মহাভারতে অর্জুনের পুত্র নাকি রূপান্তরকামী ছিলেন! কতটা যুক্তিযুক্ত
ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রও বটে। বলতে গেলে আধুনিক সমাজব্যবস্থাতে এই চরিত্রের প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুনের পুত্র ছিলেন রূপান্তরকামী আরাবন।
‘যা নেই মহাভারতে তা নেই ভারতে’। পাণ্ডব,কৌরব, কৃষ্ণ, দ্রৌপদী, কর্ণের মত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলির কথা তো আমরা সকলেই জানি। এছাড়াও যে আরও কত চরিত্র ছড়িয়ে রয়েছে এই মহাকাব্যের পাতায় পাতায় এবং তাঁরা যে মহাভারতের গতিপথে কত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন, তা নজরের বাইরে চলে যায়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, মহাভারতের রচয়িতা ব্যাসদেব। এই মহাকাব্যটি হিন্দুশাস্ত্রের ইতিহাস অংশের অন্তর্গত। মহাভারত কথাটির অর্থ হল ভরত বংশের মহান উপাখ্যান।
‘মহাভারত’ নামটির উৎপত্তি প্রসঙ্গে একটি আখ্যান প্রচলিত যে, দেবতারা তুলাযন্ত্রের একদিকে চারটি বেদ রাখেন ও অন্যদিকে বৈশম্পায়ন প্রচারিত ভারত গ্রন্থটি রাখলে দেখা যায় ভারত গ্রন্থটির ভার চারটি বেদের চেয়েও অনেক বেশি। সেই কারণে ভারত গ্রন্থের বিশালতা দেখে দেবগণ ও ঋষিগণ এর নামকরণ করলেন ‘মহাভারত’। আবার একে ‘পঞ্চম বেদ’ও বলা হয়। জগতের তাবৎ শ্রেষ্ঠ বস্তুর সঙ্গে একে তুলনা করে বলা হয়েছে: “মহত্ত্বাদ্ ভারতবত্ত্বাচ্চ মহাভারতমুচ্যতে।”
আরাবন অথবা ইরাবন। এই নাম মহাভারতের একটি পর্বে পাওয়া যায়। ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রও বটে। বলতে গেলে আধুনিক সমাজব্যবস্থাতে এই চরিত্রের প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুনের পুত্র ছিলেন রূপান্তরকামী আরাবন। অর্জুন এবং নাগকন্যা উলুপির সন্তান ছিলেন তিনি। বাবার মতোই তিনি ছিলেন শস্ত্রবিদ্যায় পারদর্শী। পাণ্ডবদের হয় কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধে যোগ দেন আরাবন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পাণ্ডবদের জয় সুনিশ্চিত করতে নিজেকে উত্সর্গ করার সিদ্ধান্ত নেন আরাবন। রূপান্তরকামী আরাবন শ্রীকৃষ্ণের কাছ থেকে ৩টি বর লাভ করেন। একটি হল যুদ্ধে বীরের মৃত্যু বরণ করা, দ্বিতীয়টি হল ১৮ দিনের যুদ্ধ পুরোটা দেখার সৌভাগ্য লাভ করা এবং তৃতীয়টি হল মৃত্যুর পর তাঁকে যেন দাহ করা হয়। সেই সময়ের রীতি অনুযায়ী অবিবাহিতদের মৃত্যুর পর দাহ না করে কবর দেওয়া হত। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময় পর্যন্ত আরাবন ছিলেন অবিবাহিত। যুদ্ধে তিনি নিজেকে দেবী কালীর কাছে উত্সর্গ করবেন, এটা জানার পর কোনও নারী তাঁকে বিয়ে করতে চাইছিলেন না। তাই শ্রীকৃষ্ণ নারী শরীর ধারণ করে মোহিনী নাম নিয়ে আরাবনকে বিয়ে করেন এবং মৃত্য়ুর আগে তাঁরা এক রাত একসঙ্গে কাটান। আরাবনের মৃত্যুর পর নারীরূপী শ্রীকৃষ্ণ বৈধব্য বেশ ধারণ করে শোক পালন করেন। পরের দিন তিনি আবার নিজের আসল চেহারায় ফিরে আসেন।
আরও পড়ুন: তন্ত্রসাধনার উজ্জ্বল ধূমকেতু মহাসাধক বামাক্ষ্যাপা! জীবনের প্রতিটি পরতে রয়েছে অলৌকিক ঘটনা