Upper Primary job seekers: ‘কয়েদিদের মতো ব্যবহার করা হয়’, লক-আপের দুঃসহ অভিজ্ঞতা শোনালেন উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থী
Upper Primary job seekers: ঘরে অর্টিজিমে আক্রান্ত ৪ বছরের শিশু। তার মুখে দুধ তুলে না দিলে সে খেতে পারবে না। সেই শিশুর ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতেই আন্দোলনে বসেছিলেন উচ্চ প্রাথমিকের টেট পাশ করা মা। কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ডেপুটেশন দিতে গিয়ে তাঁকে যেতে হল কারাগারের অন্ধকারে।
কলকাতা: টেট পাশ করেও চাকরি হয়নি। টানা ৫৫৬ দিন ধরে আন্দোলন চালিয়েও মিলল না চাকরি। বরং নিয়োগপত্রের বদলে হাতে এল এফআইআর-এর কপি, স্কুলের বদলে ঠাঁই হল সেন্ট্রাল লক আপে। শুক্রবার এমনই দিন দেখলেন উচ্চ প্রাথমিকের আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীরা। ৫৫ জন চাকরি প্রার্থী রাত কাটালেন সেন্ট্রাল লক আপে। আর সেই রাত কাটল দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে। লক-আপ থেকে বেরিয়েই TV9 বাংলার মুখোমুখি হয়েছিলেন উচ্চ প্রাথমিকের আন্দোলনরত দুই চাকরিপ্রার্থী। সেন্ট্রাল লক আপে রাতের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানালেন তাঁরা। যা শুনলে স্বাভাবিকভাবেই চোখে জল চলে আসবে।
ঘরে অর্টিজিমে আক্রান্ত ৪ বছরের শিশু। তার মুখে দুধ তুলে না দিলে সে খেতে পারবে না। সেই শিশুর ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতেই আন্দোলনে বসেছিলেন উচ্চ প্রাথমিকের টেট পাশ করা মা। কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ডেপুটেশন দিতে গিয়ে তাঁকে যেতে হল কারাগারের অন্ধকারে। সন্তানের মুখে দুধ তুলে দেওয়ার জন্য মুক্তি চেয়ে বহু কাকুতি-মিনতি করলেও সুরাহা হয়নি। সারারাত কাটল সেন্ট্রাল লক-আপে গরাদের পিছনে। এরকমই ৫৫ জন মহিলার রাত কেটেছে সেন্ট্রাল লক-আপে। আর সেই রাতের অভিজ্ঞতা ভয়াবহ।
লক-আপ থেকে বেরিয়ে TV9 বাংলার মুখোমুখি হয়েছিলেন আন্দোলনকারী রিয়া রায় ও ছন্দা বিশ্বাস। সেন্ট্রাল লক-আপে শুক্রবার রাতের সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ভুলতে পারছেন না তাঁরা। হবু শিক্ষিকাদের সঙ্গে লক-আপে কয়েদিদের মতো দুর্ব্যবহার করা হয়েছে বলে রীতিমতো কান্নায় ভেঙে পড়েন রিয়া। তিনি বলেন, কয়েদিদের যেভাবে রাখা হয়, আমাদের সেরকমভাবে রাখা হয়েছিল। কয়েদিদের মতো ব্যবহার করা হয়। আমরা এতজন একসঙ্গে ছিলাম। সেখানে তিনটি বাথরুম ছিল। সেই বাথরুমের দুর্গন্ধের মধ্যে থাকতে হয়েছিল। ওই দুর্গন্ধের মধ্যেই খেতে হয়। যেন বিভীষিকা।
আবার তাঁদের যেভাবে টেনে-হিঁচড়ে পুলিশ নিয়ে যায়, তা অকল্পনীয় বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ছন্দা বিশ্বাস। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের বারবার চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে, আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু সুরাহা কিছু হচ্ছে না। তাই শুক্রবার তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে কালীঘাটে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ডেপুটেশন দিতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছনোর আগেই তাঁদের উপর নেমে আসে পুলিশি নির্যাতন। পুলিশের উপর তাঁরা হামলা করেছেন বলে অভিযোগ উঠলেও সেটা মিথ্যা এবং পুলিশই তাঁদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করেছে বলে পাল্টা অভিযোগে সরব হন ছন্দা বিশ্বাস। কেন তাঁরা চাকরি পাবেন না? টেট পাশ করে কি তাঁরা ভুল করেছেন- সরকারের কাছে এমন প্রশ্নও তুলেছেন।
শিক্ষক জাতির মেরুদণ্ড তৈরি করে। সেখানে টেট পাশ করেও চাকরির দাবিতে আন্দোলন করতে হচ্ছে, হবু শিক্ষিকাদের জেলে ভরা হচ্ছে, তাঁদের সঙ্গে কয়েদিদের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে- তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কী হবে বলে প্রশ্ন তুলেছেন ছন্দা বিশ্বাস ও রিয়া রায়।