Ekadashi 2021: একাদশী পালন না করলে নরকযাত্রা অনিবার্য! ইতিহাস জানা আছে কী?

এদিন বর্ণ ও লিঙ্গনির্বিশেষে যে কেউ একাদশী পালন করতে পারেন। তবে হিন্দুধর্মমতে, এদিন বিধবাদের বিশেষ করে উচ্চবর্মীয় বিধবাদের নিরম্বু উপবাস মেনে চলার বিধান দেওয়া হয়েছে।

Ekadashi 2021: একাদশী পালন না করলে নরকযাত্রা অনিবার্য! ইতিহাস জানা আছে কী?
রক থেকে মুক্তি পেতে পাপীদের একাদশী পালন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিষ্ণু!
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 06, 2021 | 6:52 AM

একাদশী হল চান্দ্র তিথি। চাঁদের শুক্ল ও কৃষ্ণপক্ষের একাদশী তিথি । হিন্দু ধর্মানুসারে, এই তিথি পুণ্যতিথি হিসেবে বিবেচিত। একাদশী পালন শরীরের পক্ষেও উপকারী তাই অনেকে প্রতি মাসে দুটি একাদশী তিথি পালন করেন অনেকে। এদিন বর্ণ ও লিঙ্গনির্বিশেষে যে কেউ একাদশী পালন করতে পারেন। তবে হিন্দুধর্মমতে, এদিন বিধবাদের বিশেষ করে উচ্চবর্মীয় বিধবাদের নিরম্বু উপবাস মেনে চলার বিধান দেওয়া হয়েছে। এসময় সাধারণত ফলমূল ও বিভিন্ন সবজি এবং দুধ খাওয়া যায়, তবে পঞ্চরবি শস্য বর্জন করা বাঞ্চনীয় ।

একাদশী বিভিন্ন সময়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পালন করা হয়। তাই সেই সময় নানান নামে একাদশী পালন করা হয়। আষাঢ়, ভাদ্র ও কার্তিক মাসের শুক্লা একাদশী বিশেষ শুভ বলে গণ্য করা হয়। পদ্মপুরাণে একাদশীর কথা উল্লেখ রয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, একাদসী কী, একাদশীতে কেন উপবাস করা হয়, ব্রত পালন করলে কী লাভ হয়, এই নিয়ে জৈমিনি ঋষি তাঁর গুরুদেব মহর্ষি ব্যাসদেবকে একদিন কৌতূহলবশত জিজ্ঞাসা করেছিলেন। শিষ্যের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, সৃষ্টির প্রারাম্ভে পরমেশ্বর ভগবান এই জড় সংসারে স্থাবর সঙ্গম সৃষ্টি করেছিলেন। সখানে মর্ত্যলোকবাসীদের শাসনের জন্য একটি পাপপুরুষ নির্মাণ করেছিলেন। সেই পাপপুরুষের অঙ্গগুলি বিভিন্ন পাপ দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। পাপপুরুষের মাথা ব্রহ্মহত্যা পাপ, দুটি চোখে মদ্যপান, মুখে স্বর্ণ অপহরণ, কান দুটি গুরুপত্নী গমন, নাকে স্ত্রী হত্যা, গ্রীবা- ধন অপহরণ, গলদেশ ভ্রুণহত্যা, বক্ষ পরস্ত্রী গমন, দুটি বাহু গোহত্যা, উদর আত্মা.স্বজন বধ, নাবি শরণাগত বধ, কোমর- আত্মশ্লাঘা, দুই উরু গুরুনিন্দা, শিশ্ন- কন্যাসন্তান বিক্রি, দুই পা পিতৃহত্যা, শরীরের রোম- সমস্ত উপপাতক। এইভাবে বিভিন্ন পাপা দ্বাা ভয়ংকর পাপপুরুষ নির্মিত হয়।

ভগবানের বিধান না মেনে চলাই হল অধর্ম, যার ফলে পাপে লিপ্ত হয় এবং সেই পাপী নরকগামী হয়। কালক্রমে ভগবান বিষ্ণু একদিন তাঁর বাহন গরুড়ের পিঠে চড়ে নরকে যমরাজের সঙ্গে দেখা করতে যান এবং কথোপকথন চলাকালে দক্ষিণ দিক থেকে কান্না,আর্তনাত, চিৎকার শুনতে পান। সেই শুনে স্থির থাকতে না পেরে বিষ্ণু যমরাজকে জিজ্ঞাসা করেন, কারা এতো কষ্ট পাচ্ছেন? যমরাজ বলে ওঠেন- এরা পৃথিবীর পাপাচারী মানুষ। কর্মদোষে নরকগামী হয়ে নরকযন্ত্রনা ভোগ করছে। সেই শুনে বিষ্ণু বলেন, আমি তাদের দেখতে চাই। অতঃপর যমরাজ-সহ বিষ্ণু বিভিন্ন নরক কুণ্ড পরিদর্শন করলেন। কোথাও আগুনে পোড়ানো হচ্ছে, কোথাও তেলে ভাজা হচ্ছে, কোথাও বা পাহাড় থেকে ফেলে দেওয়া হচ্ছে, কোথাও আবার উত্তপ্ত গলিত লোহা জোর করে খাওয়ানো হচ্ছে ইত্যাদি। এই সব মর্মান্তিক ও ভয়ংকর যন্ত্রণায় কাতারানো মানুষদের দেখে ভগবান বিষ্ণুর হৃদয়ে করুণার ভাব জন্মায়। তিনি বলেন- আহা! এরা তো আমারই সৃষ্ট জীব,আমারই সন্তান। শুধু মাত্র কর্মদোষে নরকগামী হয়েছে। এঁদের উদ্ধারের পথ তো আমাকেই করতে হবে। একথা বলতে না বলতেই বিষ্ণু নিজেই একাদশী দেবী রূপে আবির্ভুত হন এবং একাদশীর প্রভাবে সকলে নরক থেকে মুক্তি লাভ করেন। তারপর নারদ মুনির কৃপায় সমস্ত জগতে একাদশী ব্রতের কথা প্রচারিত হয়। এদিকে একাদশীর প্রভাবে পাপপুরুষ কোথাও স্থান না পেয়ে ভগবান বিষ্ণুর শরণাপন্ন হোন এবং বলেন- আমি আপনার একাদশীর প্রভাবে কোথাও স্থান পাচ্ছি না, দয়া করে আমাকে স্থান দিন। ভগবান বিষ্ণু বলেন, একাদশী তিথি আসলে তুমি পঞ্চ রবি শস্যে প্রবেশ করবে। তাহলে একাদশীর প্রভাব থেকে মুক্তি লাভ করবে। একাদশীর শুধু উপবাস থাকা নয় বরং বেশি বেশি হরি নাম জপতে,ধর্মীয় কাজ করা উচিত।

আরও পড়ুন: গীতার ১৮টি নামের মাহাত্ম্য কী জানেন? মনে উঁকি দেওয়া প্রশ্নের উত্তর পাবেন এখানে