KMC Financial Crunch Explained: শুধুই কি করোনা! নাকি অন্য কোনও কারণ? কী কারণে পাহাড় প্রমাণ দেনায় ডুবে কলকাতা পুরনিগম?
Firhad Hakim: কেন এই সংকট? শুধু কি করোনা কারণ? নাকি পরিকল্পিত ব্যয়ের থেকে অপরিকল্পিত ব্যয় বেশি হয়ে গিয়েছে? গত ২০-২৪ মাস ধরে ঠিকাদারদের কাজের বিল দেওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কারণ ভাঁড়ে মা ভবানী অবস্থা।
কলকাতা : অর্থনৈতিক দৈন্যদশার কবলে কলকাতা পুরনিগম (Kolkata Municipal Corporation)। পুর কোষাগার অর্থ সংকটে ভুগছে। পরিস্থিতি ক্রমশ গুরুতর হচ্ছে। এই অবস্থায় কলকাতা পুরনিগম নাগরিক পরিষেবা কীভাবে দেবে সেটা নিয়ে উঠেছে এখন প্রশ্ন। খোদ কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, প্রায় হাজার কোটি টাকার দেনায় রয়েছে কলকাতা পুর প্রশাসন। নতুন পে কমিশন অনুযায়ী যে পরিমাণ অর্থ কর্মীদের জন্য খরচ করা প্রয়োজন, তা আর্থিক সংকটের জন্য করতে পারছেন না। কিন্তু কেন এই সংকট? শুধু কি করোনা কারণ? নাকি পরিকল্পিত ব্যয়ের থেকে অপরিকল্পিত ব্যয় বেশি হয়ে গিয়েছে? গত ২০-২৪ মাস ধরে ঠিকাদারদের কাজের বিল দেওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কারণ ভাঁড়ে মা ভবানী অবস্থা। কোষাগারের কীভাবে হাল ফিরবে, তা নিয়ে সংশয়ে খোদ পুর কর্তারা।
পুরনিগমের তথ্য বলছে, বর্তমানে কলকাতা পুরনিগমের স্থায়ী এবং অস্থায়ী কর্মীদের বেতন এবং পেনশন দিতে প্রয়োজন হয় মাসিক ১৩৩ কোটি টাকা। ১৮ হাজার স্থায়ী কর্মীর জন্য ৭৮ কোটি টাকা, ২৬ হাজার অস্থায়ী কর্মীদের জন্য ১৫ কোটি টাকা এবং ৩৫ হাজার অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের জন্য ৪০ কোটি টাকা প্রয়োজন হয়। পুরনিগমের তথ্য বলছে, স্থায়ী কর্মীদের বেতনের ১৫ শতাংশ কলকাতা পুরনিগম এবং ৮৫ শতাংশ রাজ্য সরকারকে বহন করতে হয়। অস্থায়ী কর্মীদের বেতনের পুরো টাকাই কলকাতা পুরনিগমকে বহন করতে হয়। অবসরপ্রাপ্তদের পেনশনের ৬০ শতাংশ কলকাতা পুরনিগম বহন করে।
পুরনিগমের গাড়ির বেহিসেবি ব্যবহার?
কিন্তু এই অর্থ সংকটের কারণ সম্পর্কে পুরনিগমের অন্দরমহলে নজর রাখলে উঠে আসছে কিন্তু অন্য তথ্য। কোষাগারে আরও বড় দৈন্যদশা তৈরি হয়েছে পুর প্রশাসনে গাড়ির অপব্যবহার নিয়ে। সাম্প্রতিককালে গাড়ির ব্যবহার অনেক বেড়ে গিয়েছে। বিভাগীয় কর্তাদের গাড়ি ব্যবহারের রাশ না থাকাতেই যে এই সমস্যা হয়েছে, তা নিয়ে ইতিমধ্যে পুর কমিশনারের কাছে রিপোর্ট জমা পড়েছে। পুরনিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে কলকাতা পুরনিগমের অধীনে নিজস্ব এবং ঠিকাদারদের থেকে নেওয়া মিলিয়ে বিপুল পরিমাণে গাড়ি চলে। যেগুলিতে তেল বাবদ ব্যয়, চালকের বেতন সহ সংশ্লিষ্ট খাতে মাসিক সাড়ে চার থেকে পাঁচ কোটি অর্থাৎ প্রায় ৫০ কোটি ব্যয় হয়। এই ব্যয় গত তিন চার বছরে অত্যাধিক বেড়ে গিয়েছে বলে সূত্রের খবর। অতীতে সার্কুলার জারি করে, এই গাড়ি ব্যবহারে কড়াকড়ি করেছিল পুরনিগম। সেই অনুযায়ী, পুর আধিকারিকরা গাড়ি চাপার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও সতর্ক হয়েছিলেন। কিন্তু তারপর অবস্থা আবার তথৈবচ হয়ে যায়।
ওভারটাইম, হলিডে অ্যালাউন্সে রাশ না টানাতেই বিপত্তি?
অভ্যন্তরীণ উৎসগুলি থেকে রাজস্ব আদায় যেমন কমেছে, তেমনি বেড়েছে অপ্রয়োজনীয় খরচ। পুর রাজস্ব সব থেকে বেশি অপব্যয় হচ্ছে ওভারটাইম এবং গাড়ি ব্যবহারে রাশ না টানার জন্য। গত কয়েক বছরে হলিডে আলাউন্স বা ওভারটাইম, টিফিনভাতাসহ একাধিক ভাতা অত্যাধিক হারে বেড়ে গিয়েছে। বর্তমানে ওভারটাইম বাবদ মাসে দেড় থেকে দুই কোটি অর্থাৎ বার্ষিক ২৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়। যা রাশ টানতে একাধিক কমিটি বা বৈঠক হলেও লাভ হয় নি।
রাজস্ব আদায় অনেকটা কমেছে
পুর কমিশনারের দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েক মাসে রাজস্ব সংক্রান্ত গোপনীয় বৈঠকে অর্থ বিভাগের তরফে যে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে, তাতে অ্যাসেসমেন্ট, সম্পত্তিকর, লাইসেন্স, বিজ্ঞাপন, বিল্ডিং-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ থেকে রাজস্ব আদায় প্রায় নেই বললেই চলে। বিগত প্রায় প্রতিটি বৈঠকে পুর কমিশনার সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাদের তাঁদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে আদায় বৃদ্ধিতে নজর দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু দিনের শেষে দেখা গিয়েছে, আর্থিক বাজেটে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলিকে অর্থ আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল, তার অনেকটাই বাকি রয়ে গিয়েছে।
রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে, অনাদায়ী সম্পত্তি করের পরিমাণ ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এই সম্পত্তি কর আদায়ের জন্য যে ধরনের কড়া পদক্ষেপ বা কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার ছিল গত দেড় বছরে, সে ব্যাপারে পুরোটাই নিষ্ক্রিয় ছিলেন পুরনিগমের রাজস্ব বিভাগের কর্তারা। রাজনৈতিক কারণে সেই টাকা আদায়ের ব্যাপারে বারংবার পদক্ষেপ করেও পিছিয়ে আসতে হয়েছে। রাজনৈতিক কারণ কলকাতা পুরনিগমের সম্পত্তি কর আদায়ের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা। সুব্রত মুখোপাধ্যায় মেয়র থাকাকালীন যে কড়া সিদ্ধান্তগুলি নিতে পেরেছিলেন তা বর্তমান বোর্ড কেন নিতে পারছেন না তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। চলতি অর্থবর্ষে এখনও পর্যন্ত কলকাতা পুরনিগমের সম্পত্তি কর বাবদ আদায় করতে পেরেছে ৬৫০ কোটি টাকা। যদিও লক্ষ্যমাত্রা ছিল বিপুল। বড় বড় করদাতারা ওয়েভার স্কিমের ছাড় নেওয়ার জন্য কর দিচ্ছেন না। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে কলকাতা পুরনিগম যে ওয়েভার স্কিম চালু করেছিল তাতে আদায় হয় ৪৫০ কোটি টাকা। যদিও লক্ষ্যমাত্রা ছিল দেড় হাজার কোটি টাকা।
করোনা প্রভাবের কারণ হিসাবে দাবি করলেও কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়া যে অন্যতম দায়ী, তা মেনে নিচ্ছেন রাজস্ব বিভাগের কর্তারা। পাশাপাশি, বিনোদন কর পুরনিগমের অন্যতম আর্থিক স্তম্ভ। সেখান থেকে নানান কারণে রাজস্ব আদায় কার্যত স্তব্ধ হয়ে রয়েছে। আবার অনাদায়ী লাইসেন্সের অর্থের পরিমাণ ১৫০ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন : KMC Atin Ghosh: অর্থসঙ্কট মেটাতে এগিয়ে আসুক শিল্পপতিরা, আহ্বান ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের