প্রাচীন যুগের নিদর্শনের সাক্ষী থাকতে জীবনে একবার মধ্যপ্রদেশ থেকে ঘুরে আসুন!
বাঙালি চিরকালই ভ্রমণপ্রেমিক। পুজোর ছুটি বা গ্রীষ্মের ছুটি ছাড়াও উইকেন্ডেও শহরের আশেপাশে এলাকায় ঘুরে আসতে পারলে মনে শান্তি পায় বাঙালি। লকডাউনে তাই বাঙালির দফারফা অবস্থা।
মধ্যপ্রদেশ এর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হল, এই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে ঐতিহাসিক ও প্রাচীন দুর্লভ নিদর্শন । যা ভ্রমণের পাশাপাশি অজানা অনেক তথ্য কুড়িয়ে আনা যায় ভারতের হৃতপিণ্ড থেকে। প্রাচীন ভারতের ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে কয়েকশ বছর ধরে বুকে নিয়ে আগলে রেখে মধ্যপ্রদেশে। এই রাজ্যের ঐতিহাসিক ট্যুরিস্ট স্পটগুলি না দেখলে জীবনটাই বৃথা যাবে, দেখে নিন একঝলকে…
সাঁচির দ্য গ্রেট স্তূপা
ভোপালের ৪৮ কিমি উত্তর-পূর্বে, রাইসেন জেলায় সাঁচির স্তূপা অবস্তিত। যা গ্রেট স্তূপা হিসাবে বেশি পরিচিত। এটি একটি বৌদ্ধ মঠ যা দেশের মধ্যে অন্যতম প্রাচীন এবং গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনও বটে। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে সম্রাট অশোকের দ্বারা নির্মিত, ইট দিয়ে তৈরি একটি গোলাকার নিদর্শন তৈরি করেন সম্রাট অশোক। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে মনোনীত, সাঁচি স্তূপা কেবল মধ্য প্রদেশের একটি বিখ্যাত ঐতিহাসিক স্থান নয়, বৌদ্ধ ধর্মের অনুরাগীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
বিখ্যাত খাজুরাহো মন্দির
মধ্যপ্রদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত এই খাজুরাহো মন্দির। হিন্দু ও জৈন মন্দিরের একটি বিশাল সংগ্রহশালা। ঝাঁসি থেকে ১৭৫ কিমি দক্ষিণ-পূর্বে বেশ কয়েকটি মন্দির এখনও বিদ্যমান। পাথরের উপর খোদাই করা শৌখিন ও দুর্দান্ত শিল্পকর্মের জন্য এই মন্দির বিশ্ববিখ্যাত। নবম ও দশম শতাব্দীর পূর্বে রাজপুত চাণ্ডেলা রাজবংশের রাজা এই মন্দির স্থাপন করেন। রেকর্ড অনুসারে, দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে ২০ বর্গ কিমি এলাকা দখলের লড়াইয়ে ৮৫টির মধ্যে মাত্র ২৫টি কোনও রকমে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছে। তার মধ্যে বেশ কয়েকটি মন্দির পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। মন্দিরগুলির গায়ে নাগারা ধাঁচের স্থাপত্য, জটিল বিবরণ-সহ প্রেম ও যৌনমিলনের থিমের উপর তৈরি স্থাপত্যের জন্য বেশি জনপ্রিয়।
গোয়ালিয়র ফোর্ট
রাজস্থান ছাড়াও মধ্যপ্রদেশে রয়েছে নজরকাড়া দূর্গ। এই রাজ্যের গোয়ালিয়রে সুবিশাল দূর্গের প্রেমে পড়বেনই পড়বেন। দূর্গটি কবে স্থানিত হয়েছিল তা সঠিক জানা না গেলেও, খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীতে সুরজ সেন নামে একজন শাসক কুষ্ঠরোগ থেকে নিরাময়কারী গোয়ালীপাকে উত্সর্গ করেছিলেন। দেশের অন্যতম দুর্ভেদ্য দুর্গ হিসাবে পরিচিত, গোয়ালিয়র দুর্গটি নিঃসন্দেহে মধ্য প্রদেশের অন্যতম শীর্ষ ঐতিহাসিক স্থান। পাথুরে পাহাড়ের শীর্ষে ও গোয়ালিয়র শহরকে ছাড়িয়ে এই দূর্গ ছাড়া মানমন্দির, জাহাঙ্গীর মহল, শাহ জাহান মহল ও গুজারি মহলের মতো প্রাসাদ ঘিরে রয়েছে।
আরও পড়ুন: জগন্নাথ মন্দির, মনোরম সমুদ্রসৈকত ছাড়াও পুরীতে রয়েছে অনেক কিছু! জানুন
ভীমবেটকা রক শেল্টারস
ভোপালের দক্ষিণ-পূর্বে ৪৫ কিমি দূরে, রাইসেনা জেলায় অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। ভীমবেটকার পাথরের নীচে প্রাচীন নিদর্শন দেখার সাক্ষী থাকবেন এখানে। প্যালিওলিথিক ও মেসোলিথিক পাথরের যুগে প্রায় ৭০০ রকশ্লেটারের প্রাচীন মানবজাতির শিল্পকর্ম, পাথরের গায়ে আঁকা ছবি দেখতে পাবেন। আদিযুগে মানবসভ্যতা, তাঁদের জীবনযাত্রার কিছু ছবি আপনি চাক্ষুস করতে পারবেন। প্রত্নতাত্তববিদদের মতে, এই চিত্রকর্মগুলি প্রায় ৩০ হাজার বছর পুরনো। কিছু কিছু পাথরের গুহা রয়েছে, যার বয়স প্রায় ১০ লক্ষ বছর পূর্বের।
ভোজেশ্বর মন্দির
একাদশ শতাব্দীতে স্থাপিত এই মন্দিরেরর গর্ভগৃহে রয়েছে ৫.৩ ফুট দীর্ঘ শিবলিঙ্গ।মন্দিরটি ভোজপুর গ্রামের একটু বাইরে পাহাড়ের চূড়ায় মন্দিরটি অবস্থিত। পাথর খোদাই করে মন্দিরের স্থাপত্য নির্মাণ করা হয়েছিল। মন্দিরের চারিপাশে তিনটি বাঁধ, একটি বিশাল জলাধার রয়েছে।