ICC ODI World Cup 2023: বাইরে কার্নিভাল, ইডেনে ক্রিকেট সংরক্ষণের ব্যস্ততা
Eden Gardens: প্রতিবছর পুজো এলেই, বাঙালির বাড়িতে যেমন গোছগাছের ধুম লাগে, ইডেনও ঠিক তেমনি। বিশ্বকাপ এলেই খোলনলচে বদলে ফেলার একটা প্রবণতা তৈরি হয়। ২০১১ বিশ্বকাপেও তাই হয়েছিল। ২০২৩ বিশ্বকাপেও তাই। ১২ বছর আগের ইডেন আর আজকের ইডেনের চেহারা তফাত অনেকটা বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের মত। গতবারের চ্যাম্পিয়ন, এবার বেশ কয়েকটা ম্যাচ আগেই সেমিফাইনালের দৌড় থেকে ছিটকে গিয়েছে।
রক্তিম ঘোষ
কলকাতা: সকাল থেকে নিউজিফিডে একটাই খবর। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক গ্রেফতার। ট্রামে-বাসে-ট্রেনে বালুবাবুর প্রতিটি মুহূর্তের আপডেট নিয়ে আলোচনা। ক্রিকেট কোথায়? রাত পোহালেই বিশ্বকাপ। তার ছিটেফোঁটা আলোচনা শোনা গেল না ইডেনের বাইরে ব্যস্ত শহরে। ওয়াই চ্যানেল থেকে রেড রোডে গাড়ি নিয়ে প্রচুর নিয়মনাস্তি। দুর্গাপুজোর কার্নিভাল বলে কথা। কালো রেড রোড গাড়িঘোড়াহীন। সকাল থেকেই সাদা পোশাকের পুলিশের সারি। কড়া নিরাপত্তা। শারদীয়া উৎসবের শেষ মুহূর্ত। ক্রিকেটীয় পরিভাষায় বলা যায়, শারদীয়া উৎসবের টেল এন্ডার। উৎসবের টেলএন্ডার নিয়ে শহরে মেজাজ চড়া সুরে বাজছে। আর রেড রোড থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে দুই দল নিজেদের টেল এন্ডার নিয়ে বিস্তর চাপে। ব্যাটিং লেজ যে দু’দলকেই ভরসা জোগাতে পারছে না। তা সে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হোক বা নেদারল্যান্ডসের।
ইডেনের অলিন্দে এলে শোনা যাচ্ছে বিশ্বকাপের কথা। খানিক উন্মাদনা। দেখা মিলছে বিশ্বকাপের সাজ। বৃহস্পতিবার ৪ নম্বর গেটে দেওয়াল ভাঙার সাময়িক বিপত্তি সামলে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ইডেন গার্ডেন্স। মেরামতি প্রায় শেষ দিকে। তা নিয়ে যে খুব বিশেষ ভাবিত সিএবি কর্তারা, তেমনটা নয়। ঠিক যেমন লক্ষ্মীপুজোর ম্যাচ ঘিরে ভাবনার আতিশয্য নেই। আইপিএল হোক বা আন্তর্জাতিক ম্যাচ, ইডেন গমগম করে বলিউডি গান বা জনপ্রিয় মিউজিকে। চলে স্টেডিয়ামের আলো নিয়ে ফাইনাল রিভিশন। এমন গমগম করে মনে হয় যেন, পাড়ার সবচেয়ে অভিজাত বাড়িতে বিয়ের আসর বসেছে। পথ চলতি মানুষকে একবার ঘুরে তাকাতেই হবে। কান পাততেই হবে। সেই চেনা ইডেনের ছবি একেবারেই হাওয়া শুক্রবার। এখানে অনেক বেশি ক্রিকেট রয়েছে। কী রকম?
প্রতি বছর পুজো এলেই, বাঙালির বাড়িতে যেমন গোছগাছের ধুম লাগে, ইডেনও ঠিক তেমনি। বিশ্বকাপ এলেই খোলনলচে বদলে ফেলার একটা প্রবণতা তৈরি হয়। ২০১১ বিশ্বকাপেও তাই হয়েছিল। ২০২৩ বিশ্বকাপেও তাই। ১২ বছর আগের ইডেন আর আজকের ইডেনের চেহারার তফাত অনেকটা বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের মতো। গত বারের চ্যাম্পিয়ন, এ বার বেশ কয়েক ম্যাচ আগেই সেমিফাইনালের দৌড় থেকে ছিটকে গিয়েছে। এই বেন স্টোকসদের কেউ মেলাতে পারছেন না ৪ বছর আগের ইংল্যান্ডের সঙ্গে। তেমনি ২০১১ সালের ইডেনের সঙ্গে এই ইডেনের বিস্তর ফারাক। কাঠামো এক থাকলেও সৌন্দর্যায়ন চোখে লাগার মতো। ব্যাস এটুকুই। বাকিটা ক্রিকেট।
কেন ক্রিকেট? ক্রিকেটের বাইরে লম্ফজম্প কম। গান বাজনা, আলোর রোশনাইয়ের বাইরেও যে একটা ভাল ম্যাচ আয়োজন করা যায়, সেটাই যেন মূল লক্ষ্য হয়ে উঠেছে বর্তমান সিএবি সভাপতির কাছে। ক্রিকেটের নন্দনকাননকে শুক্রবার দেখলে কে বলবে শনিবার ইডেনে হবে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। পাড়ার শনিপুজোতেও এর থেকে বেশি জাঁকজমক হয়। আসলে ইডেনের উৎসব বদলে যাচ্ছে। সিএবি কর্তাদের লক্ষ্য, উৎসব হোক ব্যাট আর বলের। গানের মেলা আর আলোর খেলা দিয়ে আর কবে ক্রিকেট তার নান্দনিকতা পেয়েছে?
দুপুরে অনুশীলন শুরুতেই ইলশেগুড়ি বৃষ্টি। গায়েও তেমন লাগেনি। মেঘ হালকা কালো। আয়োজকদের মন দুরুদুরু। ইডেনে প্রথম ম্যাচে কি ব্যাটিং করবেন বরুণ দেব? মোবাইল ঘাঁটা শুরু, আগামী ৫ দিনের আবহাওয়ার মর্জি জানতে-বুঝতে। বৃষ্টির যে পূর্বাভাস রয়েছে, তা বলার মতো নয়। সম্ভাবনা ২ শতাংশের মতো। তবে তাতেও হালকা মনোভাব নেই ইডেনের আয়োজকদের। তড়িঘড়ি সাদা কভারে ঢাকা পড়ল ইডেনের পিচ। পাশেই চলছিল দুই দলের অনুশীলন। ২-১ ফোঁটা বৃষ্টি পড়েই আবার বন্ধ। চাদর সরল পিচ থেকে। তবে মেঘলা আকাশটা কাটেনি তেমন ভাবে। সন্ধেয় ফ্লাডলাইট জ্বলতেই ফের গোটা মাঠ সাদা কভারে ঢেকে ফেলা হল। রাতে যদি বৃষ্টিও হয়, মাঠ যাতে বাঁচে। সেটাই লক্ষ্য আয়োজকদের। কোনও খামতি রাখতে রাজি নন। বিকেলেও তেমন জগঝম্প গান বাজল না। শুরুতেই যে বললাম, ইডেন এখন মন দিয়েছে ক্রিকেট সংরক্ষণে। ৫০ ওভারের ক্রিকেট যে ধুঁকছে, তা বিশ্বকাপের শুরুর দিন থেকে গ্যালারি দেখেই আন্দাজ করা গিয়েছিল। তবুও সেটুকুকে বাঁচিয়ে রাখতে আনুষাঙ্গিক বিনোদন নয়। ইডেন অনেক বেশি যেন ক্রিকেটমুখী। নাকি…
আসলে প্রশ্ন উঠছে অন্য কারণে। ইডেনে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, সিএবির নাকি যাবতীয় ভাবনা ৫ নভেম্বর ম্যাচ ঘিরে। বিরাট কোহলির জন্মদিন। তার উপর ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ। সেই ম্যাচ যে অ্যাসিড টেস্ট, বিলক্ষণ জানেন পোড়খাওয়া কর্তারা। সেই ম্যাচই যে উৎসবের ম্যাচ, তা যেন মনে মনে ঠিক করে ফেলেছে সিএবি কর্তারা। বিরাটের জন্মদিন কী ভাবে সেলিব্রেশন হবে, কী ভাবে সেই ম্যাচ আয়োজন হবে, সেই আলোচনা দেড় সপ্তাহ আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে কি শনিবারের নির্বিষ ম্যাচ নিয়ে ভাবিতই নয় ইডেন কর্তারা? উত্তর না। ভাবিত তাঁরা ক্রিকেট সংরক্ষণে। ব্যাট-বলের উৎসবে। আর ৫ নভেম্বর হবে ব্যাট, বল, বিরাট বৈভবে, উৎসবে। তেমনটাই তো কান পাতলে শোনা যাচ্ছে।