Pink Tourism: ট্র্যাভেল প্ল্যান তো করছেন, ডেস্টিনেশন কতটা নিরাপদ LGBTQIA+দের জন্য?

LGBTQIA+: বিশ্বজুড়ে LGBTQIA+ সম্প্রদায়ের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু বেড়াতে গিয়ে কি সত্যি কোনও সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় না এঁদের?

Pink Tourism: ট্র্যাভেল প্ল্যান তো করছেন, ডেস্টিনেশন কতটা নিরাপদ LGBTQIA+দের জন্য?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 11, 2022 | 9:18 PM

দৈনন্দিন জীবন থেকে বিরতি নিয়ে দু’দিনের ছুটি কাটাতে পছন্দ করেন সকলেই। ট্রিপ-এর জন্য সবাই প্রাথমিকভাবে এমন জায়গা বেছে নিতে চান, যা তাঁর জন্য নিরাপদ হবে। বিশ্বজুড়ে এমন অনেক শহর, পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে যেখানে পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে সারা বছর। কিন্তু যখন ‘পিঙ্ক ট্যুরিজ়ম’ (Pink Tourism)-এর প্রসঙ্গ আসে, তখন একটু বেশিই সচেতন হয়ে যান LGBTQIA+ সম্প্রদায়ের মানুষে। ট্র্যাভেল প্ল্যান তো করছেন, ডেস্টিনেশন কতটা নিরাপদ LGBTQIA+দের জন্য?

ঋষি ঘোষ ও ভাস্বতী আচার্য কলকাতার এক লেসবিয়ান কাপল। ঋষি একজন রূপান্তরকামী পুরুষ। TV9 বাংলার সঙ্গে তাঁরা ভাগ করে নিয়েছেন তাঁদের পিঙ্ক ট্যুরিজমের অভিজ্ঞতা। ঋষির দাবি, ‘‘শান্তিনিকেতন থেকে ছুটি কাটিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম। ট্রেনে আমাদের সঙ্গে একটা পরিবার ট্র্যাভেল করছিল। যেহেতু আমাদের একটা সিট ‘কনফার্মড’ হয়নি, তা-ই প্রথমে আমরা ওই সহযাত্রীদের অনুরোধ করি একটু সহযোগিতা করার জন্য। কিন্তু ওঁরা রাজি ছিলেন না। এখান অবধি সবকিছু ঠিকই ছিল।’’ কী হল এরপর? ঋষির আরও দাবি, ‘‘এর কিছুক্ষণ পর থেকে আমার এবং আমার সঙ্গীর উদ্দেশে নানা কু-কথা বলতে শুরু করে। তাঁরা আমায় দেখে গালিগালাজ করতে শুরু করেন। আমরা যখন প্রতিবাদ করি, তখন অবস্থা হাতাহাতির পর্যায়ে পৌঁছে যায়। হাওড়া স্টেশনে নেমে আমায় মারধরও করা হয়। আমার সঙ্গীর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে দেওয়া হয়। স্টেশনে কর্মরত পুলিশের সাহায্য নিয়ে নিজেদের উদ্ধার করলেও তার চেয়ে বেশি কোনও সহায়তা পাইনি। এই ঘটনার বিরুদ্ধে আমরা পুলিশের দ্বারস্থ হলেও কোনও সহায়তাই পাইনি।’’

লিঙ্গ বৈষম্যের কারণে সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু যখন ভ্রমণের প্রসঙ্গ আসে, তখনও যদি এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, সেটা কখনওই গ্রহণযোগ্য নয় বলে অভিমত LGBTQIA+ সম্প্রদায়ের। আর এই কারণেই LGBTQIA+ সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা সবর হয়েছেন পিঙ্ক ট্যুরিজম নিয়ে। LGBTQIA+ সম্প্রদায়ের মানুষেরা এমন সব জায়গা বেছে নিচ্ছেন, যেখানে লিঙ্গ অথবা সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন নিয়ে অন্যরা মাথা ঘামান না। সকল পর্যটককে একই চোখে দেখা হয়। পিঙ্ক ট্যুরিজমের সৌজন্যে মানুষ এমন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া পছন্দ করছেন, যেখানে সমকামী দম্পতিদের সেই একই নজরে দেখা হচ্ছে, ঠিক যেভাবে আতিথেয়তা করা হয় বিষমকামী দম্পতিদের।

পিঙ্ক ট্যুরিজমে সমকামী দম্পতিরা বিদেশ-ভ্রমণের ক্ষেত্রে বারবার বেছে নেন বালি, কম্বোডিয়া এবং থাইল্যান্ডের মতো জায়গা। এখানে সমকামী পানশালা, গে সি-বিচ, গে রিসর্ট ইত্যাদির মতো অনেক সুবিধা রয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক স্তরে পিঙ্ক ট্যুরিজমের তালিকায় প্রথম সারিতে রয়েছে নিউইয়র্ক, স্পেন, অকল্যান্ড, লন্ডন, আমস্টারডাম, সিডনি, বার্লিন। ঋষি ও ভাস্বতীর অভিজ্ঞতা ‘ভয়াবহ’ হলেও ভারত কিন্তু পিছিয়ে নেই পিঙ্ক ট্যুরিজমে। ২০২১ সালে করা একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, পিঙ্ক ট্যুরিজমে ১৫০টি দেশের মধ্যে ৮২তম স্থানে রয়েছে ভারত।

ভারতের মধ্যে মুম্বই LGBTQIA+ সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ। যদিও পিঙ্ক ট্র্যাভেলে মুম্বই ছাড়াও আহমেদাবাদ, বরোদা, গোয়া, দিল্লি, কলকাতা, বেঙ্গালুরু এবং উদয়পুরের মতো শহরগুলিও রয়েছে। এমনকী এই তালিকায় রয়েছে লাদাখ ও আগ্রার মতো ভারতের দু’টি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। সুতরাং এই সব শহরে LGBTQIA+ সম্প্রদায়ের মানুষেরা বেড়াতে গেলেও খুব একটা সমস্যার সম্মুখীন হবেন না।

তবু পিঙ্ক ট্র্যাভেলের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। ভ্রমণের জন্য যে জায়গা বেছে নেবেন, সেখানে কোনও লিঙ্গ-বৈষম্য নীতি যেন না থাকে। ওই জায়গার স্থানীয় রীতিনীতি সম্পর্কেও জেনে রাখা দরকার। সম্প্রতি একটি ট্র্যাভেল পোর্টাল তাদের গবেষণায় জানিয়েছে, ৬৫% LGBTQIA+ মানুষ ভ্রমণের জন্য এমন স্থান বেছে নেন, যা তাঁদের নিরাপদ বলে মনে হয়।