Malana: বিশ্বের প্রাচীনতম গণতান্ত্রিক গ্রাম নাকি মলানা ক্রিম? কীসের টানে পর্যটকদের ভিড় হিমাচলের এই গ্রামে?

কুল্লু জেলার পার্বতী উপত্যকায় অবস্থিত মলানা গ্রাম। প্রায় ৯,৯৩৮ ফুট উঁচুতে এই গ্রামের ইতিহাস ও সৌন্দর্য  দুটোই বেশ রোমাঞ্চকর।

Malana: বিশ্বের প্রাচীনতম গণতান্ত্রিক গ্রাম নাকি মলানা ক্রিম? কীসের টানে পর্যটকদের ভিড় হিমাচলের এই গ্রামে?
মলানা গ্রাম, হিমাচল প্রদেশ
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 20, 2022 | 4:17 PM

হিমাচল প্রদেশে (Himachal Pradesh) এমন অনেক জায়গা আছে, যেখানে সারা বছরই পর্যটকদের ভিড় থাকে। কিন্তু কুল্লু উপত্যকার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত মলানা গ্রামের (Malana Village) কথা খুব কম মানুষই জানেন। এই গ্রামটি শুধু প্রাচীনই নয়, খুব সুন্দরও বটে। এই গ্রামের সঙ্গে জড়িত এমন অনেক বিষয় রয়েছে, যার সম্পর্কে খুব কম পর্যটকই জানেন। তামাকের গ্রাম (Malana Cream), বিশ্বের প্রাচীনতম গণতান্ত্রিক গ্রাম (Oldest Democracy of The World) ইত্যাদি নামে বেশ জনপ্রিয় মলানা।

কুল্লু জেলার পার্বতী উপত্যকায় অবস্থিত মলানা গ্রাম। প্রায় ৯,৯৩৮ ফুট উঁচুতে এই গ্রামের ইতিহাস ও সৌন্দর্য  দুটোই বেশ রোমাঞ্চকর। ট্রেন বা বাসে করে এই গ্রামে পৌঁছানোর কোনও সুবিধা নেই। এখানে যেতে গেলে আপনাকে ট্রেক করেই পাড়ি দিতে হবে। তবে এখানে আসা পর্যটকদের বেশির ভাগই বিদেশি।

এই গ্রামের লোকেরা নিজেদেরকে আলেকজান্ডারের সৈন্যদের বংশধর বলে দাবি করে। শুধু তাই নয়, এখানে বসবাসকারী মানুষদের মানচিত্রও অন্যান্য পাহাড়ি স্থান থেকে অনেকটাই আলাদা। কথিত আছে, আলেকজান্ডার যখন ভারত আক্রমণ করতে আসেন, তখন তারঁ সঙ্গে থাকা সৈন্যরা এই গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিল। আক্রমণে পরাজয়ের পর, আলেকজান্ডার এখান থেকে চলে গেলেও তাঁর সঙ্গে আসা কিছু সৈন্য এখানেই থেকে যায় এবং এই গ্রামে তারা বাড়ি তৈরি করে বসবাস শুরু করে। যদিও বিষয়টি এখনও পুরোপুরি প্রমাণিত হয়নি, তবে গ্রামে এমন কিছু জিনিস রাখা আছে, যা এটা ভাবতে বাধ্য করে। এই গ্রামের মন্দিরে আলেকজান্ডারের সময়কার একটি তলোয়ার রাখা আছে।

শুধু তাই নয়, এখানকার মানুষ ভিন্ন ভাষায় কথা বলে, যা ভারতের অন্য কোথাও আর শোনা যায় না। কানাশী ভাষায় এখানকার মানুষেরা কথা বলে এবং এটি বাইরের লোকদের শেখানো নিষিদ্ধ। সেখানকার স্থানীয়দের মতে, এটি একটি পবিত্র ভাষা। একই সঙ্গে, এই গ্রামের লোকেরা গ্রামের বাইরের মানুষের সঙ্গে বেশি মেলামেশা পছন্দ করে না। এ কারণেই এখানে ছেলে-মেয়েদের বিয়েও হয় নিজ গ্রামে।

এই গ্রামের আরেকটি ইতিহাস রয়েছে। অনেকের ধারণা এখানকার মানুষ আর্যদের বংশধর। এমনও একটি কাহিনী আছে যে, মুঘল শাসক আকবর যখন গুরুতর অসুস্থ ছিলেন, তখন মালানার লোকেরা তাকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করেছিলেন। আকবর এতে এত খুশি হয়েছিলেন যে তিনি এই গ্রামের মানুষকে কর থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন।

মলানাকে বিশ্বের প্রাচীনতম গণতান্ত্রিক গ্রাম বলে মনে করা হয়। জামলু ঋষির (পৌরাণিক দেবতা) আদেশ অনুসরণ করে ১১ সদস্যের একটি কাউন্সিল রয়েছে। এই সদস্যদের দ্বারা নেওয়া যে কোনও সিদ্ধান্ত পুরো গ্রাম বিবেচনা করে। তবে এখন পরিস্থিতি পাল্টে যাচ্ছে।

মলানা আরেকটি কারণে বেশ জনপ্রিয় তা হল গাঁজা ও চরস। গ্রামের আশেপাশে, পাহাড়ের কোলে, জঙ্গলের মধ্যে যে গাঁজা গাছ চাষ করা হয় এবং সেখান থেকে যে নেশা দ্রব্য উৎপাদন করা হয় তাকে ‘মলানা ক্রিম’ বলা হয়। এমন গাঁজা ভারতের অন্য কোথাও চাষ হয় না। বিশ্বের মধ্যেও শুধু আমস্টারডামেই পাওয়া যায় এই মানের গাঁজা। ১৯৯৪ এবং ১৯৯৬ সালে, হাই টাইমস ম্যাগাজিন ক্যানাবিস কাপ এই গ্রামকে সেরা মারিজুয়ানার খেতাব প্রদান করে। পার্বতী উপত্যকায় এটি প্রচুর পরিমাণে চাষ করা হয়। তবে বর্তমানে গাঁজা চাষ (গাঁজার গাছ) বন্ধে ব্যাপক অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ ও প্রশাসন। কিন্তু, উচ্চ উচ্চতা এবং কঠিন ভৌগোলিক অবস্থার কারণে এটি বন্ধ করা খুব কঠিন। অন্যদিকে, তবে এই গ্রামে পুলিশদের ঢোকা নিষিদ্ধ। এর পাশাপাশি এটি ভারতের এমন একটি গ্রাম যেখানে এখনও অবধি করোনা ছুঁতে পারেনি।

আরও পড়ুন: বসন্তের আমেজে হিমাচল প্রদেশের এমন ‘বিষ্ময়কর রূপ’ দেখেছেন কখনও?