Kurseong: কার্শিয়াঙের অফবিট গ্রামে খোঁজ মিলল পাহাড়ি গুহার, জড়িয়ে লেপচাদের ইতিহাস
Latpanchar: পাইন, ধুপির জঙ্গল ধরে মহানন্দা অভয়ারণ্যের মধ্য দিয়ে পৌঁছাতে হয় এখানে। এই অঞ্চলে প্রায় ৩৬ রকমের বন্যপ্রাণী এবং ২৪০ প্রজাতির পাখির দেখা পাওয়া যায়।
উত্তরবঙ্গের বেশিরভাগ অঞ্চল জুড়ে লেপচা জনজাতিদের বাস। দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াঙের এমন অনেক ছোট ছোট গ্রাম রয়েছে যেখানকার আদিমতম অধিবাসী তারা। সুতরাং, পাহাড়ের আনাচে-কানাচে তাদের ইতিহাস লুকিয়ে থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। সম্প্রতি এমনই এক ইতিহাসের খোঁজ পেল কলকাতার একটি অভিযাত্রী দল। জায়গার নাম রাজারানি পাহাড়। মহানন্দা অভয়ারণ্যের ঘন জঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত দুটো প্রাকৃতিক গুহা। সেটাই পরিচিত রাজারানি পাহাড়। এই নামের মধ্যেই লুকিয়ে লেপচাদের এক ইতিহাস।
এই রাজারানি পাহাড় প্রায় চারশো বছর আগে তৈরি প্রাকৃতিক গুহা। গুহার ভিতরে প্রায় কুড়ি তলা বাড়ির সমান পাহাড়ের চাঁই। রক ক্লাইম্বিং ছাড়া সেখানে পৌঁছানো সম্ভব নয়। তবে, গুহা দু’টি দেখতে খুব সুন্দর। অনায়াসে এখানে মানুষ বাস করতে পারবে। স্থানীয় মানুষদের একটি পাহাড় গুলমা রাজা এবং অন্যটি গুলমা রানি নামে পরিচিত। লেপচা ভাষায় গুলমা শব্দের অর্থ আত্মগোপন করে থাকা মানুষ। শোনা যায়, একসময় লেপচাদের রাজা ও রানি আত্মগোপণ করতে এই গুহায় বেশ কিছুদিন আশ্রয় নিয়েছিলেন। যদিও এর কোনও প্রমাণ মেলেনি।
যদিও লেপচাদের খুব বেশি ইতিহাসের সন্ধান পাওয়া যায় না। ভুটান রাজাদের বারবার আক্রমণের কারণে লেপচাদের ইতিহাস অনেকটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পরবর্তী সময়ে লেপচারা কালিম্পং দখল করে নেয় এবং সেই সময় নষ্ট হয়ে যায় লেপচাদের পুঁথি ও নথিপত্র। তবে, উত্তরবঙ্গের অনেক পাহাড়ি গ্রামে লেপচাদের বাস রয়েছে। রয়েছে গুম্ফাও। তবে, এমন গুহার সন্ধান সহজে মেলে না।
কার্শিয়াং মহকুমার লাটপানছার অঞ্চলে রয়েছে এই রাজারানি পাহাড়। লাটপানছার কার্শিয়াঙের এক অন্যতম অফবিট ডেস্টিনেশন। পাইন, ধুপির জঙ্গল ধরে মহানন্দা অভয়ারণ্যের মধ্য দিয়ে পৌঁছাতে হয় এখানে। এই অঞ্চলে প্রায় ৩৬ রকমের বন্যপ্রাণী এবং ২৪০ প্রজাতির পাখির দেখা পাওয়া যায়। এমনকী এখানে দেখা মেলে এক ধরনের বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির উভচর স্যালামান্ডারের। কালিঝোরা বাজার থেকে বাম দিকে রাস্তা ধরে ৪৪ কিলোমিটার পথ গেলেই লাটপানছার। লাটপানছার গ্রাম থেকে জঙ্গলের পথ ধরে মহানন্দা অভয়ারণ্যের দিকে হাঁটা লাগালেই পৌঁছে যেতে পারেন রাজারানি পাহাড়ের কাছে। লাটপানছারে থাকার জন্য বেশ কয়েকটি হোমস্টে রয়েছে। ঘন জঙ্গল, প্রাকৃতিক পুকুর, পাহাড় সব মিলিয়ে লাটপানছার এক অনন্য অভিজ্ঞতা এনে দিতে পারে।
আটের দশকে শিলিগুড়ির কয়েকজন যুবক এই গুহা দু’টির খোঁজ পেয়েছিলেন। গত বৃহস্পতিবার কলকাতার একদল অভিযাত্রী পুনরায় এই রাজারানির পাহাড় খুঁজে বার করলেন। এই সময়’কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে অভিযাত্রী দলের প্রধান অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ব্বইয়ের দশকে এই অঞ্চলে বেড়াতে এসে স্থানীয় মানুষদের কাছে এই গুহার কথা শুনেছিলেন। এবার সেটাই পুনরাবিষ্কার করেছেন কলকাতার ওই অভিযাত্রীদল।