Maharani Gyatri: মিনিমালিজমই চাবিকাঠি! শিফন শাড়ি আর উজ্জ্বল শেডের লিপস্টিকে ফ্যাশনের নতুন নিয়ম লিখেছিলেন এই মহারানি
New Fashion Rules: হেয়ারস্টাইল, মেকআপ এবং শিফনের শাড়িতে তিনি হয়ে উঠেছিলেন অদ্বিতীয়া! সবচাইতে বড় কথা, সযত্নে প্রস্তুত ও কারুকার্যযুক্ত যে কোনও গাউনের থেকে তাঁর সামান্য সাজের আয়োজন ছিল অনেক বেশি দীপ্ত!
অসামান্য ফ্যাশন আইকন (Fashion Icon), দক্ষ অশ্বারোহী, তুখড় উকিল, ক্ষমতাশালী রাজনীতিক, জনহিতৈষী এবং বিশ্বের অন্যতম সুন্দর মহিলা— সবমিলিয়ে নারী ক্ষমতায়নের উজ্জ্বল প্রতিমূর্তি মহারানি গায়ত্রী দেবী (Gayatri Devi)। গায়ত্রীদেবীর তুলনা একমাত্র তিনিই ছিলেন। তাঁর আভিজাত্যের আখ্যান লেখা হয়েছিল নক্ষত্রের গায়ে। কোচবিহারের রাজকুমারী ছিলেন তিনি। বাবা জিতেন্দ্র নারায়ণ এবং মা ছিলেন বরোদার রাজকুমারী ইন্দিরা রাজে। মহারাজা দ্বিতীয় সওয়াই মান সিংহকে বিয়ে করে তিনি জয়পুরের তৃতীয় মহারানি (Maharani) হন। বন্ধুরা এবং পরিবারে সকলে তাঁকে আদর করে আয়েষা নামে ডাকত। তাঁর রুচিশীল ব্যক্তিত্ব সকলকেই আকর্ষণ করতো চুম্বকের মতো। বাহ্যিক নমনীয়তা সত্ত্বেও ব্যক্তিত্ব ছিল ইস্পাতকঠিন। নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রক ছিলেন তিনি নিজেই। নিজের অস্তিত্ব এবং বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য খুঁজে বের করেছিলেন ও সেই পথে নিজেকে চালিতও করেছিলেন।
সেই সময়ে গায়ত্রীদেবীর অননুকরণীয় ভঙ্গিতে শিফনের শাড়ি পরা রীতিমতো ট্রেডমার্ক হয়ে গিয়েছিল! সমগ্র বিশ্বেই তাঁর ফ্যাশন পেয়েছিল সমাদর। তাঁর অনিন্দ্যসুন্দর নান্দনিক বোধ ছিল রাজসিক বিচারবোধের প্রতিফলন! তাঁর সাজপোশাকে ফ্যাশন সম্পর্কে জ্ঞান বোঝা যেত পুরোমাত্রায় অথচ ঝুটা ও অতিরিক্ত বৈভব প্রদর্শনের বাহুল্য ছিল না। একাধিক রঙের চমৎকার শিফনের শাড়ির সঙ্গে মার্জিত ব্লাউজের সাজ সম্পূর্ণ হতো সযত্নে বাছাই করা লিপস্টিক-এর সাহায্যে। মুক্তো এবং পান্নার অলঙ্কার ছিল তাঁর প্রিয়। তাঁর এই অনন্য ফ্যাশন দীর্ঘদিন ধরে ছিল তাঁরই একার সম্পদ। হেয়ারস্টাইল, মেকআপ এবং শিফনের শাড়িতে তিনি হয়ে উঠেছিলেন অদ্বিতীয়া! সবচাইতে বড় কথা, সযত্নে প্রস্তুত ও কারুকার্যযুক্ত যে কোনও গাউনের থেকে তাঁর সামান্য সাজের আয়োজন ছিল অনেক বেশি দীপ্ত!— এমনটাই মত একাধিক ফ্যাশন বিশেষজ্ঞর।
এমনকী বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার সব্যসাচী মুখোপাধ্যায় অবধি মহারানি গায়ত্রী দেবীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সীমিত সংস্করণের কিছু শাড়ির নকশা তৈরি করেছিলেন! তাঁর ব্যক্তিত্ব এতটাই তীব্র ছিল যে মনে হতো তাকে বেষ্টন করে আছে এক জ্যোতি! তিনি ভারতীয় শিল্পকে মর্যাদা দিয়েছিলেন।— এমনটাই জানাচ্ছেন একালের একাধিক ভারতীয় ডিজাইনার। মনে করা হয় গায়ত্রী দেবীর মা ইন্দিরা দেবীই শিফন শাড়িকে ফ্যাশনের মূলস্রোতে নিয়ে আসেন। আয়েষা শুধু সেই ট্রেন্ড অনুসরণ করেছিলেন মাত্র! শিফনের উৎপত্তিস্থল প্যারিস। রেশম থেকে প্রস্তুত অত্যন্ত কোমল এবং সূক্ষ্মভাবে বোনা বস্ত্র হল শিফন! অতীতে শিফন এবং বিলাসিতা ছিল সমার্থক! অবশ্য আজকাল শিফন রেশম ছাড়াও সুতি, নাইলন এবং পলিয়েস্টার থেকেও তৈরি হয়।
গায়ত্রীদেবী বেপরোয়া শিফনের শাড়ি পরতেন। মূলত হালকা রং ছিল তাঁর প্রিয়। এমনকী প্রচলিত অনুষ্ঠানগুলিতেও নিয়মমাফিক ও অনুমানযোগ্য বেনারসির বদলে শিফনেই তাঁকে দেখা যেত! তাঁর সমসাময়িক বেশিরভাগ মহিলাই লম্বা চুল ও খোঁপা করতে পছন্দ করতেন, সেখানে গায়ত্রীদেবী স্বচ্ছন্দ ছিলেন বব কাটে! ফলে তাঁকে দেখেই বহু ভারতীয় মহিলা হেয়ারস্টাইল নিয়ে গবেষণায় আগ্রহী হয়। তিনি একটু কোমল এবং আলতো মেকআপের সঙ্গে ওষ্ঠধরে উজ্জ্বল শেড-এর লিপস্টিক ছোঁয়াতে পছন্দ করতেন! বিশেষ করে লাল এবং গাঢ় লাল!
তাঁর অনবদ্য এবং সূক্ষ্ম ফ্যাশন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আপনিও ওয়্যারড্রোবকে বানিয়ে তুলতে পারেন আভিজাত্যপূর্ণ! ওয়্যারড্রোবে রাখতে পারেন—
• শিফন শাড়ি: আইভরি, পাউডার ব্লু, পিঙ্ক, টারকোয়েজ ইত্যাদি রঙের শিফন শাড়ি এই গরমে দারণ উপযোগী হবে! সঙ্গে নির্বাচন করুন স্টাইলিশ ব্লাউজ। গ্রীষ্মে শিফনের শাড়ি আর স্টাইলিশ ব্লাউজ অনেকেরই ঘাম ঝরাবে নিশ্চিত!
• মুক্তো এবং পান্না: গলায় পান্না কিংবা মুক্তোর হার সবসময়েই ক্লাসিক! অনুষ্ঠান বাড়ি তো বটেই এমনকী কর্মস্থলেও পরা যায় মুক্তো আর পান্নার হার।
• মেকআপ: মিনিমালিজমই চাবিকাঠি! অর্থাৎ মেকআপ হবে সামান্য! ওই সামান্য মেকআপের মূল কেন্দ্রবিন্দু হবে ঠোঁট! পাপড়ি কোমল ঠোঁটকে আরও পরিস্ফুট করে তুলতে বাছুন একটু উজ্জ্বল রঙের লিপস্টিক! ব্যস, নজর কাড়তে এটুকুই আপনার চাই।
• কেশবিন্যাস: সবসময় লম্বা চুল উপকার করে না। মাঝেমধ্যে তা উসকোখুশকোও হয়ে পড়ে। তার চাইতে শর্ট হেয়ার স্টাইল নিয়েও আত্মাবিশ্বার্সে পূর্ণ হওয়া যায়। তবে লম্বা চুল কাটতে না চাইলে ফোক্স বব হেয়ারস্টাইলও করতে পারেন।