অশুভ নাকি কুসংস্কার! কালো বিড়াল কোন দেশে শুভ বলে মানা হয়, জানেন?
বাঙালীদের কাছেও কালোবিড়াল নিয়ে রহস্যের শেষ নেই। আগেকার দিনে আমাদের গ্রাম দেশে যখন গরুতে গাড়ি টানা হতো, তখন কালো বিড়াল রাস্তা পার করলে গরুদের মধ্যে একটা অস্থির ভাব লক্ষণ করা যেত। সেই সময় গাড়োয়ান গরুদের শান্ত করতে কিছুক্ষণের জন্য গাড়ি থামিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতেন। পরে সেই রেওয়াজ কুসংস্কারে পরিণত হয়।
কালো বিড়াল বাড়ির আশপাশে দেখলেই মনে কু-ডাকতে শুরু করে। তাকে বাড়ি ছাড়া না করা অবধি শান্তি পান না অনেকেই। শুধু তাই নয়, রূপকথার গল্প থেকে উপকথা, সব জায়গাতেই হয় প্রেতাত্মা অথবা অশুভ আত্মা বা ডাইনির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় কালো বিড়াল। বিড়ালের রং কালো হওয়ার সঙ্গে তার অশুভ হওয়ার কোনও সম্পর্কই নেই। সবটুকুই মূলত কুসংস্কার। ইতিহাসের পাতা ঘাটলে পাওয়া যায় কিছু অজানা ইতিহাস ও তথ্য।
কালো বিড়াল শয়তানের অবতার
৩০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের কথা। প্রাচীন মিশরে কালো বিড়াল ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রাণী। সেসময় মিশরে এমনও নিয়ম ছিল যে কোন বিড়ালকে হত্যা করা মৃত্যুদন্ডের শামিল। এর কয়েক সহস্রাব্দ পরে ইউরোপের কিছু মানুষের মনে এমন ধারণা জন্মালো যে, কালো বিড়াল সম্পর্কে একধরনের ভয় কাজ করতে শুরু করলো। অনেকের মনে বিশ্বাস জন্মাতে শুরু করলো যে, কালো বিড়াল হচ্ছে শয়তানের অবতার। মধ্যযুগের সেই সময়টায় ইউরোপে ডাকিনী বিদ্যার বেশ প্রসার ঘটে। ডাকিনী বিদ্যায় দীক্ষিত বয়স্ক মহিলাদের সঙ্গে সবসময় থাকতো কালো বিড়াল। ফলে কালো বিড়াল সম্পর্কে মানুষদের মধ্যে নেতিবাচক ধারণার জন্ম নেয় এবং সকলের মনে এক ধরনের ভয় কাজ করতে থাকে।
ইংল্যান্ডের লিঙ্কনশায়ারের ঘটনা:
কেন পোড়ো বাড়িতে কালো বিড়াল থাকলে তাকে ভূত-প্রেতের আস্তানা বলা হয়? এর পিছনে একটি অদ্ভুত গল্প আছে। ইংল্যান্ডের লিঙ্কনশায়ারে ঘটে এই অদ্ভুত ঘটনাটি। একদিন অমাবস্যার রাতে এক ভদ্রলোক তার ছেলেকে নিয়ে হেঁটে বাসায় ফিরছিলেন।এমন সময় হঠাৎ একটি কালো বিড়াল তাদের সামনে দিয়ে রাস্তা পার হতে থাকে। ভদ্রলোকটি বিড়ালটিকে তাড়া করেন। তাড়া খেয়ে কালো বিড়ালটি পাশের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। পরদিন ছেলেকে নিয়ে একই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় তারা জানতে পারেন আগের দিন বিড়ালটি যে বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল সে বাড়ির এক বৃদ্ধা মারা গেছেন। বাড়ির লোকজন বৃদ্ধার মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ায় সময় তাদের কারো কারো কথোপকোথন থেকে জানা যায় যে, তারা বৃদ্ধার মৃত্যুর জন্য বাড়িতে প্রবেশ করা সেই কালো বিড়ালকে দায়ী করছে। পরবর্তীতে এ ঘটনা অনেকের মনে রেখাপাত করে।ফলে সকলের মনে কালো বিড়ালকে নিয়ে একধরনের ভয় ভীষণভাবে প্রভাব বিস্তার করে।
কালো বিড়াল কাদের জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনে-
অনেক দেশে ও সমাজে কালো বিড়ালকে এখনোও সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
স্কটিশরা বিশ্বাস করে যে, ঘরে কালো বিড়ালের আগমন উন্নতির প্রতীক। আরো বিশ্বাস করা হয় যে, যদি কোন মহিলার কালো বিড়াল থাকে, তবে তার অনেক শুভাকাঙ্খী থাকবে।
ইংল্যান্ডের মিডল্যান্ড অঞ্চলে বিয়ের উপহার হিসেবে কনেকে কালো বিড়াল উপহার দেয়া হতো। তারা মনে করতো যে, এটা কনের জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনবে।
ইংল্যান্ডের নাবিকরাও এক সময় ভালো আবহাওয়ার প্রত্যাশায় যাত্রা পথে কালো বিড়াল সঙ্গে রাখতো।
ইতালিয়ানদের কাছে কালো বিড়ালের নাক দ্বারা সৃষ্ট ঘরঘর শব্দ শোনা ছিল সৌভাগ্যের।
টিডলস রয়েল নেভির একটি বিখ্যাত জাহাজ আছে যেখানে কালো বিড়ালের অতি প্রাকৃতিক ক্ষমতাকে সৌভাগ্যের লক্ষণ হিসেবে দেখা হয়। তাই জাহাজে ‘জাহাজ বিড়াল’ রাখা হয়।
পশ্চিমা দেশের অনেক জেলের বউরা তাদের বাসায় কালো বিড়াল পোষে তাদের স্বামীর যাতে কোন অমঙ্গল না হয় সেজন্য।
কালো বিড়ালকে আঘাত করা বা তাকে মেরে ফেলাকে অশুভ হিসাবে গণ্য করত ইজিপ্সিয়ানরা। বিশ্বাস করত কালো বিড়ালের মধ্যে কিছু আধ্যাত্মিক শক্তি রয়েছে। তারা কালো বিড়ালকে পুজোও করত।