রাজ্য মন্ত্রিসভার ভাষণের খসড়ায় কী কী প্রসঙ্গের উল্লেখ? যা নাও পাঠ করতে পারেন রাজ্যপাল

রাজনৈতিক প্রশাসনিক মহলের কৌতুহল, তিক্ততার রেশ কি বিধানসভার অধিবেশন কক্ষে থাকবে? আপাতত এই প্রশ্নে উত্তাল বঙ্গ রাজনীতি।

রাজ্য মন্ত্রিসভার ভাষণের খসড়ায় কী কী প্রসঙ্গের উল্লেখ? যা নাও পাঠ করতে পারেন রাজ্যপাল
ফাইল ছবি
Follow Us:
| Updated on: Jul 02, 2021 | 10:29 AM

কলকাতা: রাজ সংঘাতের মধ্যেই বিধানসভায় নজর গোটা রাজ্যের। প্রথা অনুযায়ী রাজ্য মন্ত্রিসভার লিখিত ভাষণ পাঠ করেই কি অধিবেশন শুরু করবেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় (Governor Jagdeep Dhankhar)? নাকি তাতে সহমত হবেন না? রাজনৈতিক প্রশাসনিক মহলের কৌতুহল, তিক্ততার রেশ কি বিধানসভার অধিবেশন কক্ষে থাকবে? আপাতত এই প্রশ্নে উত্তাল বঙ্গ রাজনীতি।

এক নজরে দেখা নেওয়া যাক রাজ্য মন্ত্রিসভার লিখিত ভাষণে কী কী থাকতে পারে?

♦ ১. একটি রাজনৈতিক দলের ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টা বাংলার মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। ♦ ২. প্রবল বাধা পেরিয়ে তৃতীয় বার ক্ষমতায় তৃণমূল। ♦ ৩. বিজেপির কেন্দ্রীয় এজেন্সি ব্যবহার। ♦ ৪. বিজেপির বাংলা ভাগের চক্রান্ত। ♦ ৫. ভোটের পর থেকেই রাজ্য সরকারকে বিব্রত করা। ♦ ৬. যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো নষ্ট করেছে কেন্দ্র। ♦ ৭. বাংলাকে গোটা দেশে বদনামের চক্রান্ত করা হচ্ছে।

প্রথা হচ্ছে, সরকার তথা মন্ত্রিসভা যে ভাষণ লিখে দেয়, তা পাঠ করেন রাজ্যপাল। আর তা দিয়েই শুরু হয় বিধানসভার অধিবেশন। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজ্যপাল যদি সেটা পাঠ করেন, সরকারের কোনও বিরুদ্ধাচরণ না করেন, তাহলে সংঘাতের কোনও প্রশ্ন থাকে না। আর যদি তা না হয় সংঘাত অনিবার্য।

কী বলছেন ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায়?

এর আগে দেখা গিয়েছিল, কেরলের রাজ্যপাল মন্ত্রিসভার অনুমোদিত ভাষণ তিনি পাঠ করেননি। এবার কী পদক্ষেপ করতে পারেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়? সেদিকে তাকিয়ে বাংলা। বিশ্লেষকদের কথায়, প্রস্তুত তৃণমূলও। এ প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা তথাগত রায় তাঁর প্রাক্তন অভিজ্ঞতা থেকে বলছেন, “এটা আইনের বিষয়। রাজনীতির বিষয় নয়। যে খসড়া রাজ্যপাল পাঠ করবেন, তার চূড়ান্ত রূপ রাজ্যপালই দিতে পারেন। মুখ্যমন্ত্রী তো সংবিধানের ওপর নন। সংবিধানের কোথাও লেখা নেই যে মন্ত্রিসভার খসড়ার একটা লাইনও বাদ দেওয়া যাবে না। পড়ছেন যিনি, তাঁর ওপরই নির্ভর করছে গোটাটা।”

ঠিক এরকমই একটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল ২০২০ সালের বাজেট অধিবেশনে। প্রারম্ভিক ভাষণ, যা রাজ্য মন্ত্রিসভা অনুমোদিত হয়ে রাজ্যপালের কাছে যায়, প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী, রাজ্যপালের তা পড়ার কথা, তিনি কি আদৌ তা করবেন? ঠিক এই আশঙ্কা গত বছরও বাজেট অধিবেশনে হয়েছিল। কিন্তু সেবার রাজ্যপাল তা করেননি। মন্ত্রিসভার অনুমোদিত ভাষণই তিনি পাঠ করেন।

পূর্বের প্রথা ভাঙার দৃষ্টান্ত সাল ১৯৬৯, পঞ্জাব বিধানসভা অধিবেশন

বিশ্লেষকরা এ প্রসঙ্গে তুলে ধরেছেন ১৯৬৯ সালের ঘটনা। তৎকালীন পঞ্জাবের রাজ্যপাল ধরমবীর মন্ত্রিসভার অনুমোদিত ভাষণ থেকে ‘প্রথম যুক্তফ্রন্ট সরকার অনৈতিক ভাবে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। এটা অগণতান্ত্রিক আচরণ…’ প্রসঙ্গটি বিষয়টি বাদ দিয়ে দেন। কারণ সেক্ষেত্রে তাঁর নামও উল্লেখ ছিল।

সাল ২০২০, কেরল বিধানসভা অধিবেশন

২০২০ সালে কেরলের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান তিনি মন্ত্রিসভার অনুমোদিত ভাষণে একটি বিষয় সংযোজন করেছিলেন। তিনি উল্লেখ করেন, “মুখ্যমন্ত্রী চান আমি সিএএ-এর বিরোধিতা করে এই বিষয়টি পাঠ করি। আমি পাঠ করলাম। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে এর বিরোধিতা করি না। মন্ত্রিসভার লিখিত ভাষণে রয়েছে বলেই পাঠ করলাম। কিন্তু আমি সহমত নই।”

সাল ২০১৮, কেরল বিধানসভা অধিবেশন

২০১৮ সালে কেরলের রাজ্যপাল ভি সত্যাশিভম মন্ত্রিসভার লিখিত ভাষণ পাঠের সময়ে দুটি বিষয় উহ্য রাখেন। একটি হল. কেরলে কিছু সাম্প্রদায়িক শক্তি বিরোধ বাঁধানোর চেষ্টা করছে। সরকার তা হতে দেয়নি। এই লাইনটি তিনি উহ্য রাখেন। আরেকটি বিষয় তিনি পাঠ করেননি। তা হল কেন্দ্র যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছে।

আরও পড়ুন: রাজ সংঘাতের মাঝেই বিধানসভায় বাজেট অধিবেশনের সূচনা! রাজ্যপালের পদক্ষেপ নিয়ে কি প্রস্তুত শাসকদল?

অর্থাৎ বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজ্য মন্ত্রিসভার লিখিত ভাষণ পুরোপুরি পাঠ না করার ক্ষেত্রে উদাহরণ রয়েছে একাধিক। এক্ষেত্রে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় কী পদক্ষেপ করেন, সেটা দেখার।