Weather: মকরসংক্রান্তিতে শীতের শিরে সংক্রান্তি! জোড়া ঝঞ্ঝার ঝঞ্ঝাটে উধাও হবে ঠান্ডা?
Weather News: তবে এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির পর্বটা সাময়িক হওয়ার সম্ভাবনা। ঝঞ্ঝার ঝঞ্ঝাট মিটলেই আবার কাঁপন ধরাতে পারে হিমেল হাওয়া।
কমলেশ চৌধুরী
উত্সব মানেই কি শীতে (Winter) কাঁটা? ভরা পৌষে ‘উষ্ণ’ বড়দিন, ‘উষ্ণ’ বর্ষবরণ কাটিয়েছে বাংলা। এ বার কি ‘উষ্ণ’ মকরসংক্রান্তিও? যতই জাঁকিয়ে শীতের পর্ব চলুক, প্রকৃতির খেয়ালে এমন নিয়তিই দেখতে পাচ্ছেন আবহবিদরা। আগামী তিন দিন ঠান্ডা আমেজ থাকবে। কিন্তু সংক্রান্তির মুখেই তাপমাত্রা স্বাভাবিকের উপরে উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা। শুধু রাতে নয়, দিনেও চড়বে পারদ। অর্থাত্, সংক্রান্তিতে শীতের শিরে সংক্রান্তি! রবিবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, কলকাতার এই তাপমাত্রা পৌঁছে যেতে পারে ১৬-১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘর থেকে কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছতে পারে ২৬-২৭ ডিগ্রিতেও। জেলার তাপমাত্রা কলকাতার চেয়ে কম থাকবে, তবে পারদ চড়বে সে তল্লাটেও। অর্থাত্, সাময়িক ভাবে ‘শীতঘুমে’ যাবে শীত।
বড়দিনে ‘উষ্ণতা’ ছড়িয়েছিল বঙ্গোপসাগরের বিপরীত ঘূর্ণাবর্ত। বর্ষবরণে কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় পশ্চিমী ঝঞ্ঝা। সংক্রান্তিতেও কাঁটা সেই পশ্চিমী ঝঞ্ঝা। একটি নয়, জোড়া। একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা ইরান, আফগানিস্তান হয়ে কাশ্মীরে ঢুকছে। এর ঠিক পিছনেই রয়েছে আরও একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা। মৌসম ভবনের অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্য়ায় বলছেন, ‘‘ঝঞ্ঝা এলে জলীয় বাষ্প ঢুকে উত্তর ভারতে শীতের দাপট কমবে। ফলে উত্তুরে হাওয়ার গতি কমবে। তার প্রভাব পড়বে আমাদের রাজ্যেও। শুধু রাতের নয়, দিনের তাপমাত্রাও বাড়বে। ফলে সাময়িক ভাবে শীতের অনুভূতি কমবে।’’
রথে বৃষ্টি। মকরসংক্রান্তিতে কনকনে ঠান্ডা। এটা বাংলার চেনা লব্জ। কিন্তু গত কয়েক বছরে সংক্রান্তিতে শীতের দাপট বেশ কম। বাইশে ৯ বছরের ‘উষ্ণতম’ সংক্রান্তির সাক্ষী হয়েছিল আলিপুর। তাপমাত্রা পৌঁছে যায় ১৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। বস্তুত, শেষ বার সংক্রান্তিতে জাঁকিয়ে শীত ছিল ২০১৭, ২০১৮ সালে। তার পর থেকেই সংক্রান্তি এলেই হাজির হয়ে যায় কোনও না কোনও কাঁটা!
তবে কাঁটা না থাকলে শীত কতটা জমজমাট হয়, তার নমুনা গত ক’দিন ধরেই দেখছে দেশ। কলকাতার তাপমাত্রা নেমেছে ১০.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ২০১৮ সালের পর এ বারই কলকাতায় এত বেশি ঠান্ডা। ঠান্ডায় পাহাড়কেও টেক্কা রাজ্যের সমতলের। পর পর দু’দিন দার্জিলিংয়ের চেয়েও বেশি ঠান্ডা কোচবিহারের পুণ্ডিবাড়িতে। কালিম্পংয়ের চেয়ে বেশি ঠান্ডা পড়েছে পুরুলিয়ায়। দিল্লিতে পারদ নেমেছে ১.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। রাজধানীর সঙ্গে জোর পাল্লা ওড়িশার। রবিবার অন্ধ্র-লাগোয়া কোরাপুটের ছোট্ট টাউন সিমিলিগুড়ায় তাপমাত্রা নেমে গিয়েছে মাত্র ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। উত্তুরে হাওয়া আর পরিষ্কার আকাশের জোড়া অনুকূল শর্তপূরণ হওয়ায় হু হু করে নেমে যাচ্ছে পারদ। পরিস্থিতি এমনই, একটু উষ্ণতার জন্য জোর প্রার্থনায় শীতাকাতুরেরা।
মনে হচ্ছে, প্রকৃতি যেন প্রার্থনা শুনে ফেলেছে। তবে এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির পর্বটা সাময়িক হওয়ার সম্ভাবনা। জোড়া ঝঞ্ঝার প্রভাবে বৃষ্টি হতে পারে উত্তর ভারতে। কাশ্মীর, হিমাচল, উত্তরাখণ্ডে তুষারপাতের সম্ভাবনা। ফলে ঝঞ্ঝার ঝঞ্ঝাট মিটলেই আবার কাঁপন ধরাতে পারে হিমেল হাওয়া। সঞ্জীববাবুর কথায়, ‘‘তাপমাত্রা বেড়ে আবার কমবে।’’ মাঘের শীত বাঘের গায়ে, আশা রাখতেই পারেন শীতপ্রেমীরা।