Mental Health: এভাবে কেউ নিজেকে শেষ করে দেয়? পড়ুয়াদের আত্মহত্যার পরিসংখ্যান ভাবাচ্ছে ইউজিসিকেও

Student: ইউজিসি ও স্বাস্থ্যমন্ত্রক যতই কৌশল আনুক, অধ্যাপকরা বাড়তি দায়িত্ব না নিলে এই সমস্যা থেকে নিস্তার নেই, মত বিশেষজ্ঞদের।

Mental Health: এভাবে কেউ নিজেকে শেষ করে দেয়? পড়ুয়াদের আত্মহত্যার পরিসংখ্যান ভাবাচ্ছে ইউজিসিকেও
আত্মহত্যার প্রবণতা রুখতে নয়া স্ট্র্যাটেজি।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 09, 2023 | 2:01 PM

কলকাতা: ‘তোমাকে পেতেই হবে শতকরা অন্তত নব্বই, হতেই হবে একদম প্রথম, তার বদলে মাত্র পঁচাশি! পাঁচটা নম্বর কম কেন? কেন কম?’, জয় গোস্বামীর টিউটোরিয়ালে মুখে রক্ত তুলে বাবার এই প্রশ্নই ছিল ছেলের কাছে। আর উত্তরটা শেষ হয়েছিল, বাথরুমের অ্যাসিডে। এই অ্যাসিড আর আইজার কলকাতায় আত্মঘাতী গবেষকের অ্যাসিড কিন্তু এক। প্রকৃতি-ধরনে খানিক ফারাক থাকলেও দু’টোর রেজাল্ট এক। থ্রি ইডিয়টসের জয় লোবো বা আইজারের গবেষকের আত্মহত্যা, সবকিছুতেই শেষ পর্যন্ত প্রশ্নচিহ্নটা গিয়ে পড়েছে ‘সিস্টেমের’ পাশে। শিক্ষাব্যবস্থায় একটা বড়সড় পরিবর্তন প্রয়োজন, বারবার এই দাবি তুলেছেন শিক্ষামহলের একটা বড় অংশ। বারবার উঠে এসেছে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্ধকারময় দিকটার ছবি। এবার তাই শিক্ষাক্ষেত্রে আত্মহত্যা আটকাতে নড়েচড়ে বসেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (UGC)। দেশের সব কলেজের অধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের চিঠি পাঠিয়েছে ইউজিসি। যেখানে আত্মহত্যা আটকাতে ‘সুইসাইড প্রিভেনশন স্ট্র্যাটেজির’ কথা বলা হয়েছে। এই স্ট্র্যাটেজির মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে আত্মহত্যা ১০ শতাংশ কমিয়ে ফেলাই ইউজিসির লক্ষ্য।

শিক্ষাক্ষেত্রে আত্মহত্যার বাড়বাড়ন্ত এনসিআরবি রিপোর্টেই স্পষ্ট। গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যাবে শিক্ষাক্ষেত্রে ‘মড়কে’র আকার নিয়েছে আত্মহত্যা। এনসিআরবি ২০২০ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতি ৪২ মিনিটে আত্মঘাতী হয়েছেন একজন পড়ুয়া। হিসাবমতো রোজ ৩৫ জন পড়ুয়ার জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে আত্মহত্যার ফলে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই আত্মঘাতী হয়েছেন ১২২ জন। এক বছরে দেশে যতজন আত্মঘাতী হচ্ছেন তার প্রায় ৮ শতাংশই পড়ুয়া। কেন্দ্র ও রাজ্য, দুই সরকারই বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করেছে আত্মহত্যার প্রবণতায় দাড়ি টানতে। কিন্তু খুব একটা বড়সড় পরিবর্তন আনতে পারেনি কোনও পন্থাই। শিক্ষাক্ষেত্রে ক্রমশই চিন্তা বাড়াচ্ছে আত্মহত্যা। তাই স্বাস্থ্য মন্ত্রক ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের যৌথ উদ্যোগে এবার ‘সুইসাইড প্রিভেনশন স্ট্র্যাটেজি।’

সুইসাইড প্রিভেনশন স্ট্র্যাটেজির A টু Z

আত্মহত্যা আটকাতে একাধিক গুহরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। শিক্ষাক্ষেত্রে এই পুরো বিষয়টায় সহযোগিতা করছে ইউজিসি। আগামী ৫ বছরে প্রত্যেক জেলায় মনোরোগের বহির্বিভাগ চালু করবে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আগামী ৮ বছরের মধ্যে পাঠক্রমের সঙ্গে সংযুক্ত হবে মন খুশি রাখার পাঠ। সহজে কীটনাশক যাতে পড়ুয়ারা হাতে না পান, তা হবে অন্যতম উদ্দেশ্য। আত্মহত্যা আটকাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রশাসনকে কাজে লাগাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রক ও ইউজিসি।

‘বন্ধু হতে হবে অধ্যাপকদের’

ইউজিসি ও স্বাস্থ্যমন্ত্রক যতই কৌশল আনুক, অধ্যাপকরা বাড়তি দায়িত্ব না নিলে এই সমস্যা থেকে নিস্তার নেই, মত বিশেষজ্ঞদের। আইজার বা আইআইটির একাধিক ঘটনায় দেখা গিয়েছে, বারবার আত্মহত্যার ক্ষেত্রে অভিযোগ উঠেছে গবেষকের গাইডের বিরুদ্ধে। আইজার কলকাতায় গত এপ্রিল মাসেই অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় শুভদীপ রায়ের। তিনি যে পদ্ধতিতে আত্মহত্যা করেছিলেন, সেটিও অত্যন্ত ভয়ানক। ল্যাবে রাখা ছিল স্ক্যাবিজের ট্যাবলেট। শুভদীপের কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড। দু’টি একসঙ্গে মিশিয়ে ল্যাবেই বিষাক্ত কিছু তৈরি করেছিলেন তিনি বলে শোনা গিয়েছিল। যখন তাঁকে উদ্ধার করা হয়, তাঁর শরীর পুরো নীল হয়ে গিয়েছিল। ঠোঁটে কালশিটে। অভিযোগ উঠেছিল, গাইডের খারাপ ব্যবহারই নাকি শুভদীপকে এই মারাত্মক দিকে ঠেলে দিয়েছিল। তাই গাইডরা সহনশীল না হলে আরও অনেক শুভদীপ হারিয়ে যাবেন বলে মনে করে শিক্ষামহল।

শিক্ষাক্ষেত্রে অধ্যাপকদেকর বন্ধুর মতো করে মিশতে হবে গবেষক-পড়ুয়াদের সঙ্গে। অধ্যাপক নন্দিনী মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “কর্মসংস্থান না থাকার হতাশাও গ্রাস করছে পড়ুয়াদের, কাজের সুযোগ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি অধ্যাপকদের আরও বেশি করে ঘনিষ্ঠতা ও বন্ধুত্ব বাড়াতে হবে পড়ুয়াদের সঙ্গে। যাতে তাঁদের কখনওই হতাশা গ্রাস না করতে পারে।” অধ্যাপক ইমনকল্যাণ লাহিড়ীর মতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে পড়ুয়ারা আসেন। কোনওভাবেই তাঁরা যাতে বৈষম্যের শিকার না হন, সেদিকে আরও জোর দিতে হবে। তাহলেই এই সমস্যার সুরাহা মিলতে পারে।