পুরনো। শ্রুতির কথায়, “এ ধরনের হিপোক্রেসি থেকে এবার বোধহয় আমাদের বেরিয়ে আসা দরকার। কালোও একটা রং। তাই কৃষ্ণবর্ণ কখনও ঘৃণার কারণ হতে পারে না। আমি খুশি পুলিশ আমার অভিযোগ নিয়েছে।”

আরও পড়ুন: প্রয়াত ভীমা-কোরেগাঁও হিংসার ঘটনায় ধৃত সমাজকর্মী স্ট্যান স্বামী

লালবাজার সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে অ্যাকাউন্টগুলি সাসপেন্ড করার কথা বলা হয়েছে। যদি প্রমাণ হয়, লাগাতার অভিনেত্রী হেনস্তা করা হয়েছে, গুরুতর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু এখানেও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আইনের সাহায্য নিয়ে কেন এই ধরনের নোংরামোকে আটকাতে হচ্ছে? শিক্ষার আলো কেন সেই গভীর অবধি পৌঁছতে পারছে না, যেখান থেকে কোনও মানুষকে তাঁর শারীরিক গঠন কিংবা বর্ণের জন্য বিদ্রুপ করা হবে না। মনোবিদরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনা হীনমন্যতারও বহিঃপ্রকাশ। হয়ত যিনি ওই অভিনেত্রীকে বিদ্রুপ করছেন, তাঁর কোথায় অপ্রাপ্তির ভাঁড়ার পূর্ণ। অথচ এত অল্প বয়সে একটি মেয়ে এত খ্যাতি, নামযশ পাচ্ছেন সেটা কোনও ভাবে বিদ্রুপকারীরা মানতে পারছেন না।