অনলাইনে পড়ছে সন্তান, অভিভাবক হিসেবে কী সতর্কতা নেবেন?

সচেতন ব্যবহারই আপনাকে সুরক্ষা দিতে পারে। তাই প্রথমে অভিভাবক হিসেবে নিজেকে সচেতন হতে হবে। তবেই শিশুরও সুরক্ষার দায়িত্ব নিতে পারবেন আপনি।

অনলাইনে পড়ছে সন্তান, অভিভাবক হিসেবে কী সতর্কতা নেবেন?
প্রথমে অভিভাবক হিসেবে নিজেকে সচেতন হতে হবে।
Follow Us:
| Updated on: Dec 23, 2020 | 1:55 PM

স্মার্টফোনের (smart phone) স্মার্ট দুনিয়ার সঙ্গে ঠিক কত বছর বয়স থেকে জেন ওয়াইয়ের যোগাযোগ সেই হিসেব আপনার হাতে এলে চমকে উঠবেন নিশ্চয়ই। হিসেব না হয় না পেলেন, আপনার বাড়ির খুদে সদস্য, বন্ধুর ছানা বা পাড়ার একরত্তির কথা জানলেই অবাক হবেন। কারণ ছোট থেকেই স্মার্ট ফোন বা এই ধরনের যে কোনও ডিভাইসের সঙ্গে তারা বেশ পরিচিত। করোনার পৃথিবীতে লকডাউন পরিস্থিতি যখন অনলাইন ক্লাসে (online education) কার্যত বাধ্য করল খুদেদের, তখন শহুরে পড়ুয়ারা খুব একটা সমস্যায় পড়েনি। বরং কিছুটা সমস্যায় পড়েছিলেন তাদের বাবামায়েরা।

বাবামায়েদের সমস্যাটা কোথায়? সচেতন হতে গেলে অভিভাবক হিসেবে ঠিক কী কী করতে হবে? আসলে প্রাথমিক ভাবে শিশুদের স্মার্টফোনে অনলাইন ক্লাস শুরু হওয়ার আগে সিংহভাগ বাবামা ডিভাইসটি তাদের উপযুক্ত করে দিয়েছেন। পড়াশোনার প্রয়োজনে ঠিক যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু সাহায্য যেন সন্তান পায়, সেটুকু নিশ্চিত করতে চেয়েছেন তাঁরা। পাশাপাশি কোনও ভাবেই যাতে অ্যাডাল্ট কনটেন্ট তাদের হাতে এসে না পড়ে, তা নিশ্চিত করাও ছিল উদ্দেশ্য। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, বাবামায়ের নজরদারি এড়িয়ে খুদেরা নিজেরাই ফোনে নতুন নতুন অ্যাপ্লিকেশন চালু করে ফেলেছে।

আরও পড়ুন, করোনার পর স্ট্রিট ফুড নাকি বাড়ির টিফিন, এগিয়ে কোন মেনু?

ঠিক এমন অভিজ্ঞতাই হয়েছে সরকারি চাকুরে সব্যসাচী করের। ছেলে সমদর্শীর বয়স নয়। অনলাইন ক্লাসের শুরুর দিকে বাবামায়ের ফোনই সমদর্শী ব্যবহার করছিল বলে জানালেন সব্যসাচী। পরে পেশার প্রয়োজনে তিনি এবং তাঁর স্ত্রী বেরতে শুরু করলে ছেলের জন্য আলাদা ডিভাইসের ব্যবস্থা করতে হয়। সব্যসাচীর কথায়, “ছেলেকে একটা ট্যাব কিনে দিয়েছি। অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে ঢুকতে গেলে একটা ইমেল আইডি তৈরি করতে হয়। সেখানে ওর বয়স দেওয়ার পরই ওকে নাবালক হিসেবে বিবেচনা করে কিছু সেটিংস গুগলে নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায়। যেমন, ইউটিউবে ও কিড ভার্সন দেখতে পাবে। ১৬ বছর বয়স হলে বাকি কনটেন্ট দেখতে পাবে।এই সব কিছুর পরেও অভিভাবকদের সম্মতিক্রমে আরও কিছু অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারবে সমদর্শী। এই লিঙ্ক তৈরি হওয়ার সময়ই গুগল থেকে পেরেন্টাল কন্ট্রোলের সাজেশন দেওয়া হয়েছিল। ফলে সমদর্শীর ডিভাইস মনিটর করার সুযোগ রয়েছে তাঁদের কাছে।

কিন্তু চমকের শুরু এর পরেই। হেসে শেয়ার করলেন, “এমন একটা অ্যাপ্লিকেশন ছেলে নিজেই আবিষ্কার করে ফেলেছে। সেখানে কিন্তু পেরেন্টাল কন্ট্রোল কাজ করে না। তবে ওখানে ও কী কী জিনিস দেখে, সেটা আমরা জানি।

পেশায় স্কুল শিক্ষিকা শতাব্দী দাশ নিজে অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন। আবার তাঁর মেয়ে আঁখি দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রীও মন দিয়েছে অনলাইন ক্লাসে। মেয়ের হাতে স্মার্টফোন তুলে দেওয়ার আগে নিজস্ব পদ্ধতিতে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করেছেন শতাব্দী। তিনি বললেন, “আমাদের দুটো আলাদা ঘরে বসে কাজ করতে হয়। ফলে সব সময় পাশে বসে নজরে রাখা সম্ভব নয়। ওর কাজের প্রয়োজন ছাড়া কোনও অ্যাপ ইনস্টল করিনি। কাজের প্রয়োজনেই হোয়াটস্অ্যাপ ব্যবহার করে ও। কিন্তু অচেনা নম্বর থেকে ফোন এলেই ব্লক করে দিচ্ছি। ইউটিউবে চাইল্ড লক করা যায়। কিন্তু বাচ্চারা যদি বুদ্ধি করে ইমেল অ্যাকাউন্ট থেকে লগ আউট করে যায়, তাহলে কিন্তু ইউটিউবে কী দেখছে, সেটা বাবামায়েদের বোঝার আর উপায় থাকে না।

school online class

সন্তানের উপর নজরদারি নয়, ওর বন্ধু হয়ে উঠুন।

কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে বাবামায়েরা ন্যুনতম সতর্কতা নিচ্ছেন না। আর এতে বিপদে পড়ছে শিশুরা। কখনও বা সাইবার অপরাধের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছে তারা। এক্ষেত্রে কী করণীয়? পরামর্শ দিলেন আইনজীবী তথা সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ রাজর্ষি রায়চৌধুরী। তাঁর কথায়, “কোভিড পরিস্থিতিতে অনলাইন পড়াশোনা চলছে। পাশাপাশি বাইরে বেরনো বন্ধ বলে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট শিশুদের একমাত্র সহায়। এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার বিপদে ফেলছে বহু শিশু ও কিশোরকে। কখনও বা সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছে তারা। বাবামায়েদের বলব, শিশুদের ইন্টারনেট কনটেন্ট বেছে দিন। এর ব্যবহারের উপরও নজরদারি রাখা গুরুত্বপূর্ণ। ইন্টারনেট আসক্তি যেন তাদের ছুঁতে না পারে সেটা দেখবেন।রাজর্ষি মনে করেন, সাইবার সুরক্ষার বিভিন্ন দিক নিয়ে শিক্ষা ও সচেতনতা একান্ত প্রয়োজন। শিশুকিশোরদের মধ্যে কোনও রকম অসঙ্গতি দেখলে সাইবার সেফটি এক্সপার্ট বা সাইবার পেরেন্টিং এক্সপার্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন, অভিষেক বচ্চনের কোন কোন সিক্রেট শেয়ার করল ইনায়ৎ?

আসলে সচেতন ব্যবহারই আপনাকে সুরক্ষা দিতে পারে। তাই প্রথমে অভিভাবক হিসেবে নিজেকে সচেতন হতে হবে। তবেই শিশুরও সুরক্ষার দায়িত্ব নিতে পারবেন আপনি।