ICC U19 World Cup 2022: বাড়ি ফিরে মায়ের হাতে বানানো মটর পনীর খেতে চান ঋত্বিকভক্ত রবি

মঙ্গলবার সকালে যখন কথা হল রবির সঙ্গে, তখনও তাঁর মুখে বিরাটের গল্প। টিভি নাইন বাংলাকে এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে বললেন, 'বিরাটভাই আমার প্রশ্ন শুনে হেসে ফেলেছিল।' একটু থেমে ফোনের ওপার থেকে বলে দিলেন, 'আমার শুধু একটা জিনিস আছে, স্বপ্ন দেখা আর সেই স্বপ্ন ছোঁয়ার জন্য মরিয়া ট্রেনিং করা। নিজেকে দারুণ জায়গায় দেখতে চাই।'

ICC U19 World Cup 2022: বাড়ি ফিরে মায়ের হাতে বানানো মটর পনীর খেতে চান ঋত্বিকভক্ত রবি
রবি কুমার। ছবি: টুইটার
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 08, 2022 | 5:35 PM

কৌস্তভ গঙ্গোপাধ্যায়

‘কোন ডেলিভারিতে তোমার অস্বস্তি হয়?’

প্রশ্ন যাঁকে, তিনি হেসে ফেললেন। একটা টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার আগেই কেউ কি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা শুরু করে দেয়? এই প্রজন্ম যে আলাদা, বিরাট কোহলিও বুঝতে অসুবিধা হয়নি। মজার ছলে বিরাট উত্তর দেয়, ‘এখন থেকেই কি আমাকে আউট করার পরিকল্পনা করছ নাকি?’

বিরাটের (Virat Kohli) কথা শুনে হেসে ওঠেন বাংলার পেসার। তখনও বিশ্বকাপ ফাইনালে নামেনি ভারত (India U19 Cricket Team)। তখনও রবি কুমার (Ravi Kumar) নামক বাঁ হাতি পেসার ঝলসে ওঠেননি। ভারতের ছোটদের সঙ্গে বিরাট কনফারেন্স কলে বসেছিলেন, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ফাইনালের আগে টিমকে তাতানোর জন্য। বিরাটের পেপটক যে রবিদের তাতিয়ে দিয়েছিল, কোনও সন্দেহ নেই। রবি বোধহয় বাড়তি প্রেরণা জোগার করে নিয়েছিলেন ভিকের কাছ থেকে। পরদিন বিস্ফোরক বোলিং করে ইংল্যান্ড তো বটেই, বিশেষজ্ঞদের চমকে দিয়েছিলেন।

মঙ্গলবার সকালে যখন কথা হল রবির সঙ্গে, তখনও তাঁর মুখে বিরাটের গল্প। টিভি নাইন বাংলাকে এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে বললেন, ‘বিরাটভাই আমার প্রশ্ন শুনে হেসে ফেলেছিল।’ একটু থেমে ফোনের ওপার থেকে বলে দিলেন, ‘আমার শুধু একটা জিনিস আছে, স্বপ্ন দেখা আর সেই স্বপ্ন ছোঁয়ার জন্য মরিয়া ট্রেনিং করা। নিজেকে দারুণ জায়গায় দেখতে চাই।’

হঠাৎ উঠে আসা নয়, যুব টিমের চৌহদ্দিতে পৌঁছতে প্রচুর খেটেছেন রবি। ছোটবেলার কোচ অরবিন্দ ভরদ্বাজই তাঁকে কলকাতায় পাঠিয়েছিলেন। হাওড়া ইউনিয়ন হয়ে এখন বালিগঞ্জ ইউনাইটেডে। টিভি নাইন বাংলাকে বলেন, ‘আলিগড়েই টেনিস বলে ক্রিকেট খেলতাম। একটা ম্যাচে আমাকে দেখেই অরবিন্দ স্যারের পছন্দ হয়েছিল। উনিই হাতে ডিউসে বল তুলে দেন। ওঁরই জন্য কলকাতায় যাওয়া। হাওড়া ইউনিয়নে দুটো বছর খেলেছি। বালিগঞ্জ ইউনাইটেডের ট্রায়ালে আমাকে অমিতাভ স্যার পছন্দ করে।’

সিএবির প্রথম ডিভিশন থেকে অনেক দূরে তখন। কয়েক জনের সঙ্গে দমদমের মেসে থাকতেন। সেখান থেকেই বাংলার অনূর্ধ্ব ১৯ টিমে ডাক পাওয়া। নিজের লড়াইয়ের দিনগুলো এখনও ভোলেননি রবি। ‘ইডেনে জাতীয় দলের ত্রিদেশীয় সিরিজের শুরুতে ডাক পাইনি। আমি তখন বাংলার হয়ে কোচবিহার ট্রফি খেলতে গিয়েছিলাম। ওখান থেকেই আচমকা ডাক পাই। ত্রিদেশীয় সিরিজের টিমেও এরপর জায়গা মেলে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটা ম্য়াচে ভালো বোলিং করেছিলাম। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।’

রবি সামনে তাকাচ্ছেন। মিচেল স্টার্কের আগ্রাসন তাঁর প্রিয়। ইরফান পাঠান, জাহির খান, মহম্মদ আমিরদের ভিডিও দেখে ইনসুইং শিখেছেন। বলের গতি আরও বাড়াতে চান রবি। বাংলার বাঁ হাতি পেসারের লড়াইটা কেমন ছিল? আলিগড় থেকে ফোনে রবির কোচ অরবিন্দ ভরদ্বাজ বলে দিলেন, ‘একটা উইকেট রেখে বোলিংয়ের পরামর্শ দিয়েছিলাম। আলিগড়ের সাই বিহার কলোনির জগদীশ দত্ত শর্মা অ্যাকাডেমিতে রোজ ৫০০ ডেলিভারি করত রবি। নিখুঁত হতে পেরেছে যে কারণে।’

৩ দিনের মধ্যে জীবনে আমূল পরিবর্তন এসে গিয়েছে। মুহূর্তে বেড়ে গিয়েছে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে ফলোয়ারের সংখ্যা। বিশ্বকাপ জয়ের রেশ এখনও কাটেনি। বাংলার পেসার রবি কুমারকে ঘিরে আগ্রহ তৈরি হয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটমহলেও। সিনিয়র টিমের নির্বাচকদের র‍্যাডারেও পড়েছেন বাংলার বাঁ-হাতি পেসার। টি নটরাজন, চেতন সাকারিয়া, আর্শদীপ সিং- এই মুহূর্তে এই তিন বাঁ-হাতি পেসারই নির্বাচকদের প্রথম সারিতে রয়েছেন। এবার সেই তালিকায় ঢুকে পড়েছেন বাংলার রবিও। বিশ্বকাপ জয়ের ঘোর এখনও কাটেনি। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ১০ উইকেট নিয়েছেন। তার মধ্যে মেগা ফাইনালেই ৪টে উইকেট। যদিও কাপজয়ের পর ঠিক ভাবে সেলিব্রেশনই করতে পারেননি রবি, যশ, রশিদরা। দেশে ফেরার বিমান ধরার তাড়ায় কাপ জেতার পর আর বেশিক্ষণ সেখানে থাকতে পারেননি রবিরা।

অনেকদিন বাড়ি যেতে পারেননি। আমেদাবাদ থেকে ২ দিনের জন্য উত্তরপ্রদেশে নিজের বাড়ি ফিরতে চান রবি কুমার। মায়ের হাতে তৈরি মটর পনীর খেতে চান বাঁ-হাতি পেসার। ছোট ভাই আর দিদির সঙ্গে কিছুটা সময় কাটিয়ে কলকাতায় ফিরতে চান। আলিগড় তাঁর ঠিকানা হলেও কলকাতায় জন্ম হয়েছিল রবির। ক্রিকেটের পাশাপাশি নাচও ভালো লাগে ১৯ বছরের ছেলের। ব্যাট-বলের বাইরে সময় পেলেই মিউজিক বাজিয়ে ঘরে নাচেন। আর এই ডান্সের জন্য প্রিয় ঋত্বিক রোশন। ক্লাস এইটের পর আর পড়াশোনা করা হয়নি। খেলাধূলাতে ফোকাস করতেই আর পড়াশোনায় মন দেওয়া সম্ভব হয়নি। কলকাতারই এই ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা করতেন রবি। ইচ্ছে আছে মাধ্যমিক পাস করার। তবে আপাতত ক্রিকেটই তাঁর ধ্যান জ্ঞান। কোহলি-রোহিতদের সঙ্গে সিনিয়র দলের জার্সিতেও কিরণ হয়ে উঠতে চান রবি।

আরও পড়ুন: Pakistan vs Australia: অস্ট্রেলিয়ার ২৪ বছর পর পাক সফর বড় সাফল্য: ওয়াসিম আক্রম