British Food Recipe Part II: খানা খানদানি-পর্ব ১৮, ভগিনী নাইটিঙ্গেলের পাত আর ব্রিটিশ রাজন্যের মৃগয়া শুরুর আগের খানা 

নীলাঞ্জন হাজরা  চার্লস ফ্রাঙ্কাতেলি রানিমাকে কেমন খানা খাওয়াতেন, তার দুরন্ত কিছু উদাহরণ আছে আর এক কেতাবে—Dinner at Buckingham Palace: Secrets and Recipes from the reign of Queen Victoria to Queen Elizabeth II. বইটি সংকলন ও সম্পাদনা করেছেন পল ফিশম্যান ও ফিয়োরেলা বুসোনি। চার্লস অলিভার নামের এক ভ্দ্রলোক ষাট বছরেরও বেশি ব্রিটিশ রাজন্যের কর্মচারী ছিলেন। এ […]

British Food Recipe Part II: খানা খানদানি-পর্ব ১৮, ভগিনী নাইটিঙ্গেলের পাত আর ব্রিটিশ রাজন্যের মৃগয়া শুরুর আগের খানা 
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 02, 2022 | 7:22 AM
নীলাঞ্জন হাজরা 
চার্লস ফ্রাঙ্কাতেলি রানিমাকে কেমন খানা খাওয়াতেন, তার দুরন্ত কিছু উদাহরণ আছে আর এক কেতাবে—Dinner at Buckingham Palace: Secrets and Recipes from the reign of Queen Victoria to Queen Elizabeth II. বইটি সংকলন ও সম্পাদনা করেছেন পল ফিশম্যান ও ফিয়োরেলা বুসোনি। চার্লস অলিভার নামের এক ভ্দ্রলোক ষাট বছরেরও বেশি ব্রিটিশ রাজন্যের কর্মচারী ছিলেন। এ বই আদতে তাঁর সংগ্রহে থাকা অজস্র দলিল থেকে বাছাই করা কিছুর সংকলন।
ফ্রাঙ্কাতেলি নির্ঘাত বাকিংহ্যামে পা রেখেই বুঝে ছিলেন এ প্রাসাদে হিন্দের গন্ধের ঝড় বইছে। কাজেই রানিহেঁশেলেও তার কিছুটা অন্তত খুশবু থাকা দরকার। তিনটি কেতাব লিখেছিলেন এই কিংবদন্তি শেফ। তিনটিই জোগাড় করতে পেরেছি। The Modern Cook: A Practical Guide to the Culinary Art আর The Cook’s Guide and Housekeeper’s and Butler’s Assistant, এ দু’টি নির্ঘাত রাজন্য ও উজির নাজির জমিদারদের হেঁশেল সামলাতে হয় তাঁদের জন্য। সেটা নাম থেকেই পষ্ট। খানার শিল্প খেটে খাওয়া মানুষের হেঁশেলে শোভিত বা আস্বাদিত হতে পারে না, কিংবা তাঁদের ঘর-গেরস্তিতে হাউসকিপার বা বাটলারও থাকেন না। কিন্তু তুখোড় বুদ্ধিমান ফ্রাঙ্কাতেলি বুঝেছিলেন, রাজা-বাদশা-জমিদার-জোতদারদের সংখ্যা আর কতই বা। আসল বাজার তো সাধারণের। তাই তাঁর তৃতীয় কেতাবটির নাম একেবারে সোজা সাপটা—  A Plain Cookery Book for the Working Classes। তিনটি পাশাপাশি খুলে পড়লে দারুণ একটা মজা চোখে পড়ে। খেটে-খাওয়া শ্রেণির কুকারিবুকটির প্রথম তিনটি খানার নাম — Boiled Beef, Economical Pot Liquor Soup, Potato Soup। Modern Cook-এ ৬৫ পাতা সস্, গ্রেভি, গার্নিশ এ সব পার করে স্যুপের অধ্যায়ে ঢুকে পাই— Spring Soup, Spring Soup a la Vertpre, Jardiniere Soup। আবার Cook’s Guide-এও ঠিক অনুরুপ বহু পৃষ্ঠা পার করে পৌঁছই স্যুপে— Julienne Soup, Jardiniere Soup, Brunoise Soup। নামের বাহারের তারতম্য লক্ষ করুন। শেষ দু’টির নাম থেকে বোঝা অসম্ভব স্যুপগুলি কিসের!
আর এই নামের রোমহর্ষক অরণ্যে মডার্ন কুক-এ ১১টি, এবং কুক্’স গাইড-এ একটি রান্নার লেজে লেখা আছে ‘indienne’ — ভারতীয়, যেমন ভারতীয় খানার কথা আমি অন্তত বাপের জম্মে শুনিনি। কিন্তু ওই যে রানিমার ভারতপ্রেম! পাতে আজ ‘কোদ আ ল্যাঁদিয়েন’, ভারতীয় কেতায় কড মাছ (খেয়েছেন নাকি কোনও দিন?!) পড়েছে যেনে তাঁর চাঁদপানা মুখ থেকে কেমন গদগদ জ্যোৎস্না ঝরে পড়ছে, তা কল্পনা করতে অসুবিধা হয় না। আর যে সাম্রাজ্যে কখনও সূর্য অস্ত যায় না, তার দণ্ডমুণ্ডের কর্ত্রী খুশি হলে যাঁর ওপর খুশি তাঁর ভাগ্যে কী থাকতে পারে, তা-ও কল্পনা করা কঠিন নয়। কাজেই যেমন প্রাণ চায় একটা সুস্বাদু খানা পাকিয়ে দাও তার পিছনে ‘অ্যাদিয়েন’ জুড়ে। নইলে এমন মুর্গির ঝোল আর ভাত কোনও ভারতীয় কস্মিন কালে খেয়েছে?—
চিকেন্স আ ল্যাঁদিয়েন (ভারতীয় কেতায় মুর্গি)
দু’টো মুর্গি নিন। প্রত্যেকটার ডানা দু’টো আর পা দু’টো একে-অপরের সঙ্গে শক্ত করে বেঁধে নিন। বুকের মাংসে ভাল করে চর্বি ঢুকিয়ে দিন। সিদ্ধ করার একটা উপযুক্ত পাত্রে রাখুন। সঙ্গে দিন একটা গাজর আর দু’টো লবঙ্গ গুঁজে-দেওয়া একটা পেঁয়াজ, আর পার্সলে ইত্যাদি পাতার একটা গোছা এক সঙ্গে বেঁধে। পাত্রে ভাল করে স্টক ঢালুন, চর্বি যেখানে ঢোকানো আছে, সেই অবধি যাতে ভরে যায়। একটা কাগজে মাখন মাখিয়ে মুর্গিগুলোর ওপরে রেখে দিন। হালকা আঁচে বসান। পাত্র ঢাকা দিয়ে তার ওপর কয়েকটা জ্বলন্ত কয়লার টুকরো রেখে দিন: মিনিট চল্লিশের মধ্যে সিদ্ধ হয়ে যাবে। মাখন মাখানো কাগজ সরিয়ে চর্বিটাকে আভেনে মিনিট দুয়েক দিয়ে শুকিয়ে নিন। মুর্গি দু’টোকে ভাল করে গ্লেজ করে নিন। থালার মাঝখানে রাখুন। সেগুলোকে ঘিরে গোল করে ডিমের মাপের রাইস ক্রকেট সাজিয়ে দিন। প্রত্যেকটা ক্রকেটের মাঝখানে মোরগের রাংয়ের মাংস জিভের মতো দেখতে পাওয়া যায়, এমনভাবে কেটে সাজিয়ে দিন। এগুলোকে গোল করে ঘিরে কুচি-কুচি করে কাটা দু’টো আম ফিনানসিয়্যার সস্-এর মধ্যে মিশিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
এখানে ভেঙে বলছি না, এই রান্নাটি রানির পাতে পরিবেশন করতে হলে আরও কী-কী আগেই রেঁধে রাখতে হবে (স্টক, ক্রকেট এবং ফিন্যানসিয়্যার সস্) আর কী ভাবে সেগুলি রাঁধতে হবে তা বললে আরও বোঝা যাবে পাগলামোটা ঠিক কোন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন ব্রিটিশ রানি-হেঁশেলের পাচকরা। সে বর্ণনা পড়তে-পড়তে আমার নিজভূম বাঁকুড়ার সেই মোক্ষম প্রবচনটি মনে পড়ল—ভিক্ষার দরকার নাই, কুকুরটি বাঁধ!
কে জানত এ হেন পাগলামোর খাঁজে গোঁজা আছে আমাদের সাধের খিচুড়ি! চোখেই পড়েনি। তবে এ কেতাবে নয়, অন্য একটিতে। যার নাম থেকেই পষ্ট যে ফ্রাঙ্কাতেলি সেটি লিখছিলেন ডাকসাইটেদের হেঁশেলের পাচকদের জন্য—The Cook’s Guide and Housekeeper’s and Butler’s Assistant। মাইনে করে জিভ্স রাখার রেস্তো তো আর ঠিক আম আদমির হয় না। ৫৭৪ পৃষ্ঠার বিপুল এ কুকবুকে লেখকের নামের তলায় ফ্রাঙ্কাতেলি লিখে দিতে ভোলেননি, ‘Chief Chef to Her Majesty The Queen’।
কিন্তু এখানে খিচুড়ির উপস্থিতি আমার চোখে না পড়ার কারণ কেতাবের কলেবর নয়, তার নাম। খিচুড়ি, খিচ্ড়ি, কিচিরি, কিস্রি, কেজরি এ সব কিচ্ছু নয়, ঊনবিংশ শতকের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কিংবদন্তি ভারতীয় খিচুড়ির বিলিতি রূপচর্চাকে জড়িয়ে দিয়েছেন এমন এক ব্যক্তির নামে যাঁর জীবন ছিল রাজন্যের সুরভিত সুললিত মহাঅপচয়ের ঠিক বিপরিত মেরুতে। তিনি ভিক্টোরিয়ান পশ্চিমের আর এক কিংবদন্তি, আধুনিক নার্সিং পদ্ধতির প্রতিষ্ঠাতা। ফ্রাঙ্কাতেলির কেজরির নাম —
রাইস আ লা স্যোর নাইটিঙ্গল (ভগিনী নাইটিঙ্গলের তরিকার ভাত)
প্রথমে ভতটাকে অল্প তাজা মাখন, জায়ফল, গোলমরিচ আর নুন দিয়ে ভেজে ফেলুন। যখন বেশ গরম হয়ে যাবে তিনটে ভালো করে সিদ্ধ করা ডিমের সাদা কুচি কুচি করে দিয়ে দিন। হ্যাডক মাছ সুকনো করে নিয়ে তার সাদা অংশটা দিয়ে দিন। একটা গরম থালায় এটা চূড় করে রাখুন। ভালো করে সিদ্ধ করা ডিমের কুসুমগুলো একটা ছাকনিতে ঘষে গুঁড়োগুলো এই চূড় করা খাবারের ওপর ছড়িয়ে দিন। এর সঙ্গে দিন গ্রেট করা পারমেসান চিজ়। ভাতের গোড়ায় গোল করে পাঁওরুটির ক্রুতোঁ সাজিয়ে দিন। মিনিট পাঁচেক আভেনে দিন— সোনালি রঙ ধরা শুরু হওয়া পর্যন্ত। সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশন করুন।
স্টেফানা ম্যালকমের কেজরির সঙ্গে এই খানার প্রায় হুবহু মিল চোখে না পড়ে যায় না। এই হল ভারতীয় খিচুড়ির খাঁটি ভিক্টোরিয়ান রূপ। ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গলের নাম এ খানার সঙ্গে কেন জড়ান হল তা আমি বহু ভেবেও বার করতে পারিনি। এক যদি না ফ্রাঙ্কাতেলি কোনও সূত্রে খবর পেয়ে থাকেন যে ভদ্রমহিলার বিশেষ প্রিয় ছিল এই ইঙ্গ-ভারতীয় খানা। ক্রুতোঁ করা অবশ্য খুবই সোজা—
পাঁওরুটি ক্রুতোঁ
প্রয়োজন মত কোয়ার্টার পাউন্ড পাঁওরুটি নিন (যেমনটা চায়ের দোকানে দু’ফালি করে মাখন-চিনি মাখিয়ে দেয়)। বাইরের ছাল ফেলে দিন কেটে। ভিতরের অংশে মাখন মাখানো ভালো করে। কিউব করে কেটে নিন, লুডোর ছক্কার মতো, তবে আরও বড় বড় করে। ওটিজি-তে ১৭৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে সেঁকে নিন খয়েরি হওয়া পর্যন্ত। ক্রুতোঁ তৈয়ার।
ফ্রাঙ্কাতেলির এই পাগলামো অবিশ্যি খুব বেশিকাল ব্রিটিশ প্রাসাদে টিকেছিল বলে মনে হয়না। ইঙ্গ-ভারতীয় খিচুড়ি, ওরফে ‘কেজরি’ যে সত্যিই ব্রিটিশ রাজন্যের পাতে পড়ত তার সেরা প্রমাণ পেয়েছি ফ্রাঙ্কাতেলির অনেক পরের এক ব্রিটিশরাজ-বাওর্চির লেখায়। ড্যারেন ম্যাকগ্রেডি। ‘‘আমি বাকিংহ্যাম প্রাসাদে রান্না শুরু করি লেডি ডায়ানা ও প্রিন্স চার্লসের বিয়ের অল্প পরেই এবং রাজ-পরিষেবায় ছিলাম ১৯৯৭ সালে প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যুর কিছু দিন পর পর্যন্ত,’’ লিখেছেন ম্যাকগ্রেডি তাঁর অনবদ্য বই Eating Royally-তে, ‘‘সেই সময়কালের মধ্যে আমি সিনিয়র পেস্ট্রি শেফ পদে উন্নীত হই, এবং পরে উন্নীত হই কেনসিংটন প্রাসাদে প্রিন্সেস ডায়ানার ব্যক্তিগত পাচকের দারুণ মর্যাদাপূর্ণ পদে।’’ ডায়ানা ও চার্ল্সের বিয়ে হয় ১৯৮১ সালে। সম্ভবত ম্যাকগ্রেডি চাকরিতে ঢুকেছিলেন ১৯৮২-তে। কারণ, এর পরেই তিনি জানিয়েছেন রাজ-পরিষেবায় তিনি পনের বছর ছিলেন।
আর পাঁচটা কুকবুকের থেকে এ কেতাবের পার্থক্য এই যে, এটি অজস্র ঘটনার স্মৃতিতে ভরপুর। ব্রিটিশ রাজন্যের অনেকটাই অন্দরমহলের স্মৃতি। এ ধরণের স্মৃতিকথার স্বাভাবিক সম্ভ্রমসিক্ত অতিকথন এখানে কম, থাকলেও তা ছেঁকে নিলে এগুলি হয়ে ওঠে অমূল্য দলিল। এ বই নিয়ে বিস্তর লেখা যায়, কিন্তু তাতে বড্ড বেশি লক্ষ্যভ্রষ্ট হব। কাজেই খিচুড়ি বা কেজরিতে ফেরা যাক।
ব্রিটিশ রাজপরিবারের ছুটি কাটানোর প্রাসাদ বালমোরাল ক্যাস্ল, লিখছেন ম্যাকগ্রেডি। স্কটল্যান্ডের অ্যাবার্ডিন শহরের ৫০ মাইল পশ্চিমে ৫০ হাজার একর জমির ওপর বিস্তৃত এই প্রাসাদ। পাশেই তরতরিয়ে বয়ে চলেছে ডি নদী, স্যামন মাছে ভরপুর, ছিপ-নেশাড়ুদের স্বর্গ। আবার তার পাশের জঙ্গলে রয়েছে বন্দুকবাজদের জন্য দেদার শিকার। অগস্টের শেষ থেকে অক্টোবরের শুরু এখানেই ব্রিটিশ রাজপরিবারের মৃগয়াক্ষেত্র। দূরে মাথা উঁচিয়ে আটত্রিশ শো ফুটি লকনাগার শৃঙ্গ—‘‘রানি ওটাকে বলেন, ‘আমার পাহাড়ি মানিক,’’’ বালমোরালে প্রথম পা রাখার পরেই ম্যাকগ্রেডিকে বলেছিলেন বালমোরালের এক কফি-রুম-মেইড অ্যান গার্ডনার। তবে ম্যাকগ্রেডির সব থেকে আনন্দ হয়েছিল হেঁশেলের নিজস্ব ফল-সবজি বাগান দেখে। এমন রসালো র্যাস্পবেরি যে, এক ঝুড়ি তোলার শেষে হাত, সাদা উর্দি সব গোলাপি হয়ে যেত। বিশাল বড় নয়, কিন্তু কত কিসিমের ফল আর সবজি!
এ হেন বালমোরালে প্রত্যেক সপ্তাহান্তে হত মৃগয়া। শুক্রবার সন্ধ্যা হতে না হতেই এসে পড়তেন রাজপরিবারের অতিথিরা। গম্ভীর মুখে শুরু হয়ে যেত পরের দিনের শিকারের পরিকল্পনা। পরের দিন ভোর-ভোর উঠেই শিকারির দল সেরে ফেলতেন প্রাতরাশ—পুরুষদের সংখ্যাই বেশি। গড়পড়তা ব্যুফে ব্রেকফাস্ট—তাজা টোমাটো সস্, টোস্ট করা পাঁওরুটির (যাকে ক্রুত বলে) ওপর ডিমের পোচ, কিডনি ডেভিল, আর ‘কারিড স্যামন কেজরি’। মহিলারা আসেন একটু পরে। কিছু উচ্ছল মহিলা হয়তো দেখা গেল শিকার হওয়া পাখি জড়ো করে সেগুলিতে লেবেল মারার জন্য গেমকিপারের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। তিনি আবার সেগুলো পাঠিয়ে দেবেন ‘গেম লার্ডার’ ঘরে। এ ঘরে শিকার-হওয়া পাখি, হরিণ, খরগোশ এমন ঠাণ্ডায় রাখা হয় যাতে পচে না যায়। পরের দিন বিদায়ী উপঢৌকন হিসেবে প্রত্যেক অতিথি পাবেন একজোড়া শিকার-হওয়া পাখি। বাকি চলে যাবে হেঁশেলে।
সে যাক। আমরা লেগে পড়ি ভোরের কেজরি পাকাতে —
‘‘কারিড স্যামন কেজরি
জল — ১ কোয়ার্ট (০.৯৫ লিটার)
বাসমতি চাল — ১ কাপ
ঘন ক্রিম (বা হাফ অ্যান্ড হাফ ক্রিম) — ২ কাপ
কারি পাউডার — ১ টেবিল-চামচ (বা স্বাদমত)
ছাড়ানো হার্ড বয়েল ডিম — ৪টি
নুন ও তাজা গোল মরিচ
স্যামন পোচ করে, ঠান্ডা করে, পাতলা-পাতলা টুকরো করা — দেড় পাউন্ড (৬৮১ গ্রাম)
পেঁয়াজকলি — মিহি কুচি করা — ১/৪ কাপ
পার্সলে পাতা — মিহি কুচি করা — ২ টেবিল-চামচ
১। ছ’ কোয়ার্ট জল ধরে এমন একটা পাত্রে ১ কোয়ার্ট জল টগবগে ফুটিয়ে চাল ছেড়ে দিন। নরম হওয়া পর্যন্ত নেড়ে, ফ্যান গেলে নিন। প্যান ফের আঁচে চড়ান। ক্রিম আর কারি পাউডার ঢালুন। ক্রিম ঘন হতে শুরু হওয়া পর্যন্ত ক্রিমটা ফোটান। একটা পাত্রে (তিন কাপ মত) জল দিয়ে ডিম গরম করে নিন। আঁচ নিভিয়ে ডিম কয়েক মিনিট থাকতে দিন জলে।
২। কারি পাউডার দেওয়া ক্রিমে ভাতটা দিয়ে নাড়ুন। ভাত গরম হলে নুন গোল মরিচ দিন। হাল্কা করে স্যামনের টুকরোগুলো দিন। নেড়ে নিন যাতে মাছ ভেঙে না যায়।
৩। পরিবেশন করার থালায় কেজরিটা হাতায় করে বাড়ুন। ওপর থেকে পার্সলে আর পেঁয়াজকলি ছড়িয়ে দিন। ডিমগুলো চারভাগ করে কেটে কেজরির চারপাশে সাজিয়ে দিন।’’
ওহ্। উপাদেয়। হাফ অ্যান্ড হাফ ক্রিম তৈরি খুব সোজা— এক কাপ খাঁটি দুধ আর এক কাপ ক্রিম ভাল করে মিশিয়ে ফ্রিজে রেখে দিন। স্যামন পোচ করে রাখাও খুব সোজা। ম্যাকগ্রেডিরই অন্য একটা রেসিপি থেকে একাংশ তুলে দিলাম—
পোচ্ড স্যামন
ঠাণ্ডা জল—২ কোয়ার্ট (৮ কাপ)
থেঁতো করা গোল মরিচ—১২টা
গাজর, ছাল ছাড়িয়ে পাতলা চাকা করে কাটা—৪টি
ছোট পেঁয়াজ, পাতলা চাকা করে কাটা—৩টি
সেলেরি ডাঁটা, ছোট টুকরো করে কাটা—২টি
নুন—১ টেবিল চামচ
তাজা পার্সলে—৪ ডাঁটা
তেজ পাতা—১টা
থাইম তাজা—১টি ডাঁটা, কিংবা এক চিমটে শুকনো থাইম
হোয়াইট ওয়াইন ভিনিগার—১ টেবিল চামচ
স্যামন—দেড় পাউন্ড (৬৮১ গ্রাম) (চার টুকরো করে কাটা)
১০ কোয়ার্ট জল ধরে এমন পাত্রে জলটা ঢেলে সব সবজি ও মশলা এবং নুন দিয়ে ২০ মিনিট, বা যতক্ষণ না সুগন্ধ ছড়ায়, হাল্কা করে ফোটান। ঝোলটা ছেঁকে সব সবজি-মশলা ফেলে দিন। এবার একটা বড় পাত্রে ঝোলটা জোর ফোটান। এবার স্যামনের টুকরোগুলো দিয়ে দিন। এমন পাত্র নিতে হবে যাতে টুকরোগুলো ডুবে যায়। আঁচ কমিয়ে ঢাকা দিয়ে হাল্কা করে ফোটাতে থাকুন। মিনিট ছয়েক। স্যামনের টুকরোগুলো তুলে নিন। ঠাণ্ডা করে নিন।
স্যামন না পেলে ম্যাকারেল দিন, তা-ও না পেলে পাকা পাঙ্গাস মাছ দিন।
সব শেষে বলি, আমি যে কেজরিটি বানিয়েছিলাম তা রানি এলিজাবেথের বালমোরাল প্রাসাদের মৃগয়ার প্রাতরাশের রেসিপি থেকেই, কেবল ফ্রাঙ্কাতেলির রেসিপি থেকে পারমেসন চিজ, ডিমের কুসুমের গুঁড়ো ছড়িয়ে মিনিট দশ বেক করাটা তার সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিলাম। আর জুড়ে দিয়েছিলাম ওই পাঁউরুটির ক্রুতোঁ সাজিয়ে দেওয়া ব্যাপারটা।
দ্য কুক্স গাইড
চার্লস এমে ফ্রাঙ্কাতেলি
রিচার্ড বেন্টলে, নিউ বার্লিংট। ১৮৬৩
ইটিং রয়্যালি
ড্যারেম ম্যাকগ্রেডি
টমাস নেলসন

আরও পড়ুন- British Food Recipe Part I: খানা খানদানি-পর্ব ১৭, ডাল ফেলে মাছ নিয়ে খিচুড়ির কালাপানি পার

খানা খানদানিতে আপাতত বিরতি… আবার ফিরে আসার আশায়।
গ্রাফিক্স ও অলংকরণ- অভিজিৎ বিশ্বাস