News9 Plus World Exclusive: মুম্বইয়ে রক্ত ঝরলে সারা দেশে রক্ত ঝরে, ৯৩-র মুম্বই বিস্ফোরণ প্রসঙ্গে বললেন প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার
News9 Plus World Exclusive: আগামিকাল ৩০ বছর পূর্তি হচ্ছে মুম্বই বিস্ফোরণের। এই আবহে ৯৩-র বিস্ফোরণের সময় নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন মুম্বই পুলিশের প্রাক্তন কমিশনার এমএন সিং।
১৯৯৩ সালের ১২ মার্চ। দিনটা ছিল শুক্রবার। মুসলিমদের নমাজ পড়া শেষ হয়েছে সবেমাত্র। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর মুম্বইয় হিংসা ছড়িয়ে পরে। সেই সময় হিন্দুরা রাস্তায় নমাজ পড়ার প্রতিবাদে ‘মহা আরতি’ শুরু করেছিল। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। সেই পরিস্থিতির উপর নজর ছিল মুম্বই পুলিশের। মুম্বই পুলিশের প্রাক্তন কমিশনার এমএন সিং হামলার দিনের ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে জানাচ্ছেন, “অফিসে থাকাকালীন আমাদের কাছে একটি খবর আসে যে বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে একটি বিস্ফোরণ ঘটেছে। তখন ঘড়ির কাঁটায় দুপুর দেড়টা। আমি যখন মধ্যাহ্নভোজের জন্য রওনা হতে যাচ্ছিলাম সেই মুহূর্তেই কন্ট্রোল রুম আমাকে বিস্ফোরণের কথা জানায়। আমি তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দিই। বিএসই-তে সেই দৃশ্য ভয়াবহ ছিল। মারা গিয়েছেন প্রায় ৮০ জন।”
বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে বিস্ফোরণের খবর পর পরই আরও বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের খবর আসতে থাকে। এয়ার ইন্ডিয়া বিল্ডিংয়ে একটি বিস্ফোরণ। কাতরা বাজার, জ়াভেরি বাজারে একটি করে বিস্ফোরণের খবর আসে কন্ট্রোল রুমে। তারপর দাদারে সেনা ভবনের কাছেও একটি বিস্ফোরণের খবর মেলে। ভি সান্তারামের থিয়েটারের কাছে আরেকটি বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়। মহিম মৎস্য়জীবীদের কলোনিতেও বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়। পশ্চিম প্রান্তে তিনটি পাঁচতারা হোটেলে হামলা হয়েছে বলে জানা যায়। এমএন সিং বলেন, “আমাদের কাছে খবর আসে বিমানবন্দরে গ্রেনেড হামলা করা হয়েছে। ২ ঘণ্টা ১০ মিনিটে ১২ টি বিস্ফোরণের খবর আসে। মনে হচ্ছিল গোটা শহরেই যেন হামলা হয়েছে। আমার তখন মাথায় চলছে, তৃতীয় হিন্দু-মুসলিম হিংসা রুখতে হবে। ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি ছিল।”
তিনি জানিয়েছে, এই হামলার বিষয়ে আগে থেকে ভারতীয় গোয়েন্দার কাছে কোনও হুমকি বা সতর্কবার্তা ছিল না। একরকম আচমকাই এই হামলা হয়েছে। আর আরেকটি প্রতিবন্ধকতা ছিল। তিনি বলেন, “আমি এবং পুলিশ কমিশনার (এ.এস. ) সামরা দু’জনেই শহরে নতুন ছিলাম। আমরা দু’জনেই প্রায় এক মাস আগে দায়িত্ব নিয়েছিলাম।” বিএসই পরিদর্শনের পরই এয়ার ইন্ডিয়া বিল্ডিংয়ে যান তিনি। সেখানে প্রায় ২০ জন মারা গিয়েছেন। আহত ৮০ জন। এখানে থাকাকালীনা এমএন সিং খবর পান, সিমেন্স বিল্ডিংয়ে সেঞ্চুরি ভবনের কাছে একটি গাড়ি পাওয়া গিয়েছে। এই সেঞ্চুরি ভবনেও হামলা চালানো হয়েছিল। এই খবর পাওয়া মাত্র সিমেন্স বিল্ডিংয়ের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। গিয়ে ওই গাড়ি থেকে অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করেন। আর এখান থেকেই ১৯৯৩ সালের এই মুম্বই হামলার তদন্ত শুরু হয়।
বিস্ফোরণ স্থল থেকে স্মাগলার টাইগার মেমনের গাড়ি উদ্ধার করে মুম্বই পুলিশ। এমএন সিং বলেন, “সেই বিকেলের মধ্যেই তার সম্বন্ধে বিভিন্ন তথ্য আমাদের হাতে আসে। ওর পুরো নাম মুস্তাক ইব্রাহিম মেমন। মহিমের আল-হুসেইনি বিল্ডিংয়ে থাকে। আমরা তড়িঘড়ি সেখানে যাই। বাইরে থেকে বন্ধ ছিল দরজা। প্রতিবেশীরা জানায় তারা দুবাইতে গিয়েছে। তখন আমাদের উপলব্ধি হয়, এটা বম্বের আন্ডারওয়ার্ল্ডের কাজ। এখানে কোনওভাবে দাউদ ইব্রাহিম-টাইগার মেমন লিঙ্ক।” এদিকে ওই ওই পরিত্যক্ত গাড়ি থেকে AK 56 রাইফেল ও গ্রেনেড উদ্ধার হয়। সেগুলি যে ভারতের নয় তা তখনি বোঝা গিয়েছিল। রাইফেল ও গ্রেনেডে পাকিস্তানের চিহ্ন স্পষ্ট ছিল বলে জানিয়েছেন মুম্বই পুলিশের প্রাক্তন কমিশনার এমএন সিং। কিছুদিন পরে তাঁরা জানতে পারেন, টাইগার মেমন সেই সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র সমুদ্র পথে পাকিস্তান থেকে নিয়ে এসেছে। সেখানেই এই হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের নাম জড়িয়ে যায়। এক্ষেত্রে পাকিস্তান অর্থাৎ, আইএসআই-র মদতেই এই হামলা চালানো হয়েছিল। এছাড়াও বেশ কয়েকজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। জেরার মুখে তারা জানায়, পাকিস্তানে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। মুম্বই থেকে দুবাই, তারপর সেখান থেকে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সে করে তাদের ইসলামাবাদে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তারা স্বীকার করে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তিনি বলেন, ” তারা অস্ত্র সরবরাহ করত। তারা প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তারা আশ্রয় দিয়েছে। ইসলামাবাদে অবতরণের সময় তাদের কাউকেই চেক করা হয়নি। ইমিগ্রেশন ও সিকিউরিটি চেক দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের কেউ থামায়নি। যখন আইএসআই জড়িত থাকে, তখন পাসপোর্টের প্রয়োজন হয় না।” এইসব থেকেই মুম্বইয়ের এই ভয়াবহ বিস্ফোরণে পাকিস্তান যোগ স্পষ্ট হয়েছে।
নিউজ৯ প্লাসে দেখুন জিহাদি জেনারেল: