News9 Plus world exclusive: ১৯৯৩ মুম্বই বিস্ফোরণেই প্রথম ভয়াবহ সন্ত্রাসের অভিজ্ঞতা ভারতের : প্রাক্তন RAW প্রধান
News9 Plus world exclusive: ১৯৯৩ মুম্বই বিস্ফোরণেই প্রথম ভয়াবহ সন্ত্রাসের অভিজ্ঞতা ভারতের। এরপর ২৬/১১-র হামলা দেখেছে ভারত।
অ-আমন্ত্রিত এই বিস্ফোরণে বিস্মিত হয়েছেন অনেকেই। এরকম কোনও জঙ্গি হামলার সতর্কতাও জারি করা হয়নি আগে। রিসার্চ অ্য়ান্ড অ্য়ানলিসিস উইং, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, মহারাষ্ট্র বা বম্বে পুলিশ, কারও কাছেই কোনও খবর ছিল না এই হামলার বিষয়ে। তাই আকস্মিক এই কাণ্ডে অনেকেই থ হয়ে গিয়েছিলেন। এদিকে অনেকেই জানুয়ারির হিংসার সঙ্গে এই হামলার সমীকরণ রচনা করতে চান। তবে এই সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়ে র-য়ের প্রাক্তন প্রধান বিক্রম সুদ জানিয়েছেন, অনেক আগে থেকেই এই হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এই হামলার প্রস্তুতি নিতে অনেকটাই সময় লেগেছে। জানুয়ারিতে কোনও হিংসার ঘটনা না হলেও এই হামলা হত। RAW, MI6 বা অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার মতো নয় আইএসআই।
বিক্রম সুদের মতে, পাকিস্তানের ISI সেই রাষ্ট্রের মধ্যে একটি রাষ্ট্র নয়। তারাই একটি রাষ্ট্র। তারা চাইলেই যেকোনও পদক্ষেপ করতে পারে। মুম্বইয়ে হামলা চালানোর জন্য তাদের প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির অনুমতি নিতে হয়নি। সম্ভবত তারা নিজেরাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্য কোনও ব্যক্তির সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করলে হয়ত কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নিষেধ করতে পারেন। তবে সম্ভবত এই হামলা তাদের পরিকল্পনার একমাত্র অংশ ছিল না। ভারতের জন্য আরও সমস্যা তৈরির জন্য তাদের হয়ত পরবর্তী আরও পরিকল্পনা থাকতে পারে। RAW-র প্রাক্তন প্রধানের মতে, ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর থেকেই এই হামলার ছক কষতে শুরু করেছিল আইএসআই। অর্থাৎ, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিনই এই হিংসার বীজ বপণ করা হয়েছিল। আর ডিসেম্বরে পরিকল্পনা করলে তবেই মার্চে এত বড় বিস্ফোরণ ঘটনা যায়। জানুয়ারি হিংসার পর এত কম সময়ে সামগ্রী সংগ্রহ থেকে শুরু করে, সব পরিকল্পনা ও মানুষ জোগাড় সম্ভব নয়।
RAW-র প্রতিষ্ঠাতা তথা প্রাক্তন গোয়েন্দা আধিকারিক বি রামন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলা নিয়ে একটি গবেষণা করেছিলেন। তিনি এই হামলা অনুকরণের একটি সম্ভাবনা প্রকাশ করেছিলেন। তবে আগে থেকে কোনও সতর্কবার্তা ছিল না। তবে ঘটনাস্থল থেকে পাকিস্তানি পাসপোর্ট, ভিসা ও ছবি থেকে এই ঘটনায় পাকিস্তান যোগ আরও স্পষ্ট হয়। প্রাক্তন র আধিকারিক জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে অনেক নথি, তথ্য ছিল। বিক্রম সুদ জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল থেকে একটি ডিটোনেটর উদ্ধার হয়েছিল। সেই ডিটোনেটরে পাকিস্তান অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরির চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। আর তা পাকিস্তানেই তৈরি কি না তা পুনরায় দেখার জন্য আমেরিকার কাছে পাঠানো হয়। তারা জানায়, সেই ডিটোনেটর পাকিস্তানেই তৈরি। পরে যখন সেটি ফেরত চাওয়া হয় তখন তারা জানায়, ভুলবশত সেই ডিটোনেটরটি ভেঙে গিয়েছে। তারা সেই প্রমাণ ধ্বংস করে দিয়েছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইতে ভারতকে আমেরিকার সাহায্যের এটাই বৈশিষ্ট্য। প্রাক্তন র প্রধান আমেরিকার বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, এক্ষেত্রে পাকিস্তানকে কাঠগড়ায় তুলতে চায়নি আমেরিকা। সন্ত্রাসবাদী হামলায় দোষী সাব্য়স্ত হওয়া থেকে পাকিস্তানকে রক্ষা করছিল আমেরিকা। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ বিনষ্টের অভিযোগ তুলেছেন বিক্রম সুদ।
নয়ের দশক জুড়ে কাশ্মীর নিয়ে যখন উত্তেজনা চলছিল সেই সময় ভারত বারংবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপকে মদত দেওয়ার জন্য। সেই সময় আমেরিকা ভারতের উপর চাপ সৃষ্টি করে অভিযোগ করে, পাকিস্তানের সঙ্গে সমস্যা সমাধানের বদলে সেদেশে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চালাচ্ছে ভারত। কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী কার্যকলাপ চালানো ভারতের জন্য আরও কঠিন করে তুলেছিল আমেরিকা। ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল। বিক্রম সুদের অভিযোগ,পাকিস্তানকে আড়াল করতে ভারতকে কাঠগড়ায় তুলেছে আমেরিকা। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে একনায়কতান্ত্রিক শাসনকে সমর্থন জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
প্রসঙ্গত, নয়ের দশকে পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক পরিকাঠামো কিছুটা হলেও ছিল। সেসময় দু’বছর অন্তর অন্তর ক্ষমতা বদল করতেন নওয়াজ শরিফ ও বেনজির ভুট্টো। তবে এইসবের আড়ালে আসল সত্যি হল সেখানে শাসন চলত সেনারই। এবং এখনও পাকিস্তানে সেই রীতিই বজায় রয়েছে। উল্লেখ্য, আফগান মুজাহিদিনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এবং আফগানিস্তানকে সোভিয়েত ইউনিয়নের দখল থেকে মুক্ত করতে আমেরিকাকে সাহায্য করেছে পাকিস্তান। তাই পাকিস্তানের কাছে দায়বদ্ধ আমেরিকা। আমেরিকার বিশ্বাস ছিল যে তারা ভারতের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী, বিরোধী পাকিস্তান চায় যাতে উপমহাদেশে ভারত খুব বড় না হয়ে যায়। এভাবেই বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলি তাদের খেলা খেলছে।
এখানে দেখুন জিহাদি জেনারেল:
https://www.news9plus.com/webseries/the-jihadi-general