বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশে পা রাখলে ইউনেস্কোর এই ৫ সাইট দেখতে ভুলবেন না যেন…
আশ্চর্যভাবে, ভুটান শুধু একমাত্র ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট নয়, গোটা দেশ যেভাবে প্রকৃতিকে আপন করে সংরক্ষণ করে চলেছে, সাধারণ ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রার মধ্যে দিয়ে মানুষ ভালবাসার বন্ধনে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ করে রেখেছে, তা সত্যিই শিক্ষণীয়।
ভারতের উত্তর-পূর্ব দিকে ক্ষুদ্র দেশে, ভুটান। আকারে বেশ ছোট হলেও, প্রকৃতি ও সৌন্দর্যের বহর দেখলে ভিমড়ি খাবেন। হিমালয় পর্বতমালার কোলে ছোট্ট দেশ এই ভুটান। এই দেশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন ঈশ্বর সমস্ত ঢেলে সাজিয়ে রাখার জন্য সবকিছু উজাড় করে দিয়েছে। শীতল ও গাঢ় সবুজ পাহাড়ে ঘেরা এই দেশ শুধু পর্যটন কেন্দ্রই নয়, এখানকার আবহাওয়া, পরিবেশ, দেশবাসীর জীবনযাত্রা তাবড় তাবড় দেশের সরকারের শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা নেওয়া উচিত।
হিমালয় পর্বতের চূড়ো, ঘন জঙ্গল, জলপ্রপাতের কলকলানি শব্দ , ইউনিক সংস্কৃতি- সবকিছু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ছাপিয়ে যায়। আশ্চর্যভাবে, ভুটান শুধু একমাত্র ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট নয়, গোটা দেশ যেভাবে প্রকৃতিকে আপন করে সংরক্ষণ করে চলেছে, সাধারণ ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রার মধ্যে দিয়ে মানুষ ভালবাসার বন্ধনে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ করে রেখেছে, তা সত্যিই শিক্ষণীয়।
সাকটেং বন্যপ্রাণী সংরক্ষনকেন্দ্র
ভুটানের পূর্বে ট্র্যাশিগাং জঞ্জাখাগের অবস্থিত সাকটেং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যেটি প্রায় ৭৪০ স্কোয়ার বর্গ কিমি এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এই অভয়ারণ্যে রয়েছে প্রায় ৩৫ প্রজাতির রডোডেনড্রন, ২০৩ টি প্রজাতির মশলার গাছ, লালপান্ডা, বন্য কুকুর, সাধারণ চিতাবাঘ, লাঙুর, হরিণ ইত্যাদি। এছাড়া ১৮৭ প্রজাতির পাখি, ২০ টি প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীর সন্ধান রয়েছে এখানে। এই অভয়ারণ্য ব্রুকপাস নামে এক আদা-যাযাবর উপজাতি বাস করে। বন্য উদ্বিদ ও প্রাণীজগতের সঙ্গে এঁদের আত্মার যোগ রয়েছে।
বমডেলিং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
১৫২০ স্কোয়ার বর্গ কিমি জায়গা জুড়ে অবস্থিত এই অভয়ারণ্যে বাস্তুতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য ভরপুর। এই অভয়ারণ্যে লডলোর ভুটান সোয়ালিটেল, একটি স্থানীয় প্রজাপতিও পাওয়া যায়। ১০০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৪৩২ প্রজাতির পাখি প্রজাতি, ১৩০ প্রজাতির প্রজাপতি এবং বিজাতীয় অঞ্চলের অন্যান্য অনেক প্রজাতির বৈচিত্র্যময় প্রাণীও পাওয়া যায়। এই অভয়ারণ্যের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে বহু নদী। সেই নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে উপজাতি গোষ্ঠীর জনবসতি।
জিগমে ডোরজি জাতীয় উদ্যান
ভুটানের সংরক্ষণ কেন্দ্রগুলির মধ্যে এই উদ্যান অন্যতম। ৪৩১৬ স্কোয়ার বর্গ কিমি জুড়ে অবস্থিত জঙ্গলের ভিতর বাঘ, কস্তুরী হরিণ, তুষাক চিতা ছাড়াও একানে বহু প্রজাতির প্রজাপতি, গাছপালা ও বন্যপ্রাণীর আবাস রয়েছে। এই জহ্গলেই বন্যপ্রাণীর সঙ্গে টিকে রয়েছে ভুটান তাকিনের বিশাল জনগোষ্ঠী। জিগমে ডোরজি জাতীয় উদ্যানকে ট্রেকার প্যারাডাইজ বলেও চেনেন।
তমঝিং মঠ
তমঝিং মঠটি ভুটানের বুমথাং জেলায় অবস্থিত একটি ধর্মীয় স্থান। এটি গুরু পদ্মসম্বভা কর্তৃক মনোনীত পাঁচটি ধন আবিষ্কারক রাজার মধ্যে অন্যতম পেমা লিঙ্গপা প্রধান আসন হিসাবে কাজ করে। পূর্বসূরীরা ভুটানে বৌদ্ধধর্মের সূচনা করেছিল এবং তান্ত্রিক বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে বিবেচিত হয়। মঠটি ১৫০১ সালে পেমা লিঙ্গপা তৈরি করেছিলেন। এটি বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কিত মুরাল, মূর্তি এবং অন্যান্য শিল্প ও নিদর্শনগুলির অনন্য সংগ্রহের জন্য বিখ্যাত।
রয়েল মানস জাতীয় উদ্যান (আরএমএনপি)
একই সুরক্ষিত অঞ্চলে আটটি বিড়াল প্রজাতি, বিশ্বের সর্বোচ্চ বাঘের সংখ্যা রয়েছে এখানেই। রয়েছে অপরিসীম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক দর্শনীয় স্থান। পূর্ব হিমালয়ের এই জাতীয় উদ্যানটি ১০ টি বৈশ্বিক জীববৈচিত্র্যের হটস্পটগুলির মধ্যে এটি একটি। এ বাঘ, গণ্ডার, পিগমি হগ, প্রজাতিগুলি আরএমএনপির সীমার মধ্যে সুরক্ষিত।