Lifestyle Exhibition: ভিন্ন স্বাদের হস্তশিল্পের প্রদর্শনী শহরে, ভবিষ্যতের উদ্যোগপতিদের জন্য আয়োজন বাঙালি মহিলার
Lifestyle Exhibitions In Kolkata: প্রদর্শনীতে থাকবেন লোকসঙ্গীত সংগ্রাহক চন্দ্রা মুখোপাধ্যায়। যিনি ভারত-বাংলাদেশ থেকে ‘মেয়েদের গান’, মাটির গান এবং লোকগান সংগ্রহের কাজ করে চলেছেন নিরলসভাবে। হারিয়ে যাওয়া লোকবাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে লোকগান করেন, এমন একটি দলও থাকছে। এছাড়াও থাকছে লোভনীয় সব খাবারদাবার, বাড়িতে বানানো কেক-কুকিজ ইত্যাদি

রেশমী প্রামাণিক
পুজোর আগে চারিদিকে এগ্জিবিশনের ছড়াছড়ি। বছরের এই একটা সময়ের জন্য সকলেই মনে-মনে কাউন্টডাউন করে চলেন। পুজোকে ঘিরে কত মানুষের কত স্বপ্ন থাকে। কাছের মানুষদের সঙ্গে দেখা, বন্ধুদের সঙ্গে পেন্ডিং আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া… সব কিছু তুলে রাখা থাকে পুজোর এই কয়েকটা দিনের জন্য। চারিদিকে আলোর রোশনাই, ঢাকের বাদ্যি, কাশের মেলা, ভোরের শিউলি, পুজোবার্ষিকী… এক লহমায় আমাদের মন ভাল করে দেয়। এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁদের পুজোর এই বিক্রিবাট্টাকে কেন্দ্র করেই সারাবছর সংসার চলে। উৎসব সবার আর এই উৎসবের আনন্দ সকলের মধ্যে ভাগ করে নেওয়াটাই হল আমাদের উদ্দেশ্য। আশ্বিনের এমন উৎসবের আবহেই ‘মিলন উৎসব’-এর আয়োজন করেছে ‘খামখেয়াল’। চিরাচরিত লাইফস্টাইল এগ্জিবিশনের তুলনায় ‘খামখেয়াল’-এর উদ্যোগ একেবারে ভিন্ন। এখানেও কেনাবেচা হয়, ক্রেতার সঙ্গে বিক্রেতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তবে এখানে মূল গুরুত্ব দেওয়া হয় শিল্পকে—অর্থলাভ বা লভ্যাংশকে নয় শুধুমাত্র।
কোভিডের সময়কাল থেকেই পথচলা শুরু এই ‘খামখেয়াল’ গ্রুপের। এই ফেসবুক গ্রুপের লক্ষ্য হস্তশিল্পের মাধ্যমে তৈরি করা বিভিন্ন শিল্পকর্ম সোশ্যাল মিডিয়ার সূত্রে ছড়িয়ে দেওয়া। এখানে এমন কিছু মানুষ এসে একত্রিত হয়েছেন, যাঁরা চেনা স্রোতের বাইরে পা রাখতে চেয়েছেন। কেউ ধরাবাঁধা চাকরির বাইরে গিয়ে নিজের কিছু একটা করতে চেয়েছেন। কেউ আবার চাকরি খুইয়ে আঁকড়ে ধরেছেন নিজের ভালবাসাকে। নিজের ভালবাসা আর পরিশ্রমের জোরে নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরি করেছেন। এঁদের কাছে ব্যবসা মানে কোটি-কোটি টাকার লেনদেন বা কোনও উচ্চপদে আসীন থেকে কর্পোরেট চাকরি নয়… ভালবেসে নিজের শিল্পকে অন্য পাঁচটা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া এবং তাঁদের মধ্যে শিল্পের বোধ, উৎসাহ জাগিয়ে তুলতেই অক্লান্ত ভাবে কাজ করে যাওয়া। কথাপ্রসঙ্গে এমনই জানালেন ‘খামখেয়াল’-এর কর্ণধার সুঞ্জনা। সৃজনশীল মানুষদের সৃষ্টিকে তুলে ধরার কাজটা ঠিক কীভাবে করে থাকে এই ‘খামখেয়াল’? সুঞ্জনা TV9 বাংলাকে যা জানালেন, তার সারমর্ম মোটামুটি এরকম: বাজার থেকে ১০০ টাকায় শাড়ি কিনে এনে ২০০ টাকায় বিক্রি করা নয়, মধুবনী-মান্ডালা-গোন্ড আর্ট এসব ক্যানভাসের পরিবর্তে টি-শার্ট, হোমডেকর, ব্যাগে এঁকে মানুষের কাছে পৌঁচ্ছে দেওয়ার কাজ করছে এই গ্রুপ। এবার এই দলেরই প্রদর্শনী দেখবে কলকাতা। হ্যান্ডমেড নানাবিধ সামগ্রী পাওয়া যাবে ‘খামখেয়াল’-এর এই এগ্জিবিশনের। এখানে কোনও মিডলম্যান বা মধ্যসত্ত্বভোগী থাকেন না, যিনি শিল্পকর্মটির জন্ম দিচ্ছেন, সরাসরি ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজটাও তাঁরই।
৬-৮ অক্টোবর পর্যন্ত গ্যালারি গোল্ড (রবীন্দ্র সরোবর লেকের নিকটে অবস্থিত)-এ চলবে ‘খামখেয়াল’-এর এই লাইফস্টাইল এগ্জিবিশন। এবার মোট ১৮জনের কাজ তুলে ধরা হবে প্রদর্শনীতে। সুঞ্জনা TV9 বাংলাকে বলেছেন, “প্রত্যেকেই নিজ-নিজ কাজের মাধ্যমে যেন এক-একটা ব্র্যান্ড হয়ে উঠেছেন। এই প্রদর্শনীর সবথেকে উল্লেখযোগ্য দিক সম্ভবত এটাই।” হাতে আঁকা গয়নার শিল্পী, ক্লে আর্টিস্ট, রেজ়িন আর্টিস্ট… এঁরা যেমন থাকছেন একদিকে, তেমনই অন্যদিকে থাকছে এমব্রয়ডারি, কুরুশের সেকশন, হ্যান্ড পেন্টিং, হোমডেকর, স্কাল্পচার ইত্যাদি। এছাড়াও প্রদর্শনীর তরফে নেওয়া হচ্ছে অসাধারণ কিছু উদ্যোগ। যেমন, প্রদর্শনীতে উপস্থিত থাকবেন একজন আইনজীবী। কিন্তু হস্তশিল্পের প্রদর্শনীতে হঠাৎ আইনজীবী কেন? উত্তরটা দিলেন সুঞ্জনা, “আইনজীবীকে অতিথি হিসেবে আহ্বান জানানোর কারণ তিনি স্টার্ট-আপ, ট্রেড লাইসেন্স-সহ অন্ত্রোপ্রনিওশিপের বিভিন্ন আইন নিয়ে সরাসরি কথা বলবেন শিল্পীদের সঙ্গে।”
প্রদর্শনীতে থাকবেন লোকসঙ্গীত সংগ্রাহক চন্দ্রা মুখোপাধ্যায়। যিনি ভারত-বাংলাদেশ থেকে ‘মেয়েদের গান’, মাটির গান এবং লোকগান সংগ্রহের কাজ করে চলেছেন নিরলসভাবে। হারিয়ে যাওয়া লোকবাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে লোকগান করেন, এমন একটি দলও থাকছে। এছাড়াও থাকছে লোভনীয় সব খাবারদাবার, বাড়িতে বানানো কেক-কুকিজ ইত্যাদি। এখানেই শেষ নয়, সুঞ্জনা আরও বললেন, “এবারে আমাদের থিম হল একে-উপরের খোঁজ নেওয়া। আজকের ব্যস্ত দিনে আমাদের কারও খোঁজ নেওয়ার সময় নেই। আমরা একে-অন্যের খোঁজ নিতে ভুলে যাচ্ছি। সেখান থেকেই যে সব শিল্পী এই প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছেন, তাঁদের জন্য থাকছে পোস্টকার্ডে হাতে লেখা বিশেষ একটি চিঠি আর কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুল।” নিজের স্থানীয় বা আঞ্চলিক শিল্পকে চিনতে, শিল্পীদের শ্রমের মর্যাদা দিতে এবং অন্যরকম একটা মন নিয়ে বাড়ি ফিরতে চাইলে সপ্তাহান্তে অবশ্যই একবার ঘুরে আসুন ‘খামখেয়াল’-এর এই প্রদর্শনী থেকে।





