Winter Weather: নভেম্বরে ঠান্ডায় কাঁটা, শীতপ্রেমীদের জন্য কেন দুঃসংবাদ শোনাল আবহাওয়া দফতর?
Winter Weather: মৌসম ভবনের পূর্বাভাস বলছে, নভেম্বরে রাতের তাপমাত্রা অর্থাত্ সর্বনিম্ন তাপমাত্রার গড় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকবে। একই আভাস দিনের তাপমাত্রা অর্থাত্ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নিয়েও।
কমলেশ চৌধুরী
কলকাতা: কথায় বলে, মর্নিং শোজ দ্য ডে। সকাল দেখলে বোঝা যায়, দিনটা কেমন যাবে। সবসময় কি তাই হয়? আবহাওয়ার (Weather) মতিগতি তো সে কথা বলছে না। দিনকয়েক আগে দশ বছরের মধ্যে অক্টোবরের শীতলতম দিন পেয়েছিল কলকাতা (Kolkata)। তা বলে নভেম্বরে জমিয়ে ঠান্ডা পড়বে, সেই আশা কম। প্রায় নেই বললেই চলে। শীতপ্রেমীদের জন্য এমনই দুঃসংবাদ আবহাওয়া দফতরের (Weather Department)। সোজা কথায়, নভেম্বরে ঠান্ডায় কাঁটা।
নভেম্বরের ঠান্ডা নিয়ে কী দুঃসংবাদ?
মৌসম ভবনের পূর্বাভাস বলছে, নভেম্বরে রাতের তাপমাত্রা অর্থাত্ সর্বনিম্ন তাপমাত্রার গড় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকবে। একই আভাস দিনের তাপমাত্রা অর্থাত্ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নিয়েও। শীতের মরসুমে রাতের তাপমাত্রা কতটা নামল, সেটাই আসল। সেখানেও পারদপতনে কাঁটা! কলকাতার কথাই ধরা যাক। নভেম্বরে আলিপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার গড় ১৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পূর্বাভাস যা তাতে মাসের বেশিরভাগ দিনই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে থাকবে। কিছু দিন তার নীচে তাপমাত্রা নামবে না, এমন নয়। তবে সেই প্রবণতা দেখার সুযোগ কম।
এমনিতে নভেম্বরে কোনও বছরই শীত আসে না দক্ষিণবঙ্গে। কলকাতা বা দক্ষিণবঙ্গে শীতের যাত্রা শুরু হতে হতে মাঝ ডিসেম্বর লেগে যায়। নভেম্বরে শুরু হয় শীতের ‘ট্রেলার’। কিছু দিন ঠান্ডার আমেজ বাড়ে। পরে আবার কমে। যেমন, ২০১২, ২০১৪, ২০১৭ সালে কলকাতাতেই ১৫ ডিগ্রির নীচে নেমে গিয়েছিল পারদ।
এ বার যেমন অক্টোবরের শেষেই শুষ্ক হাওয়ার টানে একরাতের ট্রেলার দেখিয়েছে প্রকৃতি। ২৯ অক্টোবর আলিপুরের তাপমাত্রা নামে ১৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। অক্টোবরেই ২০ ডিগ্রির নীচে পারদ, গত দশ বছরে এরকম দেখেনি মহানগর। কিন্তু তার পর আর তাপমাত্রা কমেনি। উল্টে বেড়েছে। নভেম্বরের পয়লা দিনে আলিপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তুরে হাওয়া ঢুকছে না, এমন নয়। কিন্তু তার জোর কম। মধ্য ভারতের উপর উচ্চচাপ বলয় তৈরি হয়েছে। উত্তুরে বাতাসের জোর কিছুটা বাড়বে। তাতে এক-আধ ডিগ্রি কমতে পারে, তার বেশি নয়।
শুধু বাংলাই নয়, নভেম্বরে জমিয়ে ঠান্ডার আশা নেই গোটা দেশেই। পূর্বাভাস বলছে, রাজস্থান ছাড়া বাকি সব রাজ্যেই রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকতে পারে। ঠান্ডা হাওয়ার জন্য বাংলাকে তাকিয়ে থাকতে হয় উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ভারতের দিকেই। ফলে জোগান কম থাকলে, ঠান্ডাই বা বাড়বে কী ভাবে!
আরও একটি শর্ত প্রতিকূলে যেতে পারে। মৌসম ভবনের পূর্বাভাস বলছে, রাজ্যের কিছু কিছু জায়গায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হতে পারে নভেম্বরে। অর্থাত্, বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকবে। ভাল ঠান্ডার জন্য দরকার শুকনো বাতাস। কিন্তু জোলো বাতাসের দাপট থাকলে শুকনো বাতাস কোণঠাসা হতে পারে। মৌসম ভবনের পূর্বাভাসে রয়েছে এই অঙ্কও।
এই পূর্বাভাস কীসের ইঙ্গিত?
মৌসম ভবনের অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘প্রতি বছরই উষ্ণায়নের প্রবণতা দেখছি আমরা। একটি বছর পরের বছরকে টপকে যাচ্ছে। এই যে নভেম্বরেও দেশে তাপমাত্রার গড় স্বাভাবিকের বেশি থাকার সম্ভাবনা, এটা সেই প্রবণতার অঙ্গ ধরা যেতে পারে। আরও একটা বিষয় স্পষ্ট, বিশ্ব উষ্ণায়নের ছাপ যত না সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় পড়ছে, তার চেয়ে বেশি পড়ছে সর্বনিম্ন তাপমাত্রায়। কারণ উষ্ণায়ন হলে বাষ্পীভবন বাড়বে। ফলে মেঘে ঢাকা থাকার প্রবণতা বাড়বে। আর আকাশে মেঘ থাকলেই রাতের তাপমাত্রা কমার সুযোগ পাবে কম, উল্টে বাড়বে।’
গত ১০ বছরের মধ্যে উষ্ণতম নভেম্বর ছিল ২০১৯ সালে। কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে নামেনি। সে বার গোটা নভেম্বরে ১৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় কলকাতায়। স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ গুণ বেশি। বৃষ্টি মানেই মেঘ, জোলো বাতাস। ততই কোণঠাসা শুকনো বাতাস। কোণঠাসা ঠান্ডাও। এ বার কি ঊনিশের পুনরাবৃত্তি? যদি হয়, ডিসেম্বর-জানুয়ারির দিকে চেয়ে থাকা ছাড়া গতি নেই শীতপ্রেমীদের।