Yashasvi Jaiswal, IND vs AUS: নব্বই নটআউট, কিং কোহলির সামনে বিরাট হচ্ছেন যশস্বী জয়সওয়াল!
India vs Australia 1st Test: বিদেশের মাঠে লাল বলের বিরুদ্ধে ওপেনিং কঠিনতম ঠাঁই। সুনীল গাভাসকর ছাড়া ধারাবাহিক ভাবে কে আর করতে পেরেছেন? দ্বিতীয় ইনিংসে ছাড়ো-ধরো, ধরো-ছাড়ো খেলা খেলতে খেলতে যশস্বী নিজেকে অপ্রতিরোধ্য করে তুললেন পারথে। ওপেনার যশস্বী যেন স্বপ্নের ফেরিওলায়া। নতুন প্রজন্মের নতুন প্রতীক।
ভোট দেওয়ার বয়স হয়েছিল সবে। একমাথা ঝাঁকড়া চুল। ফিনফিনে গলা। বোধহয় বছরের শেষ ক’টা দিন তাঁর কাছে চরম পরীক্ষা। স্বপ্ন মুঠোয় নেওয়ার পরীক্ষা। ৯১-এর অস্ট্রেলিয়া জানত, এক বিস্ময় ক্রিকেটারের জন্ম হয়েছে ভারতে। তিনি নামবেন ব্রিসবেনে। মাইক হুইটনি, ক্রেগ ম্যাকডারমটও জানতেন। তাঁরাই দুই ইনিংসে ভাগাভাগি করে পকেটে পুরেছিলেন ১৮ বছরের ছেলেকে। মেলবোর্নেও একই গল্প। শুধু এমসিজি দ্বিতীয় ইনিংসে দেখেছিল ছোট চেহারার এক ছেলের হার না মানা লড়াই। প্রথম ইনিংসে ১৫ করেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ১০৭ বলে ৪০।
এমন ইনিংস তো অনেকেই খেলেন। হারিয়ে যেতে সময়ও লাগে না। টিকে থাকাটাই তো আসল। লড়াইয়ে থাকা, লড়াইয়ে ফেরা, সবচেয়ে বড় কথা হল, লড়াইয়ের স্বীকৃতি মেলা। সচিন তেন্ডুলকর জানতেন, ফিরতে হলে অজুহাত দেওয়া যায় না। আতঙ্কের ঘন সবুজ ঘাসে ফাস্ট বোলারদের সামলালে তবেই না বাচ্চা ছেলেকে বড়দের দলে রাখা হবে! বছর পাল্টাতে যত সময় লেগেছিল, তার অনেক দ্রুত নিজের ভুল পাল্টে ফেলেছিলেন সচিন। মেলবোর্ন থেকে সিডনিতে পা দিয়েই ১৪৮ রানের ইনিংস খেলেছিলেন মুম্বইয়ের ছেলে। এবার আর আউট করতে পারলেন না কেউ। প্রথম অস্ট্রেলিয়া সফর। সিডনিতে প্রথম সেঞ্চুরি। গ্রেট তো এভাবেই তৈরি হয়।
ক্রিকেটে গ্রেট হতে হলে ত্রিভুবন হাতের মুঠোয় চাই। স্যাঁতস্যাঁতে ঠান্ডার ইংল্যান্ড, লাল ছোবলের ক্যারিবিয়ান। আর, তীব্র গতির অস্ট্রেলিয়া। ওয়েস্ট ইন্ডিজে আগের ঐতিহ্য নেই। ক্লাইভ লয়েড, সোবার্সদের দেশের জায়গা নিয়ে নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। সাফল্য পেতে হলে, চেনাতে হলে, নাম কিনতে হলে ত্রিভুবনে সেঞ্চুরি চাই। ম্যাচ বাঁচানো ইনিংস দরকার। শাসন করতে হয় বিপক্ষের বোলিং। সচিনের এই কাজটা কিছুটা করে দেখাতে পেরেছেন বিরাট কোহলি। বাচ্চা ছেলেটার হাতে কি তাঁদের ব্যাটন মানাবে?
এই খবরটিও পড়ুন
৩২ বছর আগের সেই ১৮ বছরের তরুণের সঙ্গে কি তুলনা হবে? ছোট্ট এক সাক্ষাৎকারে বলছিলেন, ‘আমার আইডল সচিন স্যার।’ এই অস্ট্রেলিয়াতেই আর ক’দিন পর জন্মদিন পালন হবে। কত হবে? মাত্র ২৩। প্রথম ইনিংসটা ক্ষণস্থায়ী। মাত্র ৮ বলে। ঝুলিতে স্রেফ শূন্যতা। দ্বিতীয় ইনিংসে? নাথন লিয়ঁকে লং অনের উপর দিয়ে গ্যালারিতে ফেলা। মিচেল স্টার্ককে সুইপ করে থার্ডম্যানের উপর দিয়ে ছয়। প্যাট কামিন্সকে জমাটি কভার ড্রাইভ। জস হ্যাজলউডের বাউন্সার হেলায় স্লিপের মাথার উপর দিয়ে ওড়ানো। রক্ষণ আর আক্রমণের আশ্চর্য সমঝোতা। অপেক্ষা আর আগ্রাসনের বন্ধুত্ব। সচিনের সামনে যেমন বড় হয়েছেন বিরাট, তেমনই কি বিরাটের সামনে বড় হচ্ছেন যশস্বী জয়সওয়াল?
আইপিএল তারকার জন্ম দেয়। ধুমধাড়াক্কা ক্রিকেটের যুগে চার-ছয়প্রীতি থাকবেই। কিন্তু এই প্রজন্মের হাতে গোনা কেউ কেউ কুড়ি-বিশের সঙ্গে টেস্টের প্রেমেও পড়ে। যশস্বী নামের এই ছেলে অন্য গ্রহের যেন। ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড, বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ডকে সামলে তারকা হওয়া যায়। গ্রেট হওয়া যায় না। তার জন্য অস্ট্রেলিয়া দরকার। মাঠে নামার আগেই এই যশস্বীকেই যে দেশের মিডিয়া মেনে নিয়েছিল তারকা হিসেবে। চাপ তৈরির খেলা? নাকি, প্রতিভার প্রতি কুর্নিশ? যাই হোক না কেন, যশস্বীকে আপাতত শিরোনামে উঠে পড়বেন।
বিদেশের মাঠে লাল বলের বিরুদ্ধে ওপেনিং কঠিনতম ঠাঁই। সুনীল গাভাসকর ছাড়া ধারাবাহিক ভাবে কে আর করতে পেরেছেন? দ্বিতীয় ইনিংসে ছাড়ো-ধরো, ধরো-ছাড়ো খেলা খেলতে খেলতে যশস্বী নিজেকে অপ্রতিরোধ্য করে তুললেন পারথে। ওপেনার যশস্বী যেন স্বপ্নের ফেরিওলায়া। নতুন প্রজন্মের নতুন প্রতীক।