রবীন্দ্রনাথের গানের দারুণ ভক্ত ছিলেন রামকৃষ্ণ!

শ্রীরামকৃষ্ণ রবীন্দ্রনাথকে চিনেছিলেন মূলত তাঁর গানে। প্রিয় শিষ্য নরেন্দ্রর (স্বামী বিবেকানন্দ) কণ্ঠে বেশ কয়েকটি রবীন্দ্রসংগীত শুনে ভাবোন্মাদ হয়েছিলেন রামকৃষ্ণ।

রবীন্দ্রনাথের গানের দারুণ ভক্ত ছিলেন রামকৃষ্ণ!
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 17, 2021 | 8:50 AM

একই সময়ের মহাপুরুষ হলেও সরাসরি সাক্ষাত হয়েছে হাতেগুনে এক থকে দুবার পর্যন্ত। তে একেবারেই যে পরস্পরের সঙ্গে দেখা হয়নি তান একেবারেই। রবীন্দ্রনাখ ঠাকুর ও শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব সমসাময়িক কালীন মহাপুরুষ হিসেবে খ্যাত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকবার দেখাও হয়েছিল, কিন্তু কেউ কারও দিকে আগ্রহ বাড়িয়ে যাননি। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির কিছু অনুষ্ঠানেও গিয়েছিলেন রামকৃষ্ণ। সেখানেও রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা হয়েছিল রামকৃষ্ণের কিন্তু সে পর্যন্তই। এদিকে রামকৃষ্ণের সঙ্গে ব্রাহ্মসমাজের যোগাযোগ ছিল। ব্রাহ্মসমাজের অনেকেই তাঁকে দেখতে আসতেন, তিনিও যেতেন। ব্রাহ্মসমাজের বেশ কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে রামকৃষ্ণের সাক্ষাৎ হয়েছিল, যার মধ্যে অন্যতম রবীন্দ্রনাথের পিতৃদেব দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। দেবেন্দ্রনাথের সঙ্গে রামকৃষ্ণের প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল ১৮৬৬ সালে, তখন রবীন্দ্রনাথের বয়স ছিল মাত্র ৫ বছর।

শ্রীরামকৃষ্ণ একবার দক্ষিণেশ্বরে তাঁর দর্শনার্থীদের সামনে দেবেন্দ্রনাথ সম্পর্কে বলেছিলেন, দেবেন্দ্রনাথ তাঁর জীবনে যোগ ও ভোগ উভয়কেই একত্র করেছিলেন। দেবেন্দ্রনাথকে কলিযুগের জনক রাজার সঙ্গে তুলনা করে শ্রীরামকৃষ্ণ উচ্চ সম্মান দেখিয়েছিলেন। ‘কথামৃত’ পড়লে এটা বোঝা যায় যে শ্রীরামকৃষ্ণ অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিদের সঙ্গে ছুটে গিয়ে আলাপ করতেন। সেদিক থেকে রবীন্দ্র-রামকৃষ্ণ বিষয়টি অনেকটা ভিন্ন চিত্র তুলে ধরে। তবে এই দুই মহাপুরুষের সরাসরি আলাপ না হলেও তাঁরা দুজনেই দুজনের অন্তর-প্রকৃতি অনুভব করতে পেরেছিলেন, সে কারণে হয়তো বাহ্যিক পরিচয়ের প্রয়োজন মনে করেননি।

শ্রীরামকৃষ্ণ রবীন্দ্রনাথকে চিনেছিলেন মূলত তাঁর গানে। প্রিয় শিষ্য নরেন্দ্রর (স্বামী বিবেকানন্দ) কণ্ঠে বেশ কয়েকটি রবীন্দ্রসংগীত শুনে ভাবোন্মাদ হয়েছিলেন রামকৃষ্ণ। যেহেতু নরেন্দ্র নিজেও ছিলেন একজন উচ্চমানের ধ্রুপদি, তাই রবীন্দ্রনাথের ধ্রুপদ আঙ্গিকের কিছু গান নিজের কণ্ঠে তুলে নিয়ে গাইতেন। আর গুরু শ্রীরামকৃষ্ণের পুরো অস্তিত্বই ছিল সংগীতময়। নিজে অনেক গান গেয়েছেন এবং অনেকের কাছ বহু গান শুনেছেন। এমন কোনো ঘটনা পাওয়া যায় যায় না, যেখানে শ্রীরামকৃষ্ণ-নরেন্দ্রর দেখা হয়েছে অথচ কোনো গান হয়নি। এমন গানের আসরে ঠাকুর নরেন্দ্রর কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের যে গানগুলো শুনেছেন, সেগুলো হলো, ‘গগনের থালে রবিচন্দ্র-দীপক জ্বলে’ (শিখ ভজনের আশ্রয়ে রচিত রবীন্দ্রনাথের গান), ‘দিবানিশি করিয়া যতন’, ‘তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা’, ‘আমার মাথা নত করে দাও’।