CWC Retro Story: ‘৯৯-এ ছয়-নয়ের হতাশা, সেমিফাইনালের বাধা আর পেরনো হয়নি…
Greatest World Cup matches: রান তাড়ায় নামে আত্মবিশ্বাসী দক্ষিণ আফ্রিকা। গ্যারি কার্স্টেন-হার্শেল গিবস টেস্ট ম্যাচ ভঙ্গিতে শুরু করেন। পরিস্থিতি অনুযায়ী সেটাই বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত। এরপরই স্টিভ ওয়ার মাস্টারস্ট্রোক। আক্রমণে আনেন লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্নকে। পরপর দু-ওভারে দুই ওপেনারকে ফেরান ওয়ার্ন। একই ওভারে হ্যান্সি ক্রোনিয়েরও উইকেট নেন ওয়ার্নই। জ্যাক কালিস এবং জন্টি রোডস ইনিংস মেরামতিরা কাজে লেগে পড়েন। কিন্তু ওয়ার্ন!
কলকাতা: কাল আলোচনা হচ্ছিল প্রথম বিশ্বকাপ ফাইনাল নিয়ে। আগামীতে আরও অনেক ম্যাচ নিয়েই কথা হবে। আজ বরং দক্ষিণ আফ্রিকা টিমের একটা ম্যাচ চোখের সামনে ফুটিয়ে তোলা যাক। অনেকের স্মৃতিতে কিছুটা থাকতে পারে। তাহলে ভাবুন তো, দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটারদের কী পরিস্থিতি হয়েছিল? কিছুক্ষণের জন্য বর্তমানে ফেরা যাক। সদ্য ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পাঁচ ম্যাচের ওডিআই সিরিজ জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তাও আবার সিরিজে ০-২ পিছিয়ে থেকে। নিঃসন্দেহে প্রশংসীয় পারফরম্যান্স। বিশ্বকাপের আগে প্রোটিয়া ক্রিকেটারদের প্রবল আত্মবিশ্বাস জোগাবে। যদি সেমিফাইনালেও পৌঁছায় তারা, তারপরই আসল চ্যালেঞ্জ। কেন? সেটাই মনে করিয়ে দেব। যেটা আগের দিনও লিখেছিলাম, এ বারের বিশ্বকাপের আগে সেরা কয়েকটা ম্যাচ একটু ঝালিয়ে নেওয়া! দ্বিতীয় কিস্তিতে আজ দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম অস্ট্রেলিয়া। বিস্তারিত রইল TV9Bangla Sports-এর এই প্রতিবেদনে।
ওডিআই বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার হাতেখড়ি ১৯৯২ সালে। প্রথম বারই সেমিফাইনাল অবধি পৌঁছেছিল। কিন্তু ১৯৯৯-এর সেমিফাইনাল যে কোনও চিত্রনাট্যকেও হার মানাবে। কেন! চলুন মনে করিয়ে দিই। দক্ষিণ আফ্রিকার পেস অ্যাটাক তখন ভয়ঙ্কর। ইংল্যান্ডের এজবাস্টনে খেলা। শন পোলক, অ্যালান ডোনাল্ড, জ্যাক কালিস, ল্যান্স ক্লুজনার। ইংল্যান্ডের পরিবেশে যে কোনও প্রতিপক্ষর ত্রাস। টিমে জন্টি রোডসের মতো ফিল্ডার। ব্যাটার রান করবেন, বোলার উইকেট নেবেন, একজন ফিল্ডিংয়েও দলের জয়ে বড় অবদান রাখতে পারেন, জন্টি রোডসই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন।
ফেরা যাক ৯৯’র সেমিফাইনালে। টস জিতে ফিল্ডিং নিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেননি প্রোটিয়া অধিনায় হ্যান্সি ক্রোনিয়ে। মাত্র ৬৮ রানেই অস্ট্রেলিয়ার চার উইকেট নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। শন পোলকের ৫ এবং অ্যালান ডোনাল্ডের ৪ উইকেট। ৪৯.২ ওভারে মাত্র ২১৩ রানেই অলআউট অস্ট্রেলিয়া। মাইকেল বেভান ৬৫ রান এবং অধিনায়ক স্টিভ ওয়া ৫৬ রান না করলে! অস্ট্রেলিয়ার পরিস্থিতি সহজেই বোঝা যায়।
রান তাড়ায় নামে আত্মবিশ্বাসী দক্ষিণ আফ্রিকা। গ্যারি কার্স্টেন-হার্শেল গিবস টেস্ট ম্যাচ ভঙ্গিতে শুরু করেন। পরিস্থিতি অনুযায়ী সেটাই বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত। এরপরই স্টিভ ওয়ার মাস্টারস্ট্রোক। আক্রমণে আনেন লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্নকে। পরপর দু-ওভারে দুই ওপেনারকে ফেরান ওয়ার্ন। একই ওভারে হ্যান্সি ক্রোনিয়েরও উইকেট নেন ওয়ার্নই। পথ হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। জ্যাক কালিস এবং জন্টি রোডস ইনিংস মেরামতিরা কাজে লেগে পড়েন। কিন্তু ওয়ার্ন! জ্যাক কালিসের মূল্যবান উইকেট নিয়ে ফের ধাক্কা প্রোটিয়া শিবিরে।
চূড়ান্ত নাটক। শেষ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার লক্ষ্য দাঁড়ায় ৯ রান। ক্রিজে ল্যান্স ক্লুজনার-অ্যালান ডোনাল্ডের শেষ উইকেট জুটি। স্ট্রাইকে ক্লুজনার। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ভাবনা তখনও আসেনি। ক্লুজনার ব্যাট করছিলেন ১৯০ স্ট্রাইকরেটে! ফলে ৬ বলে ৯ রান দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে বাস্তব ছিল। বোলিংয়ে ড্যামিয়েন ফ্লেমিং। অনবদ্য একটা কভার ড্রাইভে বাউন্ডারিতে ওভার শুরু। ৫ বলে চাই ৫ রান। পরের ডেলিভারি ওয়াইড লং অফে বাউন্ডারি! স্কোর সমান। বাকি চারটি ডেলিভারি, ফাইনালের মাঝে ১ রান ১ উইকেট। স্টিভ ওয়া ফিল্ডারদের কাছে আনেন। ক্লুজনারকে ঘিরে সব ফিল্ডার। তৃতীয় বলেও রানের দেখা নেই। চতুর্থ বলে মরিয়া চেষ্টা। রানের মরিয়া চেষ্টায় ক্লুজনার। মিড অফে বল ঠেলেই কুইক সিঙ্গলের কল করেন। অ্যালান ডোনাল্ড ডাক শোনেননি। রানআউট ডোনাল্ড। ম্যাচ টাই।
সুপার সিক্সে নেট রানরেটে দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে এগিয়ে ছিল অস্ট্রেলিয়া। সেই নিয়মেই ফাইনালে জায়গা করে নেয় তারা। ৬-৯-এর অঙ্কে সেমিফাইনালেই বিদায় দক্ষিণ আফ্রিকার। ২০০৭, ২০১৫ বিশ্বকাপেও শেষ চারে পৌঁছেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু সেমিফাইনালের বাধা আর পেরোতে পারেনি।